যুক্তরাজ্যে তিনটির বেশি টমেটো ক্রয়ের সীমা বেঁধে দেওয়ার তথ্য সঠিক নয়

টমেটো
টমেটো  © ফাইল ফটো

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বরাতে দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমগুলোতে ‘যুক্তরাজ্যের কয়েকটি সুপারমার্কেটে তিনটির বেশি টমেটো কিনতে পারছেন না ক্রেতারা’ এমন খবর প্রচার করা হয়েছিল। যে খবরের আসলে কোন সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ানে’র বরাতে যে প্রতিবেদনের কথা বলা হচ্ছে, তারাই বলছে, এরকম কোনো প্রতিবেদন তার ছাঁপেনি। তাদের যে প্রতিবেদকের নামে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে, তিনি ২০১৬ সালের পর আর কোনো প্রতিবেদনই ‘দ্য গার্ডিয়ানে’ প্রকাশের জন্য দেননি বলেও জানানো হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে।

এ নিয়ে আরও প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। এ নিয়ে প্রতিবেদন রয়েছে দেশের প্রায় গনমাধ্যমেই।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বলছেন, এটি সত্য নয়। এ তথ্যের সত্যতা নিয়ে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ইয়াহু নিউজ। বার্তা সংস্থা এএফপি’র বরাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিবেদনটি করেছেন রব লিভার। তিনি তাতে লিখেছেন, দ্য গার্ডিয়ান যুক্তরাজ্যের ‘টমেটোর দুর্ভিক্ষ’ নিয়ে শিরোনাম প্রকাশ করেনি।

তার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টুইটার ব্যবহারকারীরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার কারণে টমেটোর ঘাটতি সম্পর্কে দ্য গার্ডিয়ানের একটি নিবন্ধের একটি অনুমিত বা কল্পিত স্ক্রিনশট দিয়ে এটি করছে৷ এটা মিথ্যা; এই ধরনের কোন নিবন্ধ অনলাইনে প্রদর্শিত হয়নি, সংবাদপত্র এবং প্রতিবেদক উভয়ই নিশ্চিত করেছেন যে এটি জাল বা অসত্য।

মূলত ‘ব্রিটেন ২০২৩ সালের গ্রেট টমেটো দুর্ভিক্ষের দিকে ফিরে তাকাবে এবং কামনা করবে যে তারা কম বর্ণবাদী’ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি টুইটে শেয়ার করা একটি কথিত নিবন্ধের একটি ছবি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়।

টুইটার এবং ফেসবুক ব্যবহারকারীরা সে একই ছবি শেয়ার করেছেন, যার সত্যতা নেই। সেসব পোস্টগুলো ইউকেতে টমেটো এবং অন্যান্য তাজা পণ্যের ঘাটতি ব্রেক্সিটের পরিণতি - এবং সেই কুসংস্কার ইইউ থেকে প্রস্থান করার জন্য ২০১৬ সালের ভোটকে কলঙ্কিত করেছে বলে মনে হচ্ছে- এমন কথা প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণই কল্পিত।

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সে ছবিতে ‘দ্য গার্ডিয়ানে’র লোগো এবং ইয়াসমিন আলিভাই-ব্রাউনের বাইলাইন (প্রতিবেদকের নাম; যার নামে ছাপানো হয়েছে। তিনি ২০১৬ সালের ‘দ্য গার্ডিয়ানে’ কোনো প্রতিবেদন প্রচার করেননি।) রয়েছে, যিনি ইতোপূর্বে যুক্তরাজ্যের দৈনিকটির জন্য বেশ কয়েকটি নিবন্ধ লিখেছেন। কিন্তু অনলাইন আর্কাইভ বলছে, তিনি ২০১৬ সাল থেকে সংবাদপত্রে আর কোনো অবদান রাখেননি বা প্রতিবেদন ছাপেননি। 

এ নিয়ে ‘দ্য গার্ডিয়ানে’র পক্ষ থেকে একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে শেয়ার করা স্ক্রিনশটটি কখনই প্রকাশিত গার্ডিয়ানের শিরোনাম বা গল্প ছিল না’।

এএফপির প্রতিবেদনে এ নিয়ে ‘দ্য গার্ডিয়ানে’র পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বর্তমানে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমরা এ ধরনের প্রতিবেদন কখনও লিখিনি।

অবশ্য ‘দ্য গার্ডিয়ানে’ যুক্তরাজ্যে উৎপাদিত টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি ঘাটতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করেছে। ২৩ ফেব্রুয়ারীর ওই রিপোর্টে তারা বলেছে, সার এবং প্যাকেজিং-এর দাম বৃদ্ধির সাথে ক্রমবর্ধমান বিল টমেটোর অভাবের জন্য দায়ী। অর্থাৎ সংবাদ মাধ্যমটি অভাবের কথা বললেও সেজন্য ভোক্তাদের তিনটির বেশি কিনতে পারবেন না বলেননি।

আর, সেখানকার স্থানীয় বাজারে ভোক্তারা ইচ্ছেমতো কেনাকাটা করতে পারছেন, তাদের কোনো ধরনের বাধা দেওয়া হচ্ছে না এবং বাজারে কোনো সরবরাহ ঘাটতি নেই বলেও জানিয়েছেন সেখানকার প্রবাসী ও স্থানীয়রা।

যুক্তরাজ্যে থাকা বাংলাদেশিরা বলছেন, যুক্তরাজ্যের সুপারমার্কেটে গেলে আপনি প্রায় অর্ধ শতাধিক জাতের টমেটো পাবেন। এর মধ্যে বেবী টমেটো, প্লাম টমেটো, বেটার বয়, চেরি টমেটো, রোমা টমেটো, সালাদ টমেটো ইত্যাদি জাত ও মানের। তবে যুক্তরাজ্যের বাজারে চেরি টমেটো, ভাইন টমেটো আর সালাদ টমেটোই বেশী জনপ্রিয়। এই টমেটোগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুপার স্টোরগুলোতে প্যাকেট-জাত করে বাজারজাত করা হয়।

তারা জানান, স্টোর ও সাইজ অনুসারে প্রতি প্যাকেটে কোথাও ৮টা কোথাও ১২টা করে টমেটো প্যাকেট বা ইউনিট করা থাকে। ক্রেতাদের ‘প্যানিক বায়িং’ (বাজারে সংকট হবে এমন ভয়ে পড়ে কেনা) থেকে বিরত রাখতে ৩ ইউনিটের বেশী কিনতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তার মানে একজন ক্রেতা একসাথে একই ধরনের ৩ প্যাকেটের বেশী টমেটো কিনতে পারবেন না।

প্রতি প্যাকেটে যদি ৬ থেকে ৮টি টমেটো থাকে তাহলে একসাথে একজন ক্রেতা একই ধরনের ১৮-২৪টি টমেটো কিনতে পারবেন। তবে কোন ক্রেতা যদি ৩ প্যাকেট চেরি টমেটো, ৩ প্যাকেট ভাইন টমেটো, ৩ প্যাকেট বেটার বয় টমেটো একসাথে কিনতে চায়, সেক্ষেত্রে কোন বাঁধা নাই।

অবশ্য, সেখানে থাকা বাংলাদেশিরা স্বীকার করছেন, সেখানে টমেটো ও সালাদ আইটেমের সংকট রয়েছে, দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে খোলা বাজারে টমেটোর কোন সংকট নেই। পূর্ব লন্ডনের কোন খোলা বাজারে টমেটোর সংকট নেই। কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই তা কিনতে পারছেন ক্রেতারা। তবে টমেটো ও সালাদ আইটেমের সরবরাহ সংকট ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ-মূল্যস্ফীতি, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, ইউরোপের বৈরী আবহাওয়া ও ইউরোপের সাথে ব্রিটেনের বিচ্ছেদের টানাপোড়ন।

নজরুল ইসলাম যিনি ইংল্যান্ডের একজন সবজি আমদানীকারক। তিনি জানিয়েছেন, খোলা বাজারে টমেটোর কোন সংকট নেই।

অর্থাৎ প্রতিবেদন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা দাবি এবং স্থানীয়দের দেয়া তথ্য বিবেচনায় আলোচিত, ‘যুক্তরাজ্যের কয়েকটি সুপারমার্কেটে তিনটির বেশি টমেটো কিনতে পারছেন না ক্রেতারা’―এমন তথ্য সঠিক নয়। এখানে ‘তিন ইউনিট’ টমেটোর কথাটি ‘তিনটি টমেটো’ বলে প্রচার করা হয়েছে। যার ফলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তাই, সরাসরি উক্ত দাবির ভিত্তি না থাকায় দাবিটি সঠিক নয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence