৩ থেকে ৫ বছর পর বদলির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে যে সমস্যা হবে

  © সংগৃহীত

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রায় ৮০ শতাংশ নারী। এই নারী শিক্ষকদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ শহরের বাসিন্দা। নিয়োগের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শহরের মেয়েদের চাকরি হয়, কারণ গ্রামে উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে এখনো শহরের তুলনায় অনেক কম। আর গ্রামের কোন মেয়ের চাকরি হলেও বিবাহজনিত বা সন্তানের উচ্চশিক্ষার কথা চিন্তা করে তারা আবাসস্থল হিসেবে শহরকেই বেছে নেন।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর বেশির ভাগ নারী শিক্ষক শহরে তার থাকার জায়গা এমন স্থানে নির্ধারণ করেন যেন কর্মস্থল কাছে না হোক দূরে হলেও যাতায়াত সুবিধা ভালো থাকে। ৩ বছর বা ৫ বছর পরপর বদলি করা হলে এই নারী শিক্ষকরাই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন।

আরো কিছু সমস্যা আছে। শিক্ষকতা অন্যসব চাকরির মতো নয়। এখানে একজন শিক্ষক যোগদান করে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো থেকে শুরু করে সবকিছুই তার নিজের মত করে সাজিয়ে তুলেন। একটা বিদ্যালয়কে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলে শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে একজন শিক্ষকের কয়েক বছর লেগে যায়। সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরির পর তাকে যদি ঐ বিদ্যালয় ছেড়ে চলে যেতে হয় তাহলে তার কর্মস্পৃহা কমে যাওয়ার আশংকা থাকে।

অনেক শিক্ষক নিজের বেতনের টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের অনেক অবকাঠামো তৈরি করেন শুধুমাত্র বিদ্যালয়কে ভালোবাসেন বলে। গাইবান্ধার শিবরাম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথাই ধরুন। বিদ্যালয়েকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার পর প্রধান শিক্ষকের চাকুরীর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। চলমান কার্যক্রমে গতি হারাতে পারে ভেবে সরকার ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষককে আরো ৩ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করে।

আমাদের অনেক প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক আছেন যারা দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়েক অতি আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলেন। ঐ প্রধান শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষককে হঠাৎ বদলি করা হলে ঐ বিদ্যালয়ের চলমান কার্যক্রম যেমন ব্যাহত হবে তেমনি নতুন বিদ্যালয়ে গিয়ে পূর্বের স্পৃহা নিয়ে তিনি কাজ করবেন বলে মনে হয় না। এর কারণ ব্যক্তিগত বিনিয়োগ বারবার করা সম্ভব হয় না। আর ঐ স্কুলে অন্য শিক্ষক আসার পর পূর্বের কার্যক্রম ধরে রাখতে নাও পারেন।

একই এলাকায় দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করার ফলে একজন শিক্ষক ঐ ক্যাচমেন্ট এলাকার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের নাড়ীনক্ষত্র জেনে যান। পূর্ব পরিচিতির কারণে শিশুর মধ্যে বিদ্যালয়ে আসা এবং পাঠগ্রহণে ভীতি অনেক কম থাকে। শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে যা সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

প্রতি ৩ বছর বা ৫ বছর পর বদলি করা হলে শিক্ষকদের স্থায়ী আবাসনে সমস্যা হতে পারে কারণ কাছাকাছি বিদ্যালয় পাওয়া সবসময় সম্ভব নয়। বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার সমস্যার পাশাপাশি বার বার বদলীর সুযোগে অনেক শিক্ষক হয়রানির শিকার হতে পারেন। পছন্দমতো স্কুলে যেতে অনেকে আর্থিক লেনদেন বা দুর্নীতির আশ্রয় নিতে পারেন।

তাই, ৩ বছর বা ৫ বছর পরপর বদলির বিষয়টি চূড়ান্ত করার আগে আরও চিন্তা করা উচিৎ বলে আমার মনে হয়। এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষকদের মতামত নিতে প্রতিমন্ত্রী মহোদয়, সচিব মহোদয় ও মহাপরিচালক মহোদয়ের প্রতি সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি


সর্বশেষ সংবাদ