করোনা চিকিৎসায় অনুমোদনহীন ওষুধের প্রচার বিপত্তি সৃষ্টি করতে পারে

  © টিডিসি ফটো

যেকোন রোগের চিকিৎসায় ওষুধের ব্যবহার মানব সভ্যতার শুরু থেকেই হয়ে আসছে। আদিকালে ওষূধি গাছ-গাছালির মাধ্যমে বিভিন্ন কবিরাজি ওষুধ ব্যবহার হতো, আধূনিক কালে ওষুধ শাস্ত্রের উন্নতির ফলে উৎপাদিত ওষুধের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবায় প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে।

বর্তমানকালে অধিকাংশ মানুষ কোন না কোনাভাবে ওষুধের উপর নির্ভরশীল, এমনকি বহু মানুষের জীবন রক্ষার জন্য একমাত্র ভরসা এই ওষুধ। এমনকি করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট এই বৈশ্বিক মহামারী পরিস্থিতিতেও একটি কার্যকর ও নিরাপদ ওষুধ বা টিকা অভাব বোধ করছে পৃথিবীর সাতশকোটি মানুষ।

কিন্তু মনে রাখতে হবে ওষুধের ব্যবহার অন্যান্য বস্তুর মত স্বাভাবিক নয় কারণ ব্যবহারের সামান্য ভূলে হাজার হাজার মানুষের শরীরে জটিল শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হবে এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তাই এই স্পর্শকাতর বস্তুর যথাযথ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা নিশ্চিত ভাবেই পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল ও কঠিন প্রক্রিয়া।

কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় কোন প্রমাণিত ও কার্যকর ঔষধ বা টিকা না থাকায় বিশ্বে কিছু সম্ভাব্য ওষুধ বা টিকার পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়েছে, তা কেবল ওষুধ প্রশাসনের প্রটোকল অনুসরণ করে শুধুমাত্র মুমূর্ষু রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্টের অনুমোদন সাপেক্ষে ব্যবহৃত হবে অন্য কোন ভাবে নয়।

বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ চিকিৎসায় কিছু ওষুধের সাময়িক ব্যবহারের অনুমোদন হয়েছে যার ব্যবহার ওষুধ প্রশাসনের কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত শুধুমাত্র মুমূর্ষু রোগীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিন্তু এটি নিয়ে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার হচ্ছে, এমনকি কেউ কেউ শেয়ার করছেন ব্যবস্থাপত্র। ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে ঔষধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যসুরক্ষায় বিপত্তি সৃষ্টি হতে পারে, এটা নিয়ন্ত্রণ বর্তমান পরিস্থিতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ওষুধ কি এবং এটির ব্যবহার প্রক্রিয়া কি?

ওষুধের ক্ষেত্রে একটি কথা প্রচলিত আছে- ‘প্রতিটি ওষুধই বিষ, কিন্তু এটি ওষুধ হিসাবে তখনই ব্যবহৃত হয় যখন এটি নিদিষ্ট পরিমানে বা মাত্রায় শরীরে দেওয়া হয়’। এটির যথার্থতা প্রমাণিত হয় বিশ্ব বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ ফিজিওলজিস্ট ক্লাউড বার্নার্ড এর উক্তিতে- "Everything is poisonous, nothing is poisonous, it is all matter of dose."

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোন বস্তু বা উপাদান যখন মানুষ বা অন্যান্য প্রাণিতে রোগ নির্ণয়, নিরাময়, প্রশমন, চিকিৎসা বা রোগ প্রতিরোধে উদ্দেশ্য ব্যবহৃত হয় তখন তাকে ওষুধ বলে। সাধারণত ওষুধ হিসেবে কোন উপাদান বা বস্তু শরীরে একটি নিদিষ্ট মাত্রায়, নিদিষ্ট সময়ের জন্য দেওয়া হলে রোগ নিরাময় হয় এবং উপাদানটির কাজ শেষ করার পর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে বের হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে এই উপাদানটি শরীরে জমা হয়ে বিভিন্ন অঙ্গকে অকেজো করে ফেলতে পারে, এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে। ফলে ওষুধ হিসাবে ব্যবহারের আগে ঐ উপাদানের প্রভাব মানব দেহে নিদিষ্ট রোগের জন্য কার্যকর ও নিরাপদ কিনা তা প্রমাণ করার জন্য জটিল বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রয়োজন হয়। সাধারণভাবে প্রাপ্যতার উপর ভিত্তি করে ওষুধ দুই ধরণের হয়।

১) ওটিসি (OTC, over the counter) ড্রাগ বা ওষুধ, যেগুলো তুলনামূলকভাবে নিরাপদ, সাধারন রোগ যেমন সর্দি, কাশিতে, অ্যাসিডিটিতে ব্যবহৃত হয় এবং ক্রয় করার জন্য কোন চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের প্রয়োজন নেই।

২) প্রেসক্রিপশন ড্রাগ বা ওষুধ, যেগুলো তুলনামূলকভাবে কম নিরাপদ, জটিল রোগ যেমন উচ্চরক্তচাপ, ক্যান্সারে ব্যবহৃত হয় এবং ক্রয় করার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের প্রয়োজন।

আদর্শ চিকিৎসা ব্যবস্থায় একজন চিকিৎসক রোগ নির্ণয়ের পর ব্যবস্থাপত্র করে দিবে, সেটা ফার্মাসিস্ট রিভিউ করার পর ব্যবস্থাপত্রে কোন ত্রুটি থাকলে ডাক্তারের পরামর্শে পরিবর্তন করে রোগীকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে ঔষধের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করবে।

কিন্তু বাংলাদেশের অনেকেই শরীরের সামান্য সমস্যা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই বাজারের ফাস্টফুডের মত ব্যবহার করছে ব্যাথানাশক, অ্যান্টিবায়োটিকসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে ওষুধ আর খাদ্যদ্রব্য এক জিনিস নয়। খাদ্যদ্রব্য প্রয়োজনের চেয়ে বেশী খেলে তা হয়তো সাময়িক সমস্যা তৈরি করতে পারে কিন্তু ওষুধের মাত্রাঅতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার জটিল রোগ সৃষ্টিসহ মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।

ওষুধ ব্যবহারে এতো সতর্কতার প্রয়োজন কেন?

ওষুধ নিদিষ্ট পরিমান ব্যবহৃত হলেই কেবলমাত্র তার থেকে উপকার ক্রিয়া পাওয়ায় যায়, অন্যথায় এটি শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। পৃথিবীতে ওষুধ সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় কারণ সামান্য ভূলে মুহূর্তেই মানুষের জীবন হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। ওষুধের কার্যকর ও যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মানুষের জন্য এই উপাদান নিরাপদ নয়।

মাহবদেহে ওষুধের নিরাপদ নিশ্চিত করণের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উন্নত বিশ্ব সবচেয়ে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করে। এই নিরাপদ ও কার্যকর ঔষধ আবিষ্কারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট চিকিৎসক ও ওষুধ বিজ্ঞানীরা। এমনকি এটির নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত হয় এই ফার্মাসিস্ট ও ডাক্তারদের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থাপত্র ও যথার্থ উপদেশের মাধ্যমে।

যদি অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বা ভূল ব্যবস্থাপত্রের কারণে ওষুধের পরিমাণ বেশি হয় অথবা শরীরের কোন অঙ্গের কার্যক্ষমতার কোন সমস্যা থাকে তাহলে এই ওষুধ শরীরে জমা হয়ে দীর্ঘমেয়াদী বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে মানুষের মৃত্যু ঘটায়। এখন ভাবতে পারেন এটির বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আছে কি? আমাদের দেশে এটির বিষয়ে তেমন কোন খবর নাও জানতে পারেন। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আমরা যেখানে মানুষের মৌলিক চাহিদা চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছি। সেখানে ভূল ওষুধ বা ওষূধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিয়ে গবেষণা দুরূহ কিন্তু উন্নত বিশ্বে এটি নিয়ে গবেষণা হয় এবং তারা ফলাফল দেখলে সত্যিই ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে।

পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্মৃদ্ধ দেশ আমেরিকায় ২০১৯ সালের সিডিসির একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত পরিমান ওষুধের কারণে ২০১৮ সালে ৬৭,৩৬৭ এবং ২০১৭ সালে ৭০,২৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

কিভাবে ওষুধের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ হয়?

মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম চিকিৎসা যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই ওষুধ। পৃথিবীর ইতিহাস সবচেয়ে স্পর্শকাতর বস্তু হিসেবে বিবেচিত। তাই ওষুধের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত হয় প্রতিটি দেশের সরকারী সংস্থার মাধ্যমে যেমন আমেরিকাতে ইউএসএফডিএ (USFDA), যুক্তরাজ্যে এমএইচআরএ (MHRA) ইত্যাদি।

এই ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ তাদের দেশের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিদিষ্ট নিয়ম-নীতি বা গাইডলাইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে ওষুধের উৎপাদন, বিপণন, আমদানি-রপ্তানি সহ এটির যৌক্তিক ও নিরাপদ ব্যবহার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বিশ্বের সকল মানুষের স্বাস্থ্যসুরক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধিনে DGDA, (www.dgda.gov.bd) ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ হিসেবে ওষুধের সার্বিক দায়িত্ব পালন করে থাকে। করোনা চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট কোন ওষুধ না থাকায় বিভিন্ন দেশে সম্ভাব্য কিছু ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে, তার গাইডলাইনসহ প্রোটোকলও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এই কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। দেশের বিশেজ্ঞদের নিয়ে এই কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে কোভিড-১৯ চিকিৎসা নিশ্চিত করে দেশের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা বজায় রাখতে।

করোনা চিকিৎসায় অনুমোদনহীন বা জরুরি ক্ষেত্রে সাময়িক অনুমোদনপ্রাপ্ত ওষুধের প্রচার ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার কেন?

কোভিড-১৯ চিকিৎসায় কার্যকর ও নিরাপদ কোন অনুমোদিত ওষুধ বা টিকা এখন পর্যন্ত নেই। যদিও বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য ১০টি টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল, ১২১টি টিকার প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এবং ২০০টির বেশি ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে যদিও একটি কার্যকর টিকা বা ওষুধের জন্য আর কত অপেক্ষা তার সঠিক উত্তর কেউ দিতে পারবে না।

অন্যদিকে করোনার তান্ডবে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার অসহায়ত্ব প্রমাণ হচ্ছে প্রায় ৪ লাখ মানুষের মৃত্যুর মিছিলের মাধ্যমে। হাসপাতাল গুলোতে রোগীদের প্রচন্ড চাপ, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম, অবকাঠামোর এবং কার্যকর ঔষধের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছে না।

ফলে আতংকিত সাধারণ মানুষ কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহার করছে অনুমোদনহীন বা জরুরি ক্ষেত্রে সাময়িক অনুমোদনপ্রাপ্ত ওষুধ। আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম করোনা চিকিৎসায় সম্ভাব্য ওষুধের রকমারি প্রচারে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অনেকে গ্রহণ করছে প্রেসক্রিপশন ড্রাগ যা কোনভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা উচিত নয়। অতিসম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও উদ্বেগ জানিয়েছে এই করোনা চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অনুমোদনহীন ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে ব্যাপক হারে বেড়েছে। কারণ এমনিতেই আমাদের দেশে ব্যবস্থাপত্র ব্যতিত সব ধরণের ওষুধের প্রাপ্যতা অত্যন্ত সহজলভ্য। আমাদের দেশে অ্যান্টিবায়োটিক থেকে শুরু করে দূরোগ্য ক্যান্সারের ওষুধও, এমনকি মাদকদ্রব্য হিসেবে ব্যবহৃত ওষুধও ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অনায়সে পাওয়া যায় দেশের সর্বত্র ফার্মেসী গুলোতে।

অন্যদিকে করোনা চিকিৎসায় অননুমোদিত ওষুধের আকর্ষণীয় প্রচার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এবং সেবনবিধিসহ ব্যবস্থাপত্রের বিজ্ঞাপনে সয়লাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর কারণে অসচেতন জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশ কোভিড-১৯ নিয়ে আতংকিত হয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ওষুধ কিনতে। এমন কি তারা করোনা চিকিৎসায় সম্ভাব্য ওষুধের নাম শুণলেই যদি সেটা বাজারের পাওয়া যায় তাহলে পরিবারের জন্য কিনে মজুদ করছে।

ফলে এই ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বেড়েছে সাথে সাথে অনেক রোগী বাজারে স্বল্পতার কারণে তারা বঞ্চিত হতে পারে তাদের স্বাভাবিক চিকিৎসা থেকে, নয়তো ওষুধ অধিক দামে কিনতে হবে জীবন রক্ষার জন্য।

কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে করোনা চিকিৎসায় অনুমোদনহীন ওষুধের প্রচার ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার?

ওষুধের মত অত্যাবশকীয় অথচ স্পর্শকাতর বস্তুর ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত হয় প্রতিটি দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তারা ওষুধের উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণনের সব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে নিদিষ্ট গাইডলাইনের মাধ্যমে। উন্নত বিশ্বে এটির নিয়ন্ত্রণে তারা কঠোর নীতি অনুসরণ করে এমনকি কোন ওষুধের পরীক্ষা মূলক বা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ব্যবহারের কোন ওষুধের বিজ্ঞাপন সামাজিক যোগাযোগ বা সংবাদ মাধ্যমে প্রচারে পূর্ব অনুমোদন নিতে হয়, অন্যথায় শাস্তি যোগ্য অপরাধ।

বাংলাদেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২ এর ১৪ ধারায় উল্লেখিত আছে- "No person shall publish or take any part in the publication of any advertisement which relates to the use of any drug or contains any claim in respect of therapics or treatment without the prior approval of the licensing authority.

Explanation.- “Advertisement” includes any notice, circular or other document displayed on or in any public place or public transport or published in any newspaper or periodical and any announcement made orally or by any means of producing or transmitting light or sound and any trade circular, insert and level.

অর্থাৎ পূর্ব অনুমোদন ব্যতীত কোন ধরনের ওষুধের বিজ্ঞাপন বা ব্যবস্থাপত্র ইলেকট্রনিকস মিডিয়ায় বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা আইনত নিষিদ্ধ। এমনকি এটি আইনত শাস্তি যোগ্য অপরাধ যা উল্লেখিত আছে একই অধ্যাদেশের ২১ (সংশোধিত) ধারায়- Whoever contravenes the provision of section 14 shall be punishable with rigorous imprisonment for a term which may extend to three years, or with fine which may extend to two lakh Taka, or with both.

আইন অনুযায়ী ওষুধের অনুমোদন ব্যতীত কোন ভাবেই ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে যখন দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপদসংকুল ঠিক তখনই বাংলাদেশের কিছু ঔষধ কোম্পানি উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে মানুষকে প্রতারিত করছে। তারা কিছু ওষুধের পরীক্ষা মূলক ব্যবহারের সাময়িক অনুমোদনকে প্রচার করছে আকর্ষণীয়ভাবে, যা প্রচার করা প্রচলিত আইনে শাস্তিমূলক অপরাধ।

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও না জেনে না বুঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছে কোভিড-১৯ রোগের ব্যবস্থাপত্র, সেটিও শাস্তি যোগ্য অপরাধ। আইনের যথার্থ প্রয়োগের অভাবে আমাদের দেশে স্বাস্থ্য সুরক্ষা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই কর্তৃপক্ষের উচিত সকলকে এই ব্যপারে সর্তক করা এবং তারপরও যারা এই কাজটি করবে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা। আর তা না করলে দেশের মানুষ নানা ভাবে অনুমোদনহীন ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ব্যবহার করবে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে মানুষের শরীরে সৃষ্টি করবে জটিলতা, কার্যক্ষমতা হারাবে কিডনী, লিভারসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এমনকি অ্যান্টিবায়োটিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে দেহে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স তৈরী হবে।

যার প্রভাবে মানব দেহে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমনের বিরুদ্ধে কাজ করবে না কোন অ্যান্টিবায়োটিক, তখন তৈরী হবে আর এক স্বাস্থ্য বিপর্যয়। তাই ওষুধ প্রশাসনের উচিত দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উপযুক্ত পদাক্ষেপের মাধ্যমে ওষুধের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।

তথ্যসূত্র:
১) https://www.drugabuse.gov/related-topics/trends-statistics/overdose-death-rates
২) http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-623.html

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ফার্মেসী বিভাগ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ