‘আব্বার কণ্ঠে জারিগান আর মায়ের গলার গজল শুনতে ইচ্ছে করছে’

  © সংগৃহীত

মিস করছি সবাইকে। বাবা, মা, মাটি, গ্রামের মাটির গন্ধ। গাছপালা পুকুর, ছোট বেলার বন্ধুদের সাথে দূরত্বপনা। আমি ছিলাম খুব চঞ্চল স্বভাবের। বাবা-মাকে খুব কষ্ট দিয়েছি। এখন যখন একা থাকি খুব কষ্ট পাই। চোখ দিয়ে পানি পড়ে। আমার ছেলে রেদওয়ান পানি মুছে দেয় জিজ্ঞেস করে বাবা কাঁদছো কেন?

আমি বলি, বাবার কথা শুনো না তাই কাঁদছি। সত্যিই তো বাবার কথা শুনিনি। জানি না কেন খুব ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে অনেকের সাথেই দেখা হবে না। মনে হচ্ছে অনেককে হারিয়ে ফেলছি।

আমি ছোটবেলায় সব সময় খেলাধূলায় মেতে থাকতাম। হাডুডু, গোল্লাছুট, লুকোচুরি, কাঁনামাছি, বৌ তোলা, বাইশকপ, গাদন, ফুটবল, ক্রিকেট সবই খেলেছি। চাচাত ভাই বোনদের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তারা সবাই আজ কোথায় তাও জানি না।

নান্টু আর আমি তো সারাদিন মেতে থাকতাম। আজ ওর সাথেও কথা হয় না। বড় হয়ে জনি আর আমিই শুধু ছুটতাম। ওর বন্ধু ছিল। কিন্তু আমার বন্ধু হিসেবে শুধু সেই ছিল। আমি ছিলাম প্রথম জনি ছিল দ্বিতীয়। আজ ওদের সাথেও যোগাযোগ কম। হায়রে বাস্তবতা। শিক্ষকদের কথা খুব মনে পড়ে। একেক সময় একেকজন শিক্ষককে স্বপ্নে দেখি।

আমি, জনি আর লিটন হোস্টেলের একই রুমে থাকতাম-৪০১। কি দুরন্তপনা। সব আজ স্মৃতি শুধুই স্মৃতি।

আব্বার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু হঠাৎ কখন যে বড় হয়ে গেলাম। খুব মন চাই আব্বার কন্ঠে জারিগান শুনি। খুব মিষ্টি গলা আব্বার। মাও খুব ভালো গজল, হুলিয়া বলেন। প্রায় ভাবি এবার বাড়ি গেলে আব্বার কন্ঠে জারিগান আর মার গলার গজল শুনবো।

হয়তো অনেককেই হারাতে হবে আজ অথবা কাল। বাস্তবতা খুব কঠিন।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বন্ধুদের সাথে মেশা হয়েছে কম। শিক্ষকগণের কথাও খুব মনে পড়ছে। তৃতীয়বর্ষ  থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম জবে ফুল টাইম সময় দিয়েছি। অনেক পরিশ্রম করেছি। ক্লাসে ১০০ শতাংশ উপস্থিতি ঠিক রেখে জব করা খুব কঠিন ছিল। তারপরেও সকলের সাথে সুসম্পর্ক ই ছিল।

তারা সবাই এখন ব্যস্ত। যার সাথে সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক ছিল তার সাথেই এখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তাকে অন্যরা জিজ্ঞেস করলে বলতো সে নাকি রনিকে ভালোবাসে তার আর কোন ফ্রেন্ড নেই। স্বার্থের কাছে দুনিয়া অন্ধকার। কারো ব্যাপারে অভিযোগ নেই আমার। বাস্তবতা খুব কঠিন।

কর্মজীবনে চেষ্টা করেছি সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে। হালাল রুজির সন্ধানে অনেক পরিশ্রম করেছি এবং করছি। শিক্ষার্থী ভাই বোনদের জন্য জীবনের সেরাটি দেয়ার চেষ্টা করেছি এবং করে যাচ্ছি। বেঁচে থাকলে করে যাব ইনশাআল্লাহ। আপনারাই এখন আমার প্রকৃত আপনজন।

সকলের জন্য দোয়া করি যে যেখানে আছে ভালো থাকুন। আল্লাহ্ মাফ করুন আমাদের সকলকে। আল্লাহ্ সকলকে সুস্থ, স্বাভাবিক, সমৃদ্ধ জীবন দান করুন। আমার কারো প্রতি কোন অভিযোগ বা রাগ নেই। অনেকের সাথে অন্যায় করেছি, জেনে না জেনে ভুল করেছি। সকলের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।

দয়া করে মাফ করে দেবেন। আর দেখা নাও হতে পারে। সকলে বাসায় থেকে পরিবারের সকলকে সময় দিন। অন্যকে বাঁচান নিজে বাঁচুন। আল্লাহ্ হাফেজ!

লেখক:  প্রকাশক এবংসাবেক শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ