শিক্ষার্থীদের মনোবল বাড়াতে ড. আবুল বারকাতের আহ্বান

ড. আবুল বারকাত
ড. আবুল বারকাত  © ফাইল ফটো

করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ও মনোবল বাড়াতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাত। আজ মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে লেখা এক চিঠিতে তিনি আহ্বান জানান।

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এ বিপর্যস্ত সভ্যতার ক্রান্তিকালে একান্ত মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে চিঠিটি লিখেছেন উল্লেখ করে ড. বারকাত বলেন, শিক্ষার্থী-শিক্ষকের প্রাণ। সেই শিক্ষার্থী যখন মাতা-পিতা-ভাই-বোন-আত্মীয়স্বজন-পাড়া-প্রতিবেশিসহ জীবন-প্রাণ নিয়ে অনিশ্চয়তার মাঝে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হয় তখন শিক্ষক হিসেবে আমাদের মানবিক নৈতিক দায়িত্ব-দায়বদ্ধতা শতগুণ বেড়ে যায়-এটাই স্বাভাবিক।

তিনি আরও বলেন, যতদূর জানি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর জীববিজ্ঞানগত রোগতত্ত্ব কার্যকারণ-বিবর্তন নিয়ে সংশ্লিষ্ট গবেষকরা এখন-পর্যন্ত খুব বেশি জানেন না। একই সাথে আমরা জানি না য এ রোগের সম্ভাব্য সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব-অভিঘাত আসলে কেমন হতে পারে। জানি না কারণ, এ কোনো সাধারণ ‘ঝুঁকি’ নয়; এ হল অনিশ্চয়তা যা পরিমাপ অসম্ভব। শিক্ষক মাত্রই আশাবাদী মানুষ-মুক্তচিন্তার সাহসী মানুষ। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী একজন শিক্ষক হিসেবে বলছি, তোমরা কোনোভাবেই আতঙ্কিত হবে না এবং প্রিয়জনদের আতঙ্কিত হওয়া থেকে মুক্ত করবে; সাহস যোগাযোগ এবং অবশ্যই সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য-পরিচ্ছন্নতাবিধি মেনে চলবে। প্রয়োজনের স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে যাবে এবং অন্যকে পাঠাবে। অবশ্যই ভুলে যাবে না যে তোমরা এ দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের গর্বিত শিক্ষার্থী। এ গর্ববোধ তোমাদের সাহসী করবে এটাই তো স্বাভাবিক।

প্রখ্যাত এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, আমি সন্দেহাতীতভাবে আশাবাদী যে কোভিড-১৯ এর ঊর্ধ্বমুখী রেখা নিম্নগামী হবে; দ্রুত এ রোগের টিকাসহ রোগমুক্তির ওষুধ আবিস্কৃত হয়ে যাবে। মানুষে মানুষে সংহতি বাড়েেব, মানুষ আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। আর চতুর্থ বিপ্লবের এ যুগে আমরা পারস্পরিক যোগাযোগ অনেকগুণ বাড়াতে সক্ষম। প্রয়োজনে আমরা অবশ্যই সেটাও করবো। প্রয়োজনে আমরা আমাদের মানবকল্যাণ-উদ্দিষ্ট জ্ঞানার্জন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার করবো।

বংশ পরম্পরায় আমরা অনেক ধরণের বিপদ-আপদের সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু যেহেতু মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি ও সক্ষমতা-মাত্র অসীম সেহেতু প্রতিবারই আমরা বিপদ-আপদকে পরাস্ত করেছি। এবারও সেটাই হবে। আরও একটা কথা তোমাদের শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ রাখবে-প্রয়োজন যাই হোক না কেন কুণ্ঠাবোধ করবে না। অতিদ্রুত আবারও শ্রেণিকক্ষে ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা হবে বলে প্রত্যাশা রাখেন ড. বারকাত।

পাঠকদের জন্য ড. আবুল বারকাতের লেখা পুরো চিঠিটি প্রকাশ করা হলো-

সুপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ
করোনাভাইরাস-১৯-এ বিপর্যস্ত সভ্যতার ক্রান্তিকালে একান্ত মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে তোমাদের একজন শিক্ষক হিসেবে পত্রটি লিখছি। শিক্ষার্থী-শিক্ষকের প্রাণ। সেই শিক্ষার্থী যখন মাতা-পিতা-ভাই-বোন-আত্মীয়স্বজন-পাড়া-প্রতিবেশিসহ জীবন-প্রাণ নিয়ে অনিশ্চয়তার মাঝে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হয় তখন শিক্ষক হিসেবে আমাদের মানবিক নৈতিক দায়িত্ব-দায়বদ্ধতা শতগুণ বেড়ে যায়-এটাই স্বাভাবিক। যতদূর জানি করোনাভাইরাস-১৯ এর জীববিজ্ঞানগত রোগতত্ত্ব কার্যকারণ-বিবর্তন নিয়ে সংশ্লিষ্ট গবেষকরা এখন-পর্যন্ত খুব বেশি জানেন না। একই সাথে আমরা জানি না য এ রোগের সম্ভাব্য সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব-অভিঘাত আসলে কেমন হতে পারে। জানি না কারণ, এ কোনো সাধারণ ‘ঝুঁকি’ নয়; এ হল অনিশ্চয়তা যা পরিমাপ অসম্ভব। শিক্ষক মাত্রই আশাবাদী মানুষ-মুক্তচিন্তার সাহসী মানুষ। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী একজন শিক্ষক হিসেবে বলছি, তোমরা কোনোভাবেই আতঙ্কিত হবে না এবং প্রিয়জনদের আতঙ্কিত হওয়া থেকে মুক্ত করবে; সাহস যোগাযোগ এবং অবশ্যই সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য-পরিচ্ছন্নতাবিধি মেনে চলবে। প্রয়োজনের স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে যাবে এবং অন্যকে পাঠাবে। অবশ্যই ভুলে যাবে না যে তোমরা এ দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের গর্বিত শিক্ষার্থী। এ গর্ববোধ তোমাদের সাহসী করবে এটাই তো স্বাভাবিক।

আমি সন্দেহাতীতভাবে আশাবাদী যে কোভিড-১৯ এর ঊর্ধ্বমুখী রেখা নিম্নগামী হবে; দ্রুত এ রোগের টিকাসহ রোগমুক্তির ওষুধ আবিস্কৃত হয়ে যাবে। মানুষে মানুষে সংহতি বাড়েেব, মানুষ আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। আর চতুর্থ বিপ্লবের এ যুগে আমরা পারস্পরিক যোগাযোগ অনেকগুণ বাড়াতে সক্ষম। প্রয়োজনে আমরা অবশ্যই সেটাও করবো। প্রয়োজনে আমরা আমাদের মানবকল্যাণ-উদ্দিষ্ট জ্ঞানার্জন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার করবো।

বংশ পরম্পরায় আমরা অনেক ধরণের বিপদ-আপদের সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু যেহেতু মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি ও সক্ষমতা-মাত্র অসীম সেহেতু প্রতিবারই আমরা বিপদ-আপদকে পরাস্ত করেছি। এবারও সেটাই হবে। আরও একটা কথা তোমাদের শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ রাখবে-প্রয়োজন যাই হোক না কেন কুণ্ঠাবোধ করবে না। কায়মনোবাক্যে আশা করি অতিদ্রুত আবারও শ্রেণিকক্ষে ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে তোমাদের সাথে দেখা হবে, কথা হবে। তোমাদের প্রিয়জনসহ তোমরা সুস্থ থাকো, ভালো থাকো- এ কামনায়।

আবুল বারকাত, পিএইচডি
অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ