আমাদের বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন আনা জরুরি

  © টিডিসি ফটো

দেশে বিদ্যমান বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মেধাবীদের বাছাই করা হয়; ঠিক অন্যদিকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেধাবীদের ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে বলা চলে।

যেমন চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করার পর সে দেশের ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বা চিকিৎসক কিংবা চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়ুয়ারা যেখানে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য গবেষণায় মগ্ন, সেখানে আমাদের চিকিৎসক বা চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়ুয়ারা বিসিএস পরীক্ষাকে সামনে রেখে করোনাভাইরাস প্রথম কত সালে আবিষ্কৃত হয়, কত তারিখে সংক্রমণ ঘটে, কত তারিখে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে, কত জন মারা গেলো, কতটি দেশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তার সংখ্যা মুখস্থ করতে ব্যস্ত।

তাঁরা এগুলো মুখস্থ করতে করতে হয়তো ততদিনে চীনের বা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বা চিকিৎসকরা বা মেডিক্যালে পড়ুয়ারা যখন করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করে ফেলবে, তখন তারা মুখস্থ করবে কত তারিখে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করল, কারা আবিষ্কার করলো, যদি দলগতভাবে তা আবিষ্কার করা হয় তাহলে সে দলে কতজন সদস্য ছিল, সে দলের নেতা কে ছিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

এখন আমার প্রশ্ন এগুলো আমাদের চিকিৎসক বা চিকিৎসাবিজ্ঞানী কিংবা মেডিক্যালে পড়ুয়াদের কর্মজীবনে কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে কতটুকু কাজে লাগবে?

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিজ্ঞানী, জীববিজ্ঞানী, কৃষিবিজ্ঞানী বা পড়ুয়ারা যখন নতুন নতুন গবেষণা আর উদ্ভাবনে ব্যস্ত সময় পার করছে, সেখানে আমাদের দেশের পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিজ্ঞানী, জীববিজ্ঞানী, কৃষিবিজ্ঞানী বা পড়ুয়ারা কী নিয়ে তাঁরা গবেষণা করেছেন, কোন বিষয়ে তাঁরা নতুন কিছু আবিষ্কার করেছেন, কত তারিখে আবিষ্কার করেছেন; যদি দলগতভাবে কোনো কিছু আবিষ্কার করা হয় তাহলে সে দলে কতজন সদস্য ছিল, সে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন কে ইত্যাদি ইত্যাদি।

পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিজ্ঞানী, জীববিজ্ঞানী, কৃষিবিজ্ঞানী বা পড়ুয়াদের কর্মজীবনে কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে কতটুকু কাজে লাগবে?

আমার অভিমত হলো, অন্তত যারা এই ধরনের উদ্ভাবনী কিংবা টেকনিক্যাল বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের আলাদাভাবে বিসিএস পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে; যেখানে তাদের পরীক্ষার প্রশ্নগুলো হবে তাদের পঠিত বিষয়সমূহ এবং কর্মজীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাদের ভাইভা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারী কর্ম-কমিশন আলাদাভাবে ভাইভা বোর্ড গঠন করতে পারে। যেখানে ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের হবে।

শুধু তাই নয়, তাদের ক্যাডারের পদায়নের পর অন্যান্য ক্যাডারের ন্যায় প্রাপ্য এবং ক্ষেত্র বিষয়ে অগ্রাধিকারমূলক সুযোগ-সুবিধা দেয়া যেতে পারে। যেন তারা অন্য ক্যাডারে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব না হয়ে ওঠে।

যেমন, আমার দেখা ৩৪তম বিসিএসের এখন সড়ক ও জনপদের ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডার তাঁর জাত ক্যাডার পরিবর্তন করে পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেছেন। আবার, ৩৫তম বিসিএসের ডক্টর ক্যাডার ৩৬তম বিসিএসের মাধ্যমে অ্যাডমিন ক্যাডারে যোগদান করেছেন।

এখন আমার প্রশ্ন, তাঁরা এতো সাধনার পর ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ডক্টর হওয়ার পরও তাঁদের পঠিত বিষয়ের ক্যাডার হয়ে অন্য ক্যাডারে আবার বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে অন্য ক্যাডারে চলে গেলেন? আমরা কেন তাঁদেরকে তাঁদের স্ব-স্ব ক্যাডারে ধরে রাখতে পারিনি? তাঁরা যে এতো বছর ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা ডাক্তারি পড়া পড়লেন তা বর্তমান কর্মস্থলে কতটুকু কাজে লাগবে?

রাষ্ট্র যে তাঁদেরকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানানোর জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করলো, সেগুলোর কী হবে? তাঁরা কেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এতো পড়াশোনা করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পরও সেই মহান পেশা বাদ দিয়ে দিলেন? চাইলে যে কেউ আগে তেমন পড়াশোনা না করলেও পুলিশে, অ্যাডমিনে গিয়ে কাজ করতে পারবেন। কিন্তু চাইলেই কি কেউ আগে সেই বিষয়ে পড়াশোনা না করলে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারের কাজ করতে পারবেন?

কে জবাব দিবে এসব প্রশ্নের?

লেখক: ৩৫তম বিসিএস ক্যাডার ও ক্যারিয়ার স্পেশালিষ্ট


সর্বশেষ সংবাদ