ছাত্রনেতারা এত দামি গাড়ি চালায় কীভাবে?

  © ফাইল ফটো

প্রথম কথা। বঙ্গবন্ধু যেভাবে বাংলাদেশকে নির্মাণ করতে চাচ্ছিলেন, সেভাবে হচ্ছে না। মোট হিসেবে রাষ্ট্র বিত্তশালী হচ্ছে। দারিদ্র্য কমছে ঠিকই, কিন্তু সেটা পুঁজিতন্ত্রের শক্তিতে। ফলে বৈষম্য থেকে যাচ্ছে। সমাজে অশিক্ষিত গরীব মানুষের তো কথাই নেই; শিক্ষিত পেশাজীবী মানুষের মধ্যেও দিন দিন বৈষম্য বাড়ছে।

তদুপরি জ্ঞান-নির্ভর সমাজ নির্মাণে সরকারের মনোযোগ নেই। সরকারের কুশীলবগণ শুধু নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন এবং সফল হচ্ছেন। তদুপরি দীর্ঘমেয়াদী পরিককল্পনার অংশ হিসেবে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে। মহামান্য থেকে শুরু করে প্রায় সব পর্যায়ের মানুষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কথা বলছেন।

দেশের হুজুর সমাজ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে পারলে সোজা জাহান্নামে পাঠিয়ে দেন। মহামান্য বলেছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় টাকা রোজগারের জায়গা না। খুব ভালো কথা। তাহলে রাজনীতিবিদ, সামরিক-বেসামরিক আমলার সম্পদ ফুলে ফেঁপে উঠে কীভাবে? ছাত্রনেতারা এত দামি গাড়ি চালায় কীভাবে? সামরিক-বেসামরিক আমলার এতগুলো প্লট, ফ্ল্যাট হয় কিভাবে? একজন সাংবাদিক কীভাবে কয়েক বছরে শিল্পপতি বনে যান?

সব অন্যায় যেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই হচ্ছে! দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, আমলা আর কাঠ মোল্লাদের যোগসাজশে যে ভয়াবহ সমাজের দিকে আমরা যাচ্ছি, সেখানে একদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরই দরকার লাগবে। ডেঙ্গু সংকটে দেশের কোনো বাহিনী কাজে এসেছিল বলে মনে পড়ছে না। কোনো সাধারণ সম্পাদকের হুংকারে কিংবা কোনো বাহিনী প্রধানের গর্জনে এডিস মশাগুলো পালিয়ে যায়নি।

জাহাঙ্গীরনগরের একজন বিজ্ঞানীই কিন্তু পুরো জাতিকে সেবা দিয়েছেন। পুলিশ, আর্মি, সাংবাদিক, আমলা সবাই তখন সেই বিজ্ঞানীর পেছনেই ছুটেছেন। অবহেলিত ডাক্তার সমাজই ডেঙ্গু সংকটে সেবা দিয়ে মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এমনকি ডাক্তার মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছিল।

জ্ঞান-নির্ভর সমাজের কোনো বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা তখনই নির্মিত হবে যখন জ্ঞান-নির্ভর সমাজ সৃষ্টি হবে। বিজ্ঞান সবার উপরে স্থান পাবে। শিল্প-সাহিত্য, দর্শন সমাজে কদর পাবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেঁচে থাক। বাংলাদেশ বেঁচে যাবে, বেঁচে থাকবে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ