একচোখা লেখক, শিল্পী ও সাংবাদিকদের দেখলে বোঝা যায় বুদ্ধিজীবী হত্যা কতটা সফল

দুনিয়ায় সব সময় আপনি জাস্টিস পেয়ে যাবেন এটা ভাবা ভুল। আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবীরা যেমন পাননি। শুধু পাকিস্তানী আর্মি না, এদেশের রাজাকাররা তাদের মারার প্ল্যান করেছিল। দুনিয়ার সবচেয়ে সফলতম প্ল্যান ছিলো বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড কতটা সফল ছিলো তা আপনি বুঝবেন বর্তমান বাংলাদেশের একচক্ষু বিশিষ্ট লেখক, শিল্পী ও সাংবাদিকদের দেখলে। কোনো পক্ষ ছাড়া হ্যারিকেন দিয়ে খুঁজেও আপনি একজন ন্যায়বান বুদ্ধিজীবী পাবেন না! তাদের প্রত্যেকেরই একমাত্র লক্ষ্য কারোর না কারোর পক্ষ নেওয়া!

জাফর ইকবাল স্যার নামের যে মানুষটিকে আমরা বুদ্ধিজীবী জেনেছিলাম তিনি জানিয়েছিলেন পাকিস্তানের মাটিতে বিমান নামলে অর্থাৎ ট্রানজিট নিলে তিনি সেই প্লেনে ওঠেন না। জীবনের দীর্ঘতম সময় আমি পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা নিয়ে বেঁচেছিলাম। আমার সৎবিৎ ফিরলো ২০১৫ সালে, যখন ১৩জন পাকিস্তানি মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু হিসেবে আমন্ত্রণ পেলেন বাংলাদেশ সফরের। আমি নিজেকে প্রথমবারের মতো প্রশ্ন করলাম- ভাল মানুষ পাকিস্তানেও কি আছে?

আমি খুঁজে পেলাম আমার পাকিস্তানি বন্ধুকে যে বাংলাদেশ নিয়ে লেখার জন্য আর কখনো নিজের দেশে ঢুকতে পারবেনা।

মতিয়া চৌধুরী পোলাপানকে ঢালাওভাবে 'রাজাকার' বলে দিলে তার চেতনায় বাঁধে না, কিন্তু সেই কথায় ক্ষোভে পোলাপানদের কেউ একজন 'আমি রাজাকার' লিখলে একটা যৌক্তিক আন্দোলন মিসজাজ করতে বাঁধে না। ছাত্রলীগের কাজকর্মকে দানব টানব বলে তারা কাহিনী করেন, কিন্তু দানবের বাপমায়ের নাম মুখে নেননা! এনারা বুদ্ধিজীবী না, এনারা ব্যাবসায়ী। কখনো চেতনার, কখনো দলীয়করণের এজেন্ডার।

মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পাশে না থাকলেও তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ আমাদের পাশে ছিলেন, জর্জ হ্যারিসনের মতো নিপাট আমেরিকানরা যখন বাংলাদেশের জন্য ফান্ড কালেক্ট করলেন আর এলেন গিন্সবার্গ শরনার্থীদের নিয়ে লিখলেন 'সেপ্টেম্বর ইন যশোর রোড' নামক এক কালজয়ী কবিতা।

আমাদের বুদ্ধিজীবীরা এতো বছরেও শেখাতে পারেন নাই ভালো মানুষ আর মানবিক মানুষের কোনো দেশ থাকেনা, কাল থাকেনা। তারা সকল দেশের, সকল কালের! বুদ্ধিজীবী তারা যারা সিলেক্টিভ মানবতার ফেরিওয়ালা না।

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড কতটা ভয়াবহ ছিলো সেটা আপনি বুঝতে পারবেন চেতনার ঝান্ডাধারী লোকগুলোকে দেখলে। যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন আমাদের হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া বুদ্ধিজীবীরা দেখেছিলেন সেই বাংলাদেশ অনেক আগেই মরে গেছে।

এই বাংলাদেশে হুমায়ুন আজাদকে কুপানো হয়, অভিজিৎ রায়কে, অনন্ত বিজয় দাশকে, নিলয় নীলকে ভিন্নমতের জন্য প্রাণ হারাতে হয় মৌলবাদীদের হাতে, সুপ্রীম কোর্টের সামনে ন্যায়বিচারের প্রতীক নারীমূর্তি সরে যায় ধর্মানুভূতির দোহাই দিয়ে, নারীদের তেঁতুল বলা শফী হজুরের কাছ থেকে 'মাদার অফ কওমি' উপাধি নেন শেখ হাসিনা!
হাজার হাজার বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, দুর্নীতি, শেয়ার বাজার কেলেংকারী, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, খাদ্যে ভেজাল, ভয়াবহ চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে এমন কিছু নেই যা এই বাংলাদেশে নেই!

বাংলাদেশের পরিস্থিতির জন্য আমার যতোটা কষ্ট না লাগে, তারচেয়ে বেশী কষ্ট লাগে বুদ্ধিজীবীদের কথা মনে পড়লে। আমার বলতে ইচ্ছে করে- বোলোনা কয়েক হাজার বুদ্ধিজীবীকে মেরে ফেলা হয়েছিল। বরং বলো একটা জাতির ভবিষ্যৎ মেরে ফেলা হয়েছিলো! আর ভবিষ্যৎ মারা যাওয়াটা কষ্টের না, কষ্টের সেটাই যে তারা অকারণে একটা ভবিষ্যৎহীন জাতির জন্য মারা গেলো!

একটা বুদ্ধিজীবীহীন জাতির সদস্য হিসেবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আমার ভালবাসা...


সর্বশেষ সংবাদ