ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তন, কিছু কথা

  © ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবির অধিভুক্ত সাত কলেজ, মেডিকেল কলেজ এবং হোম ইকোনোমিক্স কলেজের সমন্বয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তন শেষ হলো ৯ ডিসেম্বর। মূল আকর্ষণ মহামান্য রাষ্ট্রপতি। বরাবরের মতই চমৎকার দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিলেন তিনি। দর্শকশ্রোতা মুগ্ধ।

সমাবর্তনের সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিয়ে দ্বিমুখী প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। প্রথমত, অধিভুক্ত কলেজগুলোর ছাত্রছাত্রীরা কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে অংশগ্রহন করবে সেটা নিয়ে বিতর্ক। এ ধরনের মতামত প্রদানকারীদের যুক্তি হচ্ছে, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সরাসরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়। অধিভুক্ত কলেজগুলোর ছাত্রছাত্রীরা ঠিকমতো ক্লাস না করেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, তাদের মান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমকক্ষ নয় ইত্যাদি।

দ্বিতীয়ত, সমাবর্তনের জন্য রেজিস্ট্রেশন বাবদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের সবাই সমপরিমান অর্থ প্রদান করেছে। তাহলে শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেনো সরাসরি সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে? আর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা কেনো শুধুমাত্র ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করবে?

গতবছরও সমাবর্তন নিয়ে এ ধরনের সমালোচনা হয়েছিল, এবারও তাই হচ্ছে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের অনেকেই এই পর্দাভিত্তিক সমাবর্তন অনুষ্ঠানকে তাদের জন্য বৈষম্যমূলক মনে করছেন। অনেকেই ফেবুতে এ ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে স্টেটাসও দিয়েছেন। অধিভুক্ত সাত কলেজের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘...গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ আমাদের মতোই অধিভুক্ত হয়েও মূল ভেন্যুতে অংশগ্রহণ করে, যে সুযোগ আমরা পাই না।’

উপর্যুক্ত দ্বিমুখী প্রতিক্রিয়ার বাইরেও কিছু বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়-

প্রথমত, ঢাবির মেধাবী গ্র্যাজুয়েটগণ মহামান্যের হাত থেকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন, কিন্তু সাত কলেজের কাউকে স্বর্ণপদক দেয়া হয় না। তাহলে কি বলবো যে সাত কলেজে স্বর্ণপদক পাবার উপযুক্ত কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী নেই?

ঢাবির অধিভুক্ত সাত কলেজের একাডেমিক রেজাল্ট কিন্তু তা বলে না। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সিলেবাস, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়ণ, ফলাফল তৈরি ইত্যাদি সবকিছুই ঢাবি শিক্ষকদের সরাসরি অংশগ্রহণেই হয়ে থাকে।

তাহলে ভাল ফলাফলের জন্য সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বর্ণপদক পাবার জন্য বিবেচিত হবে না কেনো? ঢাবি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে ঢাবির মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য যেভাবে স্বর্ণপদক সংগ্রহ করে থাকে একইভাবে সাত কলেজের মেধাবীদের জন্যও স্বর্ণপদক যোগাড় করলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় আরও বেশি উৎসাহী হবে বলেই আমার বিশ্বাস।

অবশ্য সাত কলেজের কর্তৃপক্ষও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে সাত কলেজের মেধাবীদের জন্যও স্বর্ণপদক যোগাড়ে উদ্যোগ নিতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমাবর্তন উপভোগ করায় কতটা সমস্যা তা যারা সামনে থেকে অংশগ্রহণ করেছেন তারা দেখতে ও বুঝতে পেরেছেন। মাঝে মাঝেই স্ক্রিনে ছবি আসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো, বক্তাদের বক্তব্য শোনা যাচ্ছিলো না, পর্যাপ্ত স্ক্রিনের অভাবে পিছন থেকে দেখা যাচ্ছিলো না ইত্যাদি।

তৃতীয়ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় কিন্তু সাত কলেজের অধ্যক্ষ উপাধ্যক্ষ ও বিভাগীয় শিক্ষকগণ ব্যতীত অন্যশিক্ষকগণ এমনকি অনেক সিনিয়র অধ্যাপকগণও কলেজ কেন্দ্রে সমাবর্তনে অংশগ্রহনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।

এভাবে সবকিছুতেই কেনো যেনো কিছু বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। পরবর্তী সময়ে এসব বৈষম্য দূর করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একই ভেন্যুতে, একই মর্যাদায় যদি সমাবর্তন আয়োজন করা না যায়, তবে দুই দিনে আলাদাভাবে একই সুযোগ-সুবিধায় সমাবর্তন আয়োজন করা যায় কিনা তা ভেবে দেখা উচিৎ।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা কলেজ


সর্বশেষ সংবাদ