আবরারকে দ্বিতীয় বার হত্যা!

শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়। বিশ্বজুড়ে বিবিসি, রয়টার্স, ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, আল জাজিরা, গালফ নিউজসহ আন্তর্জাতিক সব মিডিয়ায় বলা হয়েছে— ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের পানিচুক্তির সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।’ অথচ আজকে পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে আবরার হত্যার চার্জশিটে এই মূল কারণটির কোন উল্লেখই নাই!

পুলিশের আজকের সংবাদ সম্মেলনে আবরার হত্যাকাণ্ডের মোটিভ হিসাবে বলা হলো অন্যসব কারণ। বলা হলো— ‘জড়িতদের উশৃঙ্খল আচরণের অভ্যস্ততা, অন্যদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করা এবং সালাম না দেয়ার বিষয়টিও আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্যতম কারণ।’ পুলিশ এটাও বলে, ‘এটা ঝিকে মেরে বৌকে শেখানোর মতো। এখানে সিনিয়র-জুনিয়র ইস্যুও ছিল।’

আশ্চর্য, দেশ-বিদেশের সবাই দেখেছে, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হয় আবরার ফাহাদ। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে ৫ অক্টোবর বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরেই ৬ অক্টোবর রাতে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।

ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় পর বুয়েট ছাত্রলীগের খুনিরা নিজেদের মধ্যে গড়া একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে আবরার ফাহাদকে মেরে ফেলার নির্দেশনা দেয়। সেই মেসেঞ্জার গ্রুপে অভিযুক্তরা সেই নির্দেশনার প্রতি সম্মতিসূচক রেসপন্স করে সবাই মিলে আবরারকে ডেকে এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। এগুলো মামলার স্বাক্ষ্য প্রমান, আসামীদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও ভিডিও ফুটেজে স্পষ্টভাবে পাওয়া গেছে।

অবশ্য ঘটনার পুরো ভিডিওর দাবিতে প্রাধ্যক্ষসহ পুলিশের কর্মকর্তাদেরকে সেদিন বুয়েটের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ না করলে এই ভিডিও ফুটেজটিই হয়ত আর কখনও পাওয়া যেত না।

আবরার হত্যার চার্জশিট এখনও দেখিনি। তবে, পুলিশের আজকের সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ যতটুকু জানিয়েছে ততটাই গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি। আশা করি, আবরার হত্যাকান্ডের মত স্পর্শকাতর মামলার তদন্তে পুলিশ কোন ছলচাতুরির আশ্রয় নিবে না। আর সত্যিই যদি আবরার হত্যার চার্জশিটে খুনের মূল মোটিভ আড়াল করে যতসব অসংলগ্ন কারনকে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্ঠা করা হয়, তাহলে সেটা হবে আবরারকে দ্বিতীয় বার হত্যা করার নামান্তর।

লেখক: আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ


সর্বশেষ সংবাদ