মৃত্যুর পরও তার লাশ রাষ্ট্রবিহীন-দেশহীন!

  © টিডিসি ফটো

বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। প্রবাসের হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দেশের জন্য যুদ্ধ করা এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর আগেই জেনে গেছেন, তার কোন দেশ নেই! তিনি আজ কেবলই রাষ্ট্রবিহীন-দেশহীন একজন মানুষ! মৃত্যুর পর তার লাশও হয়ত এমনি রাষ্ট্রবিহীন-দেশহীন!

তার লাশের পথযাত্রাতেও আজ যেন প্রবেশ নিষিদ্ধের সতর্কবাণী লিপিবদ্ধ! পাঁচ বছর আগে ক্যানসার চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন তিনি। দুই বছর আগে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে স্ত্রীসহ নিজের পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করেন। কিন্তু তাদেরকে আজ অবধি সেই পাসপোর্ট দেয়া হয়নি। কোনো সদুত্তরও দেয়া হয়নি। অথচ উনাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়নি। পাসপোর্ট আইনে উনারা অযোগ্যও নন। আইন-কানুন নিয়ম-নীতি মেনেই আবেদন করেছেন।

বিরোধী নেতা-কর্মী বা সরকারের সমালোচক কিংবা ভিন্ন মতাদর্শীদের প্রতি রাষ্ট্রের এহেন প্রতিহিংসা ও ঘৃণার রাজনীতি এদেশে নতুন নয়। কিন্তু ভিন্ন মতাদর্শীদের লাশের উপর যে হিংস্র প্রতিহিংসা ও ঘৃণার রাজনীতি আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে দেখে আসছি তা সভ্য সমাজে একেবারেই বিরল।

পড়ুন: চান্স হয়নি, মানবিকতায় ভর্তি হচ্ছেন তিন্নি!

লাশের আবার দল কি? মরার সাথে আবার যুদ্ধ কিসের? লাশের সাথে কিসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা? একজন চিরশত্রুও কিন্তু তার প্রতিদ্বন্দ্বির লাশের কফিনটাকে কাঁধে নিয়ে জানাজায় শরীক হয়। অশ্রুসিক্ত চোখে দুহাত তুলে মাগফিরাতের দোয়া করে। এটাই মানুষের ধর্ম। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি, বিরোধী দলের জানাজায় পর্যন্ত কেউ গেলে তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট হয়! বিএনপি-জামাতের ট্যাগ খাওয়ার ভয়ে এখন আর কেউ লাশ দেখতে যেতে পর্যন্ত ভয় পায়!

আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, টকশোতে সরকারের সমালোচনা করার অপরাধে কিভাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে পিয়াস করীমের লাশকে ‘দণ্ড দেয়া হয়েছিল’ শহীদ মিনারে! সাথে আমাকে সহ দেশের বিশিষ্ট ৯ জনকে মারা যাবার পর আমাদের লাশকে শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষনা দেয়া হয়েছিল সেদিন! বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কবরে হামলা করা হলো। অসংখ্য লাশের মিছিলে পর্যন্ত হামলা করা হলো। এমনকি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর পর্যন্ত উঠিয়ে দেয়ার নানান হুমকি বাণীও এই জাতিকে সহ্য করতে হয়েছে। মৃতের লাশকে দণ্ডদানের এহেন বিকৃত পশুপ্রবৃত্তি আদিম বর্বর যুগেও ছিল না!

পড়ুন: মেয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এসে লাশ হলেন বাবা

যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করলো, তারাই আজ দেশহীন! রাষ্ট্রবিহীন! আর যারা দেশের মানুষকে মৃত্যুর মুখে ফেলে রেখে পালিয়ে গিয়ে পাঁচ তারকা জীবন উপভোগ করেছিল, তারাই আজ দেশের মালিক! অথচ সেই পলাতক ফুর্তিবাজরাই আজ সিদ্ধান্ত দেয়, কে রাষ্ট্রবিহীন! আর কে দেশহীন! দুদিন আগে পাখির বাসা ভাংগা যাবে না বলে হাইকোর্ট আদেশ দিলো। একটা পাখিরও তার নিজ ঘরে থাকার অধিকার আছে! অথচ একজন মুক্তিযোদ্ধার তার নিজ দেশে ফেরার কোন অধিকার নেই! যেমনটা তার লাশেরও নাই!

লেখক: আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ

আরো পড়ুন: মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান চাই না: মুক্তিযোদ্ধার চিঠি ভাইরাল

ভাইয়ার সঙ্গে বড় হওয়াটা হলো না: আবরার ফাইয়াজ


সর্বশেষ সংবাদ