স্রষ্টা না করুন, ক্রিকেটে যেন সেইদিন না আসে

  © টিডিসি ফটো

আসুন ক্রিকেটে ফিরি। আমি সবসময় বিশ্বাস করি, খেলাধুলায় সবচেয়ে বড় অন্যায় হলো দর্শককে ঠকানো। জয়-পরাজয় খেলার অংশ জেনেই দর্শক মাঠে আসেন, টিভির সামনে বসেন। কিন্তু এই জয়-পরাজয়ের বাইরেও দর্শকের চাওয়া থাকে, সততা। খেলোয়াড়, কর্মকর্তা; সকলের কাছ থেকে একটা ফেয়ার গেম আশা করেন দর্শকরা। সেটা তাদের উপহার দিতে না পারা হলো একজন ক্রীড়াবিদের, একজন সংগঠকের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।

সারা বিশ্বেই দর্শকরা হলেন খেলার প্রাণ। এটা বাংলাদেশের জন্য অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশী সত্যি। এই দেশটির মতো নিঃস্বার্থ দর্শক খুব কম জায়গাতে পাবেন। এখানকার দর্শকরা প্রায়শ জানেন যে, তারা এই ক্রিকেট বা ফুটবল দলের কাছ থেকে বড় কিছু পাবেন না। তারপরও তারা মাঠে যান, সারা রাত জেগে লাইন ধরে টিকিট কেনেন, বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে শো রুমের সামনে দাড়িয়ে খেলা দেখেন।

এমন নির্মোহ দর্শক আপনি আর কোথায় পাবেন? সামান্য যে উগান্ডার দর্শক, সেও একটা অলিম্পিকে সোনার আশা করে। আমরা সেই সব আশা ছাড়াই খেলা দেখি।

দর্শক যে খেলার কতো বড় প্রাণ; তা সম্ভবত আমাদের ক্রিকেটার ও কর্তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। কর্তারা ভাবছেন, তাদের বিষয়বুদ্ধিতেই আজ ব্যাংকে শ’কোটি টাকার এফডিআর। আর ক্রিকেটাররা ভাবছেন, তাদের পারফরম্যান্সেই এই টাকার বাড় বাড়ন্ত। কিন্তু তারা কল্পনাও করছেন না, এই দর্শক দেখে বলেই আপনাদের খেলায় আজ কোটি কোটি টাকা।

দর্শক এভাবে নিঃস্বার্থ হয়ে, মাথার ঘাম ফেলে আপনাদের খেলা দেখতে না ছুটলে, গ্রামীন ফোন, ইউনিলিভার কেউ থাকবে না পাশে; কেউ না।

একজন কর্মকর্তা গেলে আরেকজন আসবেন। একজন সাকিব বা তামিম বা মাশরাফি গেলে আরেক জন জন্ম নেবেন। কিন্তু এই দর্শক একবার মুখ ফিরিয়ে নিলে আর পাবেন না। দর্শক মুখ ফেরালে কী হয়, তা ফুটবলের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন।

একদা এই দর্শক কাতারে কাতারে মাঠে গিয়ে ফুটবলকে সমৃদ্ধ করে রেখেছিলো। কিন্তু সেই দর্শক পাতানো খেলা, অনিয়ম করে হারিয়েছিলো ফুটবল। আজ শত চেষ্টা করেও তাদের মাঠে ফেরানো কঠিন হয়ে পড়েছে। আজ ফুটবলে সবই আছে; জামাল ভুঁইয়া আছেন, সাদ উদ্দিন আছেন, সালাউদ্দিন ভাই আছেন; কেবল দর্শকের অভাবে তাদের টাকার ঝনঝনানি নেই।

স্রষ্ঠা না করুন, ক্রিকেটে যদি সেই দিন আসে, আজকের খেলোয়াড়, কর্মকর্তারা সেই জন্য দায়ী থাকবেন। মাঠের বাইরে যে খেলা তারা শুরু করেছেন, এর ফল শুভ হতে পারে না।

এখনও সময় আছে। এখনও এই দেশের মানুষ, এই দেশের রাজনীতিবিদরা ক্রিকেটকে ব্লাঙ্ক চেক দিয়ে রেখেছেন। তারা এখনও ক্রিকেটকে ভালোবাসেন। এই ভালোবাসাটা হারাবেন না প্লিজ।

যদি আপনাদের মধ্যে কোনো সমস্যা থেকেও থাকে, নিশ্চয়ই সেটা ক্রিকেটীয় নয়; সেটা নেপথ্যের সমস্যা, টাকার সমস্যা। সেটা মিটিয়ে ফেলুন। হোক, দুই পক্ষেরই কিছু ক্ষতি। কিন্তু ক্রিকেটের যেনো কিছুতেই ক্ষতি না হয়। সবচেয়ে বড় কথা, এই সরল দেশটির সহজ দর্শকদের ঠকাবেন না। তাহলে আপনাদের স্রষ্ঠাও ক্ষমা করবেন না। দয়া করে এই পর্ব এখানেই শেষ করুন। আমরা ভারত সফর নিয়ে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবি, আসুন। আর ক্রিকেটের বাইরের কথা নয়। এখন শুধুই ক্রিকেট হোক।

লেখক: ক্রীড়া সাংবাদিক


সর্বশেষ সংবাদ