টর্চার সেলে পানির বোতলে প্রস্রাব করতে বাধ্য হই!

  © প্রতিকী ছবি

গ্রেফতার এবং ছাত্রলীগের হামলা থেকে রক্ষা পেতে সারারাত টিএসসির ভেতর দিয়ে একটা বিল্ডিংয়ের পাশে অবস্থান করি।

৮ এপ্রিল রাত ২ টার দিকে হলের মেয়েদের টিএসসিতে নিরাপত্তা দিতে গিয়ে নিজে অনেকগুলো রডের পিটনি এবং ইটের ঢিল খেয়েছিলাম। সময়টা ছিলো ৯ এপ্রিল ২০১৮ সালের ভোর ৫টা। শামসুন্নাহার হলের বিপরীত দিকের দেয়াল টপকিয়ে টিএসসির ভেতর থেকে বের হলাম, সাথে আরো কয়েকটা ছেলে ছিলো।

বের হওয়ার সাথে সাথে বর্তমানে অস্ত্র মামলায় গ্রেফতারকৃত হলের ছোট ভাই, তুষার আমাকে দেখে ফেললো। তুষারের ফোন পেয়ে মনে হয়, ছোট ভাই জ্যোতিও চলে আসলো। এরা আমাকে বললো, ‘সানী ভাই আপনাকে যেতে বলছে’ (মেহেদী হাসান সানী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহসিন হল ছাত্রলীগ)। আমাকে বাইকে করে নিয়ে যাওয়া হলো, কিছু সময় পরই সানী আসলো।

আমাকে দেখেই বার বার তেড়ে আসছিলো এবং গালিগালাজ করতে লাগলো। তবে গায়ে হাত দেয়নি। মুহসিন হলের ৩৩৩ নাম্বার রুমে আনা হলো আমাকে। এক ঘন্টা পর্যন্ত কি যে মানসিক টর্চার! সেটা শুধু আমিই জানি।

তখন কিন্তু আমি মুহসিন হল ছাত্রলীগের হল শাখার সহ-সভাপতি। আমার ফোন, ফেইসবুক আইডি সব নিয়ে নেওয়া হলো, সানী কিন্তু আমার বন্ধু। অন্য যারা ছিলো তারা সবাই জুনিয়র। হলের জুনিয়ররা আমাকে একটা কথাও বলেনি, তবে অন্য হলের একটা জুনিয়র, আমাদের হলে থাকতো সে। বার বার আমাকে মারার জন্য সানীকে উত্তেজিত করতে লাগলো।

সেই একটা ঘন্টা সময় আমার জন্য কি ছিলো একমাত্র আমিই জানি। ৩৩৩ নাম্বার রুম থেকে আমাকে ২০৫ নাম্বার রুমে (আরিফের রুমে) তালাবদ্ধ করে রাখা হয় ৫/৬ ঘন্টা। বার বার ডাকার পরেও কেউ রুম খুললো না, বাধ্য হই পানির বোতলে প্রস্রাব করতে! সময়টা চোখের সামনে ভেসে উঠলে চোখে পানি চলে আসে।

এই পাপী চোখ দিয়ে আরো কতো নির্মমতা দেখেছি হলে, তা অন্যদিন বলবো। পাপী বলেছি এজন্য যে আমি প্রতিবাদ করতে বা নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াতে পারিনি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণেই আরো অনেক বার নির্যাতনের শিকার হয়েছি।

ভুক্তভোগী ছেলেটি আমি হাসান আল মামুন।

লেখক: আহবায়ক, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ


সর্বশেষ সংবাদ