ভিন্নমতের কারণে হত্যার ধারণা ছাত্রনেতাদের মাথায় কি করে ঢুকলো?

  © ফাইল ফটো

বুয়েটের ছাত্রাবাসে ছাত্র হত্যার বিষয়টি শুধু দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার প্রক্রিয়ায় আনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর সঙ্গে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রশাসন নিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত আছে।

এক, দেশের স্বার্থরক্ষার নানা বিষয়ে ভিন্নমত পোষণের অভিযোগে কাউকে হত্যা দূরের কথা, যেকোনো ভাবে হেনস্থা করা যায়- এ ধারণা দলীয় ছাত্রনেতাদের মাথায় কি করে ঢুকলো?

দুই, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকত্বের প্রশাসনিক দায়ভার যে সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপর বর্তায় এবং এ বিষয়ে কোনো রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের অযাচিত হস্তক্ষেপের কোন সুযোগ যে নেই, সে সম্বন্ধে এসব কর্তৃপক্ষ দৃশ্যতই সজাগ নয় কেন?

তিন, বিশ্ববিদ্যালয় সহ উচ্চশিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ পদসমূহের নিয়োগ শুধুই সংকীর্ণ দলীয় আনুগত্যের বিচারে হলে সমাজে মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও শিক্ষা-গবেষনার মানোন্নয়ন কি করে হবে? দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া এসব পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা প্রকাশনার সংখ্যা শূন্য হওয়াই যে প্রকারান্তরে যোগ্যতার আর একটি মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা কি কেউ লক্ষ্য করেছে।

উল্লেখ্য, (www.scholar.google.comওয়েবসাইটে নাম দিয়ে সার্চ করলেই কোন গবেষকের কতগুলো প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অন্য গবেষকরা কতবার সূত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন এসব যাবতীয় তথ্য পাওয়া যায়?

সবশেষে, প্রতিবেশী ভারত ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় উচ্চশিক্ষার মান আমরা কোথায় নামিয়ে এনেছি, তা কি আমরা নিজেরাই মূল্যায়ন করে দেখেছি? দেশ শাসনের যে বন্দোবস্তই থাকুক না কেন, উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার বিপর্যয় ঠেকানো না গেলে দেশের কাঙ্খিত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন যে সম্ভব নয়, তা কি আমরা বুঝতে চাই না?

লেখক: প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক


সর্বশেষ সংবাদ