আসলেই ভাবুন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী হওয়া উচিত?

  © সংগৃহীত

প্রশ্নটা হেলাফেলার বিষয় নয়, আসলেই ভাবুন ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী হওয়া উচিত?’ প্রশ্নটা তুলেছেন একজন শিক্ষার্থী। প্রশ্নটা নর্মেটিভ - কী হওয়া উচিত? এই প্রশ্নটা মাথায় রেখে চারপাশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকান, বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখুন,| যা দেখতে পাচ্ছেন সেটা হচ্ছে ইম্পিরিক্যাল ডাটা - উপাত্ত।

ফেসবুকে এই প্রশ্ন তোলার মাশুল দিতে হচ্ছে ওই শিক্ষার্থীকে- বহিস্কৃত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ফেসবুকে তার এই প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য তাকে ফোন করেছিলেন বলে বলা হচ্ছে, এই আলাপের একটি কথিত অডিও টেপ সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উপাচার্য এই ফোনের কথা অস্বীকার করেছেন বলে কোথাও খবর বেরোয়নি। ফলে ওই ফোন এবং সেখানে ব্যবহৃত ভাষা, আচরনের মধ্যে একটা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

ঐ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) কর্তৃপক্ষ একটা উত্তর দিয়েছেন, একজন উপাচার্য তাঁর আচরণ দিয়ে, কথা দিয়েও তাঁর একটা উত্তর দিয়েছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের একটি ঘটনার কথাও স্মরণ করতে পারেন। এটা একটা তথ্য।

আরেকটা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাঈদুল ইসলামের বিদেশ যাত্রা বিষয়ে কর্তৃপক্ষের আচরণের মধ্যেও একটা উত্তর আছে। একটা ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে তাকে আইসিটি অ্যাক্টে জেলে পাঠানো হয়েছিলো গত বছর। আদালত তাঁর বিরুদ্ধে আনা মামলার বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত করেছেন।

হাইকোর্টের রায়ের পর সাধারণ শিক্ষক হিসেবে ছুটি নিয়ে বিদেশে গবেষণা করতে যাওয়ার ওপরে কোনোই বাধা নেই। মাঈদুল গবেষণার জন্য বিদেশে একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ পেয়েছেন, কিন্তু তাঁর বিদেশ যাত্রা বন্ধ করার জন্যে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন রকমের অজুহাত, শুরু হয়েছে নানান ধরণের টালবাহানা। এটা আরেকটা তথ্য।

এই দুটো ঘটনা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কি করছে তাঁর একটা ধারণা পেলেন। এবার অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকান। সেটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকাবেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকাবেন সেটা আপনার বিবেচ্য। আপনার বিবেচ্য- কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকাবেন। কোন ধরণের আচরণের দিকে তাকাবেন। কেননা আসলে তাতে কোনও হেরফের হবেনা।

প্রায় সবগুলো উপাচার্যের আচরণের মধ্যেই একটা উত্তর আছে, তাঁরা কি ভাবেন, কোনটাকে দায়িত্ব মনে করেন। এবার আসুন আবার প্রশ্নটা করি- ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী হয় উচিত?’ যা হচ্ছে তাই কি হওয়া উচিত? আপনি যদি এর দুইয়ের মধ্যে কোনও ফারাক দেখতে পান তা হলে আপনাকে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই হবে, এর কারণ কি?

কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এর কারণ অনুসন্ধান করে লাভ নেই; কার পদ থাকলো আর কার পদ গেলো সেটা নিয়ে ভেবেও লাভ নেই। আপনি যদি এই নিয়ে সময় ব্যয় করেন তবে বুঝতে হবে, হয় আপনি আসল বিষয়ে মনোনিবেশ করতে অপারগ, নতুবা ইচ্ছে করেই আপনি কথার খেলা খেলছেন যাতে করে দৃষ্টি অন্যদিকে যায়। প্রশ্নটা মোকাবেলা করা জরুরি- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্যে, গোটা দেশের জন্যেও।

লেখক: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক


সর্বশেষ সংবাদ