অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খানের সাধনা

  © ফাইল ফটো

১৮ আগস্ট ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খানের ৬১তম জন্ম দিবস। সাম্প্রতিক বাংলাদেশে যে কয়েকজন স্বাধীন রাষ্ট্র চিন্তাবিদ আছেন তাঁদের মধ্যে সর্বাগ্রে তাঁর নাম বলিষ্ঠ কন্ঠে উচ্চারিত হয়। একাধারে তিনি একজন শ্রেষ্ঠ মানের শিক্ষক, বক্তা, লেখক, গবেষক, দার্শনিক, আইনজ্ঞ, সাহিত্য সমালোচক, রাজনীতি বিশ্লেষক এবং চিন্তক।

সমুদ্র উপকূলের তীরে জন্ম নেয়া অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান ছিলেন পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে চতুর্থ। তাঁর শ্রদ্ধেয় বাবা ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। কিশোর বয়সেই অধ্যাপক খান মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় চট্রগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পরবর্তীতে পড়াশুনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে।

শিক্ষকতা জীবন শুরু করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ ব্যবসা প্রশাসন ইন্সটিটিউটে (আইবিএ) পড়িয়েছেন কিছুদিন। হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট সদস্যও। এরপর আমেরিকায় অবস্থান করে নিউ ইয়র্কের দ্যা নিউ স্কুল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর গবেষণায় মনোনিবেশ করে ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং তত্ত্ব, ১৭৯৩-১৮৭৭ নিয়ে অভিসন্দর্ভ লিখে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।

এক যুগেরও বেশি সময় পরদেশে জ্ঞানার্জন শেষে নিজ দেশে ফিরে বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) অধ্যাপক হিসেবে স্থায়ী হয়েছেন। পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন ইউল্যাবে স্থাপিত সেন্টার ফর এডভান্সড থিওরির।

মহান লেখক আহমদ ছফার শিষ্য অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খানের সাধনা বাংলাদেশের জন্য বড় প্রাপ্তি। তাঁর যুক্তি নির্ভর কথা, গভীর দার্শনিক আলোচনা, বস্তুনিষ্ট উপস্থাপনা এ কালের শিক্ষার্থীদের জন্য পরম পাওয়া। ইউল্যাবে নিয়ম করে ক্লাস নেন। আর সময় পেলেই নীলক্ষেতের পুরাতন বইয়ের দোকানে নীরবে চলে যান। তাঁর ভাষায় নীলক্ষেতে তিনি গিয়ে থাকেন মূলত ‘শপিং’ করতে।

প্রতিবারের শপিং তাঁর দুই হাত ভরে দেয় বইয়ের ভান্ডারে। নীলক্ষেত ভ্রমণের প্রমাণ হিসেবে তিনি বিভিন্ন সময়ে সাথে করে নিয়ে যান কার্ল মার্কস, জ্যাক লাকান, সিগমুন্ড ফ্রয়েড, শার্ল বোদলেয়ার, ওয়াল্টার বেঞ্জামিন, মিশেল ফুকো, ফ্রানৎস ফানোঁ, লেভি স্ত্রস, এডওয়ার্ড সাইদ, তালাল আসাদ এবং অন্যান্যদের।

অন্যের বই পড়েই তিনি ক্ষান্ত থাকেননি, লিখেছেনও দুই হাতে ভরে। যে সকল বই তাঁর জনপ্রিয়তাকে
গগনচুম্বী করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘বেহাত বিপ্লব ১৯৭১’ (২০০৭), আদমবোমা (২০০৯), আহমদ ছফা সঞ্জীবনী (২০১০), স্বাধীনতা ব্যবসায় (২০১১), আল্লাহর বাদশাহি (২০১২), প্রার্থনা (২০১৯)।

সর্বক্ষণ পড়ুয়া পন্ডিত এই মানুষটি আদর্শের দিক থেকে আগাগোড়া সদালাপী, বিনয়ী এবং পরোপকারী। জ্ঞান পিপাসু যে কোন বয়সের মানুষকে তিনি কাছে টেনে নেন অবলীলায়। পুরোদস্তুর নতুন পুরাতন বইয়ের পাঠক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বাংলাদেশের জন্য এক আশ্চর্য সম্পদ। এ দেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ মনের হাজার প্রশ্নের সহজ উত্তর তিনি দিয়ে থাকেন প্রচন্ড সাহস এবং দৃঢ়তায়।

তাঁর সাধনার বীজ ক্ষেত্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং তার ইতিহাস, সামাজিক আন্দোলনের পটভূমি, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, সাহিত্য সমালোচনা, দার্শনিক পর্যালোচনা। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ আগস্ট বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে জন্ম নেয়া কৃতকর্মা এই মহান মানুষটিকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।

লেখক: প্রভাষক, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি


সর্বশেষ সংবাদ