শিক্ষকতা: ঘানি টানতে হর্ণ-হেডলাইট লাগে না

১.
আরমান পারভেজ মুরাদ, ডলি জহুর, রাইসুল ইসলাম আসাদ এবং নাজনীন হাসান চুমকীর অভিনীত কাজী মর্শেদের অসাধারণ একটি জীবনমুখী সিনেমা হলো ঘানি (The Cycle) যেখানে নিত্য অভাবে জর্জরিত গ্রামের একটি পরিবারের নিষ্ঠুর মূল্যহীন খাটুনির চিত্র অত্যন্ত মর্মস্পর্শি ও হৃদয়বিদারকভাবে ফুটে উঠেছে। অধ্যাপক মার্শাল শিক্ষাকে পুঁজি বিনিয়োগের সর্বোৎকৃষ্ট ক্ষেত্র হিসেবে চিহিৃত করেছেন বটে কিন্তু যারা শিক্ষিত সমাজ বিনির্মাণের কারিগর সেই শিক্ষকরাই যুগে যুগে পুঁজিহীন জীবন যাপন করে থাকেন।

জীবনের যে অন্ধকার আলোতে দূর হয় না, যে কালো ধুয়ে পরিষ্কার করা যায় না, সেই অন্ধকার, সেই কালো দূর হয় কেবল শিক্ষার মাধ্যমে। এমনকি কলঙ্কের কালো দাগও শিক্ষার আলোতে দূর হতে পারে। কিন্তু শিক্ষকরা পুঁজিহীন মূল্যহীন অসফল দুর্বিসহ জীবনের কলঙ্ক ঘানি টানে আজীবন। এটা দূর হবার নয়। ডায়োজিনিসের ভাষায়া— “শিক্ষা হলো গরীবের ধন, যুবকের মাধুর্য্য, বৃদ্ধের শান্তনা আর ধনীর অলঙ্কার”। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বলেন— “শিক্ষার মধ্যে এমন একটি সম্পদ থাকা চাই যা কেবল আমাদের তথ্য দেয় না, সত্য দেয়; যা কেবল ইন্ধন দেয় না অগ্নি দেয়”।

কিন্তু শিক্ষকদের জীবনে ডায়োজিনিস ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষার প্রতিফলন ঘটেনি। অথচ শিক্ষা ও শিক্ষকদের নিয়ে কিছু চটকদার কথাবার্তা কম বেশি আমরা সবাই বলি। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, শিক্ষা উন্নয়নের চাবিকাঠি, শিক্ষাই শক্তি, শিক্ষকতা মহান পেশা, শিক্ষকরা সম্মানের প্রতীক ইত্যাদি। শিক্ষা বিষয়ক আগের প্রায় সবগুলো লেখাতে আমি নিজেও একই ধরনের কথার সমাবেশ ঘটিয়েছি। কিন্তু তাতে কী? গলা ও গায়ের জোর দিয়ে যারা বুদ্ধির জোরকে ঢেকে দিতে পেরেছেন সেই প্রতাপশালী প্রশাসন ও শাসকরা এ সব আওয়াজকে বড় জোর শব্দ দূষণই মনে করেন।

আমরা দক্ষিণ এশিয়ার মানুষদের স্বভাবই হলো যেন তেন কাজেই আন্দোলন করা। একই ব্যক্তির শাস্তি চাইতেও মিছিল করি আবার মুক্তি চাইতেও করি। নিরীহ আইন হ্যাঁ/না কণ্ঠভোটের মতো শক্তিবানদের উচ্চ আওয়াজের পক্ষেই রায় দেয়। তাই আন্দোলনই আমাদের দাবি আদায়ের একমাত্র পথ। কিন্তু সকল পেশার মানুষদের আন্দোলনের পথ ও ভাষা এক নয়। পরিবহণ শ্রমিক, গার্মেন্টস শ্রমিক ও বন্দর শ্রমিকরা যেভাবে দাবি আদায় করে শিক্ষকরা তা পারে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিল্প কারখানার আন্দোলনের পথ ও ভাষা বেশ ভিন্ন। আবার ডাণ্ডা বাহিনী ও ডাক্তারদের দাবি আদায়ের ভাষাও আলাদা। ফলে শিক্ষকদের মানবিক দাবি ও অধিকার যুগ যুগ ধরে অনাদায়ী রয়ে গেছে।

২.
শিক্ষকদের প্রতি উৎস্বর্গ করা জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা জেমসের গানা— “আজকে আমার এই পৃথিবীর অনেক কিছু চেনা/ ব্ল্যাকবোর্ডের ঐ কালো আকাশ আমায় এনে দেনা/ এনে দেনা বয়সটা সেই ছয় কিংবা সাত/ হয়তো তবে ফিরে পেতাম স্যারের কোমল হাত/ সালাম জানাই সহস্রবার আমার তিনি গুরু/ তার কাছেই হয়ে ছিল শিক্ষা জীবন শুরু.....”।

অন্যত্রে শুনেছি “মাস্টারি নাকি সুখের চাকরি/ সাড়ে নয়টায় স্কুলে ঢুকি, সাড়ে পাঁচে বাড়ি ফিরি//আমরা থালা জুতার হিসাব রাখি, নির্মল অভিযানে ঘুরি/ আমার বেতন জানে লোকে..... দরাদরি করলে কৃপণ, না করলে মাস্টারের বেতন/ মাসের শেষে দিন গুলোতে, নাকের উপর জল উঠে যায়// আমার পোষাক নিয়ে ফাতোয়া জারি, টিউশনি নিয়ে হয় টিটকারি/ অট্টালিকা নাই মাস্টারের, ব্যাংক ব্যালেন্স নাই বড় গাড়ি/ গর্ব শুধু একটাই, আমরাই জাতির ভাগ্য গড়ি”।

সাননিন হানিফের ‘আমি শিক্ষক’ কবিতার ভাষায়া— “আমি শিক্ষক, আমি মর্যাদার রক্ষক/ আমি মুছে দেই শত গ্লানি, আমি কোমল করে হাসি, সমান করি পথ, যেথা বন্ধুর.....।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দুঃখ দুর্দশার কথা নিয়ে শিক্ষক মনিরুজ্জমান দুলাল একটি গান গেয়েছেন যা তিনি সকল শিক্ষকদের জন্য উৎস্বর্গ করেন। গানের কথা গুলো ছিলা— “শিক্ষক কয়ে মোরে দেওয়ানা বানাইলা/ জাতির বিবেক কয়ে মোরে পাগল বানাইলা/ অল্প পয়সায় মোদের দিয়া সকল কাম করাইলা.....। গান ও কবিতায় এভাবেই উঠে এসেছে কীভাবে শিক্ষকরা জীবন যুদ্ধের ঘানি যুগে যুগে টেনে চলেছে।

৩.
অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদ মানে ধ্বজাধারী-ধাপ্পাবাজ-চাপাবাজ মেকী-দেশপ্রেমিকের এক মূর্তরূপ। জনগণকে শোষণ করে আড়ালে দ্রুত বেড়ে ওঠার এক লোলুপ ব্যক্তি। ব্যতিক্রম আছে তবে সাধারণত পুলিশ মানে প্রবলেম মেকার। জনগণকে নির্যাতন, হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা খোসানোর যন্ত্রবিশেষ। আমলা মানে গাড়ি-বাড়ি পাবে, আরও পাবে বাবুর্চি, দারোয়ান, বডিগার্ড ও মালি। গাড়ির জ্বালানী ও বাড়ির ইউটিলিটিস বিলও পাবে। এভাবে বাহ্যত বৈধ উপায়ে অবৈধ কত রকমের ভৌতিক বিল যে আমাদের মতো নাদান শিক্ষকের কাছে পড়ে যাওয়া বিচক্ষণ আমলারা করতে পারেন তার হিসাব ক্যালকুলেটর বৈই সাধারণ পাটিগণিতে করাই অসাধ্য।

তারপরেও জনগণের ফাইল টাকা ছাড়া চলে না। দিন-রাত ঘুষ চর্চার এ এক অভিশপ্ত চাকরি (গত ৬ মে ২০১৯ তারিখের পত্রিকায় দেখেছি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আক্ষেপ করে এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন “আর কত (ঘুষ) খাবেন? সকাল বেলা পাউরুটিতো একপিচই খান)”।

একজন ডাক্তার মিনিটে মিনিটে একজন করে রোগী দেখবে, অপ্রয়োজনীয় ঔষধ, বাড়তি পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর খামখেয়ালী অপারেশন করে রোগীকে আরোও ঘায়েল করার প্রাণবন্ত অভিলাষ। এইভাবে এক এক করে সবার চরম অনৈতিক কর্মকাণ্ড রাষ্ট্র ও জনগণ অনেকটা মেনেই নিয়েছে। সমস্যা শুধু শিক্ষকদের নিয়ে। রাষ্ট্র ও জনগণের যত নিয়মনীতি আর সততা নিষ্ঠার কথা জানা আছে সব মাস্টার মশাইদের দ্বারা মানাতে হবে। এদের আশা আকাঙ্খা থাকতে নেই, স্বপ্ন উচ্চাভিলাস অমার্জনীয়, গাড়ি বাড়ি থাকাটা দৃষ্টিকটু, দামি মোবাইল, ল্যাপটপ, ৪২ ইঞ্চি এলইডি টেলিভিশন অগ্রহণযোগ্য।

তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারী স্কলারশীপের দরকার নাই, বিদেশ ভ্রমনের জন্য অফিসিয়াল পাসপোর্টের প্রয়োজন সীমালঙ্ঘন, জীবনে একবারের জন্য হলেও বিদেশ ভ্রমন বাতুল্যতামাত্র, উন্নত চিকিৎসা নিষ্প্রোয়োজন। অফিস তো দূরের কথা বসার জন্য নিজের একটা চেয়ার টেবিল পর্যন্ত থাকতে নেই। সবাইকে আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখাবে কিন্তু নিজেকে চলতে হবে ভাবহীন, প্রভাবহীন, চরম অর্থ কষ্টে নিষ্পেষিত হওয়া নিত্য দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়া পোড় খাওয়া মানুষের মূর্তরূপ নিয়ে।

৪.
জাবির ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে নবীন-বরণ ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপাচার্যদের মূল্যায়ন নিয়ে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম উষ্মা প্রকাশ করে বলেছিলেন, সব জায়গায় নিমন্ত্রণ পাই কিন্তু যেখানেই যাই বসার জায়গা খুঁজতে খুঁজতে খুব অসহায় লাগে। উপাচার্য কোথায় বসবেন তার কোনো নির্দেশনা থাকে না। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সেক্রেটারি এমনকি আর্মির বিভিন্ন র‌্যাংকের অফিসারদেরও নাম-ঠিকানা লেখা থাকে। কিন্তু উপাচার্য বসবেন সেটা কোথাও লেখা থাকে না।

আমরা সবখানেই জায়গা পাই, কিন্তু খুঁজতে খুঁজতে। যদিও এতে কিছু আসে যায় না কিন্তু বুঝতে পারি- শিক্ষা/শিক্ষক কোথায় যেন একটা নিম্নমর্যাদা পেয়ে যাচ্ছে (১৮/১২/২০১৭)। উপাচার্য যথার্থই বলেছেন। শিক্ষা তথা শিক্ষককে খাটো করার এক ঘৃণ্য তৎপরতা অনেকদিন থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশে সকল স্তরের শিক্ষকরা বেতন-ভাতা তো বটেই শ্রেণি/সম্মানেও বেশ দীর্ঘকাল যাবৎ করুণার পাত্র হয়ে একেবারে মানবেতর জীবনযাপন করে শিক্ষকতা করে আসছেন। ক্ষমতার দুর্দান্ত প্রতাপ তো আছেই সেই সাথে জনগণের টাকায় গাড়ি বাড়ির অসীম চাহিদা বিলাস-ব্যাসন আর দেশ বিদেশে প্রমোদ ভ্রমনের রঙিন আকাঙ্খা এবং আবশ্যকতা একান্তই শুধু আমলা বাবুরা গনিমতের মালের মতো গত ৪/৫ যুগ ধরে উপযোগ্য করে রেখেছেন।

৫.
যে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের আলো দেন, চিন্তা ও কর্মে উদ্দীপনা দেন, যিনি আলোকিত সফল মানুষ তৈরীর স্বপ্নবীজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রোপন করেন। নির্মোহ সত্য যে সমাজের কাছে সন্তানের কাছে স্ত্রী শালিকা-শ্যালোকের কাছে সেই শিক্ষকই কিনা পোড় খাওয়া অসফল ব্যক্তির মোক্ষম উদাহরণ। পরিবারের চাহিদা যখন প্রশাসনে চাকরি করা মানুষের মতো সানন্দে চালানো যায় না কিংবা প্রতিদিন বেতন (ঘুষ) খাওয়া পুলিশের বউয়ের মতো বেপরোয়া কেনা-কাটার ভাব দেখানো যায় না তখন স্ত্রী সন্তানের সব প্রশ্ন শুধু নীতি কথা দিয়ে মিটানো দায়। তবুও জীবনের ঘানি তাকে টানতেই হবে। উর্দিতে ১৭টি পকেট থাকলে বুঝতে হবে উনি চৌকিদার। উর্দি দেখেই পুলিশ, র‌্যাব, আর্মি আর বিজিবি চেনা যায়।

তৈলময় স্যারগিরি ও মাত্রাতিরিক্ত দাপট-প্রভাব দেখলে জানতে হবে সে আর কেউ নন, তিনি বিসিএস প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষক চেনার উপায় কী? নিত্য অভাব তার পরিচিতি, শর্করা-আমিষহীন হাড় জিরজির শরীর তার রূপ, অক্ষমতা ও মুখাপেক্ষীতাই তার নিয়তি। সমাজ ও রাষ্ট্র তাই চায়! কারণ সে যে শিক্ষক। সাচ্ছন্দে চলা ও থাকা তার জন্য বড্ড বেমানান। স্বচ্ছল জীবনের ছোঁয়া তার পরিবারে লাগতে নেই। ভাগ্যের জোরেই হোক আর মামার জোরেই হোক যে সরকারী অফিসার তার ভোগ বিলাস আর বিনোদনের জন্য বেপরোয়াভাবে সব থাকবে।

এমনকি তার কেরানি ড্রাইভার ও পিয়নেরও আলিসান আয়েশি দাপুটে জীবনযাপন থাকবে। হায়দার হোসেনের গানের ভাষায়া— “আমি সরকারী অফিসার, আমি এ কালের জমিদার, আমাকে ছাড়া চালাবে এ দেশ সাধ্য কার বাবার?” এই গানই জানিয়ে দিয়েছে সরকারী অফিসারদের চারিত্রিক মাধুর্যতা। নচিকেতার কন্ঠেও শুনেছি ডাক্তার বাবুরা কত বড় মাপের সেবক ও দেশপ্রেমিক। আর সেবার ব্রত নিয়ে যিনি আজ শিক্ষক, সবাইকে চাকচিক্য জীবন চিনাতেই তাকে জীর্ণশীর্ণ ক্লান্ত পুষ্টিহীন শরীর নিয়ে মাস্টারির ঘানি টানতে হবে।

তাইতো শেখ সেলিমের মতো অভিজ্ঞ সাংসদ/মন্ত্রীর মুখে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপককে নিয়ে উচ্চারিত হয়েছো— “একজন শিক্ষকের এত গাড়ি-বাড়ি থাকার কথা নয়”। সাবেক একজন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীও নাকি শিক্ষকদেরা— “মফিজ” বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছিলেন। ১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর প্যারিসে ইউনেসকো ও আইএলও-র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে শিক্ষকদের জন্য যে সনদ ঘোষণা করা হয় তাতে বলা হয়েছিলা— “শিক্ষকেরা সব কর্মকাণ্ডের কারিগর, জাতি গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা তাঁদেরই। আগামী দিনের মর্যাদা ও উপযুক্ত নাগরিক তাঁরাই তৈরী করেন। এই শিক্ষকদের মর্যাদার ক্ষেত্রে যেন কোনো ত্রুটি না ঘটে, রাষ্ট্রকে তা দেখতে হবে”। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমাদের রাষ্ট্রে সেই দায়বোধ এখনো জাগ্রত হয়নি। ফলে শিক্ষকরা হর্ণ-হেডলাইট ছাড়াই শিক্ষকতার ঘানি নিরবে নিভৃতে টেনেই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিচ্ছে দেশকে!

৬.
বঙ্কিমচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় তাঁর ভারত কলঙ্কে লিখেছেনা— “হরি নিতান্ত ভাল মানুষ। অর্থ-হরি নিতান্ত অপদার্থ”। একইভাবে তিনি একজন শিক্ষক মানে তিনি একজন অতিশয় দরিদ্র লোক। সেই চিত্রই ফুটে উঠেছে লুৎফর রহমান রিটন নামের এক স্কুল শিক্ষকের কবিতায় যা ২৮ মে, ২০১২ তারিখে প্রথম আলো পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। মূলত সেই বছর এপ্রিলের শেষ দিকে শিক্ষকরা কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে ঢাকায় জমায়েত হলে নির্মম পুলিশি তাণ্ডবে আজিজুর রহমান নামের একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক নিহত হন।

লুৎফর রহমান রিটন স্যারের লেখাা— “শিক্ষকের স্মারকলিপি” কবিতার খণ্ডিত অংশ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরতে চাই যেখানে শিক্ষকতার ঘানি কিঞ্চিত প্রকাশ পেয়েছে।

শিখিয়েছি গুরুজনে চিরকাল দিতে সম্মান/ শিখিয়েছি মানবতা নম্রতা মমতার গান।
মানবজন্ম বৃথা যদি তার নাহি থাকে দান/ শিখিয়েছি দেশ-মাটি-মানুষের কিসে কল্যাণ।
দারিদ্র্য আমাদের চেহারায় এঁকে দেয় ছাপ/ পেশাটা মহান তবে এ পেশায় আসাটাও পাপ!
তাই তো পাপের বোঝা আমাদের কাঁধে চেপে থাকে/ নীতি আর আদর্শ আমাদের অনাহারে রাখে।
আমাদের পোশাকেও দারিদ্র্য উঁকি দিয়ে যায়/ ছেঁড়া জুতো-স্যান্ডেলে দারিদ্র্য চেপে রাখা দায়!
স্মার্ট নই, বোকাসোকা, ভীতু খুব, শক্তিও কম/ চিৎকার করব যে সে সাহসও নাই একদম।
চুপচাপ বেঁচে থাকি, চাওয়া-পাওয়া খুব বেশি নাই/ মানুষ গড়ার কাজ, মাস শেষে সামান্য পাই।
অভাবের দৈত্যটা আমাদের পেটে মারে ঘাঁই/ কেউ খোঁজ নেয় না তো তিন বেলা খাই কি না খাই!
এক বেলা খেতে পাই! উপোসের আছে অভ্যেস/ মানুষের ভালো হোক ভালো থাক এই প্রিয় দেশ।
সামান্য শিক্ষক কম দামি খাটো হওয়া লাগে/ সবার খাওয়ার পরে ছিটেফোঁটা আমাদের ভাগে!
যুগে যুগে কালে কালে আমরাই অভাবের বলি/ ভাবলাম আর কত! এইবার কিছু কথা বলি।
অআকখ চিনিয়েছি এবিসিডি শিখিয়েছি যাঁরা/ অবজ্ঞা অবহেলা অনাদর কেন পাবে তাঁরা!
বিনিময়ে কেন তাঁরা টেনে যাবে অভাবের ঘানি?/ জবাব দেবে না কেউ জ্ঞানী আর সুশীলেরা জানি!

লেখক-
ড. আহমেদ ইমতিয়াজ
অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ