ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা কার?

  © ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার? কে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক?

কয়েকদিন আগে টিএসসিতে কর্মকর্তাদের সাথে শিক্ষার্থীদের ঝামেলা হয়। কর্মকর্তাদের সংগঠনের নেতারা ডাকসু সাংস্কৃতিক সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন।

কত্ত বড় দুঃসাহস!!!

এই চিঠির রাজনৈতিক অর্থনীতি বুঝতে হবে। ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের একজন পরিচিত নেতা। মনে করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতার দাপট কেবল সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের। কারণ তারা হলগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। তাই হলের সভাপতি/সম্পাদক মানেও দাপুটে ছাত্রনেতা।

সাংস্কৃতিক সম্পাদকও একটি হলের ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন। ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ তিনি। এরপর তিনি ডাকসুর নেতা। তিনি টিএসসিতে, যেটার নাম ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে গিয়ে প্রবল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন।

হয়ত তিনি উৎরে গেছেন তার পরিচিতি, পরিচয় ও বলয় দিয়ে। দুঃসাহস দেখানো কর্মকর্তারা কোন স্পর্ধায় তার বিরুদ্ধে এই তৎপরতা চালিয়েছিল?

যেখানে ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক, সরকার দলীয় একজন দাপুটে ছাত্রনেতা শিক্ষার্থীদের অধিকারের জায়গায় কথা বলতে গিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন, সেখানে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী এদের সামনে কী রকম থাকে, সেটা কি কল্পনা করতে পারেন?

বরুণকে কেন রাতের বেলা ডাব পাড়তে গিয়ে মরতে হয়? কারণ সে নিজেও মনে করেছে, এই ডাব তার নয় বা এই ডাবে তার অধিকার নেই। দিনে পাড়লে লোকে দেখবে, লজ্জা হবে তাতে। বা দিনে পাড়তে গেলে সফল হওয়া যাবে না। তদুপরি ডাবগুলোর গায়েও আবার ‘ছাত্র-শিক্ষক ডাব’ লেখা নাই।

এই ডাব বা ফল শিক্ষার্থীরা খেতে পারবে না, এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের-আমার ধারণা, এমন যুক্তি অনেকেই শুনে থাকবেন। এটাও জেনে থাকবেন, এই ডাব বা নানা রকম ফল আসলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা খায়। সেখানে বরুণদের ভাগ নেই। কারণ তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানায় নেই।

তারা মালিকানায় নেই বলেই এমনকি ক্লাসরুমেও তাদেরকে খোঁটা শুনতে হয়, ‘কয় টাকায় এখানে পড়ো?’

তখন বরুণদের মুখে দুয়েকটি যুক্তি বের হতে চাইলেও তারা চুপসে যায়।

যেহেতু পড়তে এসেই মহাভাগ্যের কাজ হয়ে গেছে, তাই তারা গবেষণার অর্থ পেতে পারে না। নিজেদেরকে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মত প্রস্তুত করার সুযোগ পেতে পারে না।

ডাবের উপর বরুণের মালিকানা না থাকায় সে কাজটি রাতে করতে গেছে। হয়ত এই কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। এটা নিয়ে অনেকে শোক প্রকাশও করছেন। কিন্তু মূল প্রশ্ন এড়িয়ে গেলে কি হবে বন্ধু?

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর মালিকানা না থাকায় এখানে হাজার হাজার গবেষকের মৃত্যু হচ্ছে না? অসংখ্য অগণিত বোস-আইনস্টাইন তত্ত্বের জন্ম আটকে যাচ্ছে না?

এখন ‘ভালো’ বরুণরা কী করবে? তাদের গ্রামের জীবন-অভ্যাস ভুলে যাবে, গাছে ওঠাও তারা ভুলে যাবে। এরপর চাকরির খোঁজে বছরের পর বছর ঘুরবে, অথবা ভাগ্যবান হলে বিসিএস ক্যাডার হয়ে অহঙ্কার করবে (বিসিএস ক্যাডার হয়ে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, তাদেরকে বাদ দিচ্ছি। কেবল কেবল ক্যাডার হওয়াটা কী করে অহঙ্কারের বিষয় হয়?)।

এই আমাদের একমাত্র নিয়তি। এটাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের বিশ্ব দেখার চিত্র।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী


সর্বশেষ সংবাদ