১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন

এনটিআরসিএ’র আয় কত কোটি?

  © ফাইল ফটো

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ওয়েবসাইটে গত ২৮ মে থেকে ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা ২০১৯-এর অনলাইন আবেদন শুরু হয়। নিবন্ধনের জন্য বুধবার ছিল আবেদনের শেষ দিন। এই পরীক্ষায় প্রার্থীদেরকে প্রথম ধাপে প্রিলিমিনারি টেস্ট, প্রিলিমিনারি টেস্টে উত্তীর্ণদের দ্বিতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। শেষ ধাপে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে,  ১৬তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ১০ লাখ ৩৫ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। যদিও এসব প্রার্থীদের সবাই এখনো আবেদন ফি জমা দেননি। ফি জমা দেয়ার উপরই নির্ভর করে আবেদন সংখ্যা কত হবে? তবে এই সংখ্যা কিছু কমতে পারে বলে মত দিয়েছেন এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা। আগামী ২২ জুন পর্যন্ত আবেদন ফি জমা দিতে পারবেন প্রার্থীরা। এক কর্মকর্তা জানান, সবশেষ ১০ লাখের মত প্রার্থীর আবেদন টিকবে বলে তাদের ধারণা। তবে সঠিক তথ্য বলা যাচ্ছে না।

বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার আবেদনের নির্ধারিত ফি ছিল ৩৫০ টাকা। সে হিসেবে ১০ লাখ ৩৫ হাজার প্রার্থীর বিপরীতে ৩৬ কোটির বেশি টাকা জমা পড়ছে এনটিআরসিএ’র কোষাগারে। তবে যেহেতু আবেদনের সংখ্যা কিছু কমবে, তাই এই অঙ্ক আরেকটি কম তথা ৩৫ কোটিতে দাঁড়াতে পারে।

এনটিআরসিএ’র এই বাণিজ্য শুধু যে আবেদনকে ঘিরে ৩৫কোটি টাকা তা নয়, পরীক্ষায় টেকার পরও রয়েছে আরেকটি আয়ের পথ । সূত্রমতে, এর আগে দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শূন্য পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে সম্প্রতি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে (এনটিআরসিএ)। বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগপ্রত্যাশীদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি করে আবেদনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি আবেদনের বিপরীতে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮০ টাকা। এর ফলে চাকরির আবেদন করতেই লাখ টাকা ব্যয়ের ফাঁদে পড়ে নিয়োগপ্রত্যাশীরা।

অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, আগের ওই নিবন্ধনে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে ৫ লাখ প্রার্থীর বেশি আবেদন করেছিলেন। শিক্ষার্থীদের হিসাব, আবেদনকারীর প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থী অন্তত ৫টি করে আবেদন করেছেন। ১০, ১৫ এমনকি ৩০টি পর্যন্ত আবেদন করেছেন, খোঁজ নিয়ে এমন প্রার্থীও পাওয়া গিয়েছিল। অর্থাৎ সর্বনিম্ন ৫টি ধরলেও জনপ্রতি ৯০০টাকা হিসেবে ৫ লাখ আবেদনকারীর কাছ থেকে ৪৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এনটিআরসিএস। যদিও বাস্তবে টাকার এই পরিমাণ আরো বেশি বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।

বিষয়টিকে মিজানুল হক নামের এক নিয়োগ প্রত্যাশী এভাবে ব্যাখ্যা করেন— ‘মনে করেন আমিনুল হক নামের একজন একটি কলেজের সমাজবিজ্ঞানের জন্য আবেদন করেছেন। তার আবেদন করা কলেজে মেধা তালিকায় এগিয়ে থাকা আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি থাকায় আমিনুল নিয়োগ পাবেন না। অথচ আমিনুলের তুলনায় মেধা তালিকায় পিছিয়ে থেকেও তার বন্ধু রিয়াজ হোসাইন অন্য একটি কলেজে আবেদন করে নিয়োগ পেয়ে যাবে। কারণ ওই কলেজে আবেদনকারীদের মধ্যে রিয়াজের অবস্থান মেধা তালিকায় এগিয়ে ছিল। অর্থাৎ কেউ দশটি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেও নিয়োগ পাবে। আবার অন্য একজন এক হাজার কলেজে আবেদন করেও নিয়োগ পাবেন না।’

জানা গেছে, আগামী ৩০ আগস্ট শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত স্কুল ও স্কুল পর্যায়-২ এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এবং বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত কলেজ পর্যায়ের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ওয়েবসাইটে আপলোড করে দেয়া হবে এবং এসএমএস পাঠিয়ে প্রার্থীদের এ বিষয়ে জানানো হবে। প্রবেশপত্রে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ভেন্যু ও তারিখ উল্লেখ থাকবে।  এছাড়া আগামী ১৫ ও ১৬ নভেম্বর শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১৫ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্কুল পর্যায় ও স্কুল পর্যায়-২ এর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ নভেম্বর কলেজ পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

সূত্রের তথ্য, প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নির্ধারিত সময় ও স্থান প্রার্থীদের এসএমএস করে জানিয়ে দেয়া হবে। প্রার্থীদের ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস ৪০ বলে গণ্য হবে। পরীক্ষায় মোট ১০০ নম্বর থাকবে। প্রতি শুদ্ধ উত্তরের জন্য এক নম্বর দেয়া হবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য প্রাপ্ত মোট নম্বর হতে শূন্য দশমিক ৫০ নম্বর কাটা হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর লিখিত পরীক্ষা হবে। উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হবে। এরপর ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।

এর আগে গত ১৯ মে ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১ লাখ ৫২ হাজার পরীক্ষার্থী। মোট ৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩৩ জনের মধ্যে ৮০ শতাংশ পরীক্ষার্থীই অকৃতকার্য হয়েছেন। পাসের হার ২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। মোট পরীক্ষার্থীর প্রায় ৮০ শতাংশ ফেল করেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ