অন্যরকম ঈদ!

সামিন ইয়াসার আজহা
সামিন ইয়াসার আজহা

ঈদ শব্দটা শুনলেই মনের ভেতর খুশির বাজনারা সুর তোলে। আত্মীয়-অনাত্মীয়, ধনী-গরীব, উচু-নিচু সকলেই ভেদাভেদ ভুলে আনন্দে মেতে উঠে। তবে এবারের ঈদ উচ্ছ্বাসার পিছু নিয়েছে বেদনারাও। বিশ্বব্যাপী মহামারীর প্রতাপের পাশাপাশি নদীমাতৃক এ দেশে আরেক দুর্ভোগের বোঝা হয়ে এসেছে বন্যা। দেশেরে অনেক নিম্নাঞ্চলই এখন পানির নিচে। প্রবাহমান পানি ধুয়ে মুছে নিয়ে গেছে বহু মানুষের বুনা স্বপ্ন। আর এমন এক সময়ে অন্যরকম ঈদের আগমন জনপদে।

মানুষ আজ গৃহবন্দী খাঁচায় আটকে থাকা পাখির মতো সময় পার করছে। বছরে দুই ঈদের মধ্যে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের উৎসাহ প্রায় অনেকটাই বেশি। কারণ এতে জড়িয়ে আছে আত্মার পরিশুদ্ধি কোরবানি। তবে এবার এমনটা হবে না প্রায় ভেবেই নিয়েছে প্রত্যেকে। করোনার প্রখর আগুনের সাথে বহুদিন ধরে যুদ্ধে লিপ্ত আছে পুরো বিশ্ব। এখন শুধু করোনাই নয়, এর সাথে মিলিত হয়েছে ধ্বংসাত্মক বন্যা। যা নাশ করেছে দেশের বহু সহায়সম্পদ। ডুবে যাচ্ছে ঘর-বসতি সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও! এ যেন এক অভিশপ্ত বছর! এমন অদৃশ্য যুদ্ধে লিপ্ত থেকে-থেকে পুরো বিশ্ব শ্রান্ত প্রায়। এমন বছর আগামী হাজার বছরেও না আসুক ঠিক এমনটাই সবার কামনা। 

জানা গেছে, করোনার কারণে তিনমাস যাবৎ অর্থনৈতিকভাবে বিপদে থাকা মানুষ এখন দীর্ঘকালীন বন্যার কবলে। বন্যার পরিস্থিতি খুব দ্রুত অবনতির পথে অগ্রসর হচ্ছে। এটাও জানা গেছে, ২১ জেলায় ৩০ লাখের বেশি মানুষ এখন বন্যায় আটকে পড়ে আছে। আগষ্ট পর্যন্ত এই বন্যার পানি থাকবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেছেন। আর এর মাঝে এলো সুখ ভাগাভাগি করা ঈদ আনন্দ। অন্যদিকে, করোনা থেকে রক্ষা পেতে অধিকাংশ মানুষ গরুর হাটে না গিয়ে অনলাইনের  মাধ্যমে ফার্ম অথবা এগ্রো গরু ক্রয় করছেন। ফলে সাধারণ বিক্রেতাদের ভাগ্য বিপদের পথে চলে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন সাধারণ পশু বিক্রেতারা। গরু বিক্রেতারা গরু বিক্রি করলেও লাভের হিসাব অনেকটা জটিল। এমনকি, হাটে ক্রেতার সংখ্যাও তুলনামূলক স্বল্প। যার কারণে গরু বিক্রেতাদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।

এছাড়া কোরবানি দেয়ার সামর্থ্যও হারিয়েছেন অনেকে। ফলে ক্রেতার সংখ্যা কম। এতে বিক্রেতারাই শুধুমাত্র চিন্তিত হচ্ছে না সাথে হতাশ হচ্ছেন ক্রেতারাও। হাটের আনন্দ থেকে নিজের অনিচ্ছায় বঞ্চিত হতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সাথে রয়েছে করোনাভাইরাসের মত নিত্যনৈমিত্তিক আতঙ্ক।

এ বেলায় আমাদের জীবন হয়ে উঠেছে মাটির নিচে থাকা গাছের দুর্গম শিকড়ের মতো, যা মাটির মতো আমাদের ঘিরে রেখেছে। এক অদৃশ্য যুদ্ধে লিপ্ত গোটা দেশটা। যেখানে, সকলের মুখে এবং অন্তরে এক প্রশ্নেরই ঝড় তোলে ‘কবে সমাপ্ত হবে এই সমর?’। তবুও এই খুশির লগ্নে সকলের মন সমস্বরে বলে উঠুক ‘ঈদ মোবারক’।

লেখক: শিক্ষার্থী, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ