দুঃস্বপ্নের মাঝপথে কোরবানির ঈদ

মো. জহির উদ্দিন
মো. জহির উদ্দিন

১ জানুয়ারি রাতে, ২০২০ সালকে সারাবিশ্ব স্বাগত জানিয়েছিল সঙ্গীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, দিগ্বিদিক আলোর ছোটাছুটি, রঙ বেরঙের ফানুস এবং তাবৎ কম্পমান বিনোদনের মাধ্যমে উদযাপন করে। অতীতের ভয়, ভুল, হতাশা, ঝড়-ঝঞ্চা পিছনে ফেলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় নতুন আশার বসতি নিয়ে অনেকেই ছক আঁকে নতুন বছরের কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে। চীনের উহানে যখন করোনা ভাইরাস প্রথম আঘাত হানে তখন পুরো পৃথিবী ঘুমন্ত ছিল এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাসের ধ্বংসলীলা নিয়ে এবং ঘুম থেকে উঠেই যেন দেখতে পেল করোনা ভাইরাসের দুঃস্বপ্নের বাস্তবতা। কে জানত ২০২০ সাল হতে চলেছে অধিকাংশ মানুষের জন্য দুঃস্বপ্নময় একটি বছর।

শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হতে চলেছে এক বছরের জন্য, সংস্কৃতি নতুন রুপ নিতে চলেছে এবং সভ্যতার সংশোধিত সংকরনও হয়ত দেখব। অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে মন্থর গতিতে, প্রত্যেক রাষ্ট্রই ২০২০ সালের জন্য নির্ধারিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যর্থ হবে এটা বিশ্লেষকরা মনে করছে। করোনার এই আঘাত থেকে বের হয়ে আগামী কত বছের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে এই নিয়ে এখনো স্পষ্ট তথ্য, উপাত্ত সম্প্রসারিত হয়নি। অনেকেই নিজের মনগড়া অথবা অনুমান করে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করছে।

লক্ষণীয় যে করোনায় রাজনৈতিক কাঁদা ছোড়াছোড়ি কিছু দিনের জন্য বন্ধ হয়েছে, জঙ্গিদের তৎপরতা নিয়ে আগের মত সংবাদ দেখা যাচ্ছেনা, খেলাধুলার মত কম্পমান বিনোদনগুলো অনেকটাই যেন পিছনের সারির সংবাদ। এখন বেরিয়ে আসছে রাষ্ট্রযন্ত্রের খামখেয়ালীপনাগুলো, বিবেক বর্জিত কিছু মানুষের টাকার পাহাড় বানানোর অসুস্থ প্রতিযোগিতা, বিশ্বনেতাদের অদূরদর্শিতা এবং ভোগবাদী সমাজের ভয়াল কালচিত্র। এ যেন সমন্বয়হীন ভাঙ্গাচোরা বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে। 

এরই মাঝে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে মাঠে লড়ছেন ডাক্তার, পুলিশ, জনপ্রশাসন, সাংবাদিক, এনজিও, সমাজকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকারা। অন্যদিকে, করোনার ওষধ এবং টিকা আবিষ্কারের জন্য নিঃশব্দে কাজ করে যাচ্ছেন গবেষকরা; এর জন্য সারা বিশ্ব প্রায় কয়েক হাজার দল কাজ করছেন নিরলসভাবে।

এই দুঃস্বপ্নের মাঝ পথেই হাজির হল, মুসলিম উম্মাহর ২য় আনন্দের দিন ঈদল-উল-আযহা। চিরাচরিত নিয়মের মত এই ঈদল-উল-আযহাতে কোরবানি, বাহারি রকমের খাবার, নতুন জামা, ঈদের জামাত, সালামি, দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো, হই-হুল্লোর এবং উৎসবে মাতামাতিপূর্ণ দিন হবেনা এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়।

সম্মুখ যুদ্ধাদের অনেকেই আপনজনদের কাছ থেকে দূরে থেকে এই নিরানন্দ একাকী ঈদ কাটাবে অথবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিঃসঙ্গভাবে। বাতাসের চঞ্চলতা আগেরমত নেই, প্রকৃতি যেন নিজের গতিপথ হারিয়ে অনেকটা গম্ভীর হয়ে গিয়েছে। বিশ্বের প্রায় ২৪.১% মানুষ তথা ১৮০ মিলিয়ন মুসলিম উম্মাহ একই বছরে দুই ঈদ নিরানন্দভাবে উদযাপন করতে যাচ্ছে, এই রকম হদিস ইতঃপূর্বে আর কখনো সৃষ্টি হয়নি।

যারা একাই কোরবানি দিত কিংবা কয়েকটা গোরো কোরবানি দিত এখন হয়ত শেয়ারে কোরবানি দিচ্ছে অথবা অনেকেই হয়ত কোরবানি দিবেনা। তবে এরই মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সর্বোচ্চ সচেতনতা অবলম্বন করা। এই অস্বাভাবিক সময়ে কোরবানির স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে হিতে বিপরীত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা একান্ত জরুরি। একজনের অসচেতনতা অনেকের জন্য ডেকে আনতে পারে ভয়াবহতা।

দুঃস্বপ্নের  শেষে প্রকৃতি যদি ক্ষমা করে, তবে আবার মিলেমিশে উদযাপন করা যাবে ঈদ। সবার জন্য রইল ঈদের শুভেচ্ছা।

লেখক: গবেষক এবং টিম লিডার  ইচ্ছেঘুড়ি ফাউন্ডেশন