রাজনীতিবিদরা কে কোথায় ঈদ করছেন

প্রাণঘাতী করোনার কারণে মানুষের যে ঘরবন্দি দশা, তার প্রভাব রয়েছে রাজনীতিবিদদের মধ্যেও; গ্রামের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতের বড় বড় উপলক্ষ কোরবানির ঈদেও অধিকাংশকেই ঢাকায় কাটাতে হচ্ছে।

সব রাজনৈতিক দলের অধিকাংশ নেতাই ঈদে সাধারণত নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় থাকেন। তারা গ্রামে গেলে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা খু্শি হন। কারণ তারা নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান, সুখ-দুঃখের কথা বলতে পারেন। নেতারাও কর্মীদের খোঁজ-খবর নেওয়ার সুযোগ পান।

এবার অতি সংক্রামক করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সামাজিক দূরত্বের বিধি মানতে দুই মাস আগে রোজার ঈদে জনতার কাছ থেকে নেতাদের দূরে থাকতে হয়েছে। এখন কোরবানির ঈদেও সেই একই অবস্থা চলছে।

তবে মোবাইল ও ইন্টারনেটে ভিডিওকলে কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তারা। অধিকাংশ নেতা শুভেচ্ছা জানিয়ে কর্মী-সমর্থকদের কাছে এসএমএস বার্তাও পাঠিয়েছেন।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঈদে ঢাকায়ই থাকছেন। গত বছর কোরবানির ঈদে তারা নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে ছিলেন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে তারা গ্রামে যেতে পারছেন না। গ্রামে গেলেই নেতা-কর্মীরা সমবেত হবেন, সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে না। এতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাজেদা চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকায় ঈদ করছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ পরিবারের সঙ্গে কানাডায় আছেন, সেখানেই ঈদ করছেন তিনি।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারম্যান খালেদা জিয়া মহামারীর কারণে সাজা স্থগিত হয়ে মুক্ত থাকায় গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় দিনযাপন করছেন। সেখানে শুধু তার বোন সেলিমা ইসলাম ও ভাই শামীম এস্কান্দারসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্যের প্রবেশের অনুমতি আছে।

রোজার ঈদের মতো কোরবানির ঈদও খালেদা জিয়া তার পরিবারের কয়েকজনকে নিয়েই কাটাবেন বলে জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহুমদ টুকুও ঢাকায় ঈদ করছেন।

ঈদের নামাজ শেষে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামে ঈদ উদযাপন করবেন।

দলের ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে মো. শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ অনেকে ঢাকায় আছেন। করোনাভাইরাসের প্রকোপের পর দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু নিজের নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীতে রয়েছেন, ঈদও তিনি সেখানে করবেন।

জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ অসুস্থ। গুলশানের ‘কমান্ড হাউজ’র বাড়িতে আছেন। ঈদ তার কাটবে এই বাড়িতে। পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ঈদের দিন লালমনিরহাটে থাকবেন। 

অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারও ঢাকায় ঈদ করছেন।

প্রতিবছর এ সময়ে সৌদি আরবে থাকলেও এলডিপির সভাপতি অলি আহমেদ করোনাভাইরাসের কারণে এবার যেতে পারেননি। তিনিও ঢাকায় থাকছেন।