ঈদ নেই ওদের, চাকরি হলেই বাড়ি ফিরবে

রাজধানীর আজিমপুর সরকারি কোয়ার্টারের এক কর্মকর্তার বাসার একটি কক্ষে থাকেন চার বন্ধু। সকলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রাক্তন ছাত্র। মাস্টার্স শেষ হয়েছে তিন বছরের বেশি সময় আগে। এর মধ্যে একজন চাকরি করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে। বাকি তিনজন বেকার। চাকরি জোটেনি এখনও। চারজনের কেউই এবারের ঈদে বাড়ি যাননি।

ব্যাংকে কর্মরত সিফাত বাড়ি যাননি তার বর্তমান ক্যাশের চাকরিতে অসন্তুষ্টির কারণে। পণ করেছেন, বিসিএস কিংবা প্রথম শ্রেণির জব না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি যাবেন না। অন্য তিনজন- আব্দুর রহিম, পারভেজ এবং সরোয়ার চাকরি না থাকার লজ্জায় বাড়ি যান না। তারা বলছেন, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করার পরও কাঙ্ক্ষিত চাকরি না পাওয়ায় একদিকে তারা হতাশ আর অন্যদিকে পরিবারও হতাশ।

গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার লোকজনও নিয়মিত জিজ্ঞাসা করেন- কী চাকরি করেন? সরকারি চাকরি হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে এক ধরণের হতাশা, অস্বস্তি ও গ্লানি বোধ করেন তারা। সেই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে ও পরিবারের জন্য ‘কিছু একটা’ করতে না পারার গ্লানি থেকে বাড়ি যাননি তারা।

রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা-শহরের হোস্টেল-মেসে এমন তরুণদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। চাকরি না থাকায় কিংবা ভালো বেতনের চাকরি না হওয়ায় যারা এখন ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বাড়িতে যেতে পারেন না। অথচ তারা চাকরি খুঁজছেন স্নাতক পাস করার পর থেকেই। অন্য সবাই যখন ঈদ উৎসবে মেতে উঠতে গ্রামের বাড়ির পথে থাকেন তখন তারা ব্যতিব্যস্ত থাকেন নিজেদের লুকিয়ে রাখতে এবং চাকরিকেন্দ্রিক বইয়ের পাতায় মুখ গোঁজাতে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। এরমধ্যে শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত বেকার ২৩ লাখ ৭৭ হাজার। আর অশিক্ষিত বেকার তিন লাখ। বেকারদের মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস। উচ্চশিক্ষা শেষ করা বেকারের সংখ্যা চার লাখ পাঁচ হাজার। যদিও বাস্তবে এ সংখ্যা আরো বেশি বলে মত অনেকের।

ঈদ উৎসবে শামিল না হওয়া এমন আরেকটি তরুণ দলের খোঁজ মেলে রাজধানীর শেওড়া পাড়ায়। ওই এলাকার একটি তিন কক্ষের ফ্ল্যাটে থাকেন আট তরুণ। এদের মধ্যে একজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করেছেন তিন বছর আগে। চারজন দুইটি পৃথক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। তিনজন তিতুমীর সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। আটজনের মধ্যে দুইজন স্বল্প বেতনের চাকরি করেন। তিনজন করেন টিউশনি, তবে করোনাকালে তা বন্ধ রয়েছে। তাই গ্রামের বাড়ি থেকে পাঠানো টাকার ওপর নির্ভরশীল তারা সবাই।

এদের মধ্যে একজন জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চাকরিহীন একজন তরুণ সবার চোখেই এমনকি নিজের চোখেও অবহেলা ও অশ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু যে শিক্ষাব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থান ব্যবস্থাপনার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা কেউ পরিবর্তন করতে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করছে না। ক্লাসের পড়াশোনা চাকরি পেতে কোনো ভূমিকাই রাখছে না। চাকরির জন্য অনুসরণ করতে হয় ভিন্ন সিলেবাস। তাই হয় আমাদের পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করতে হবে নয় চাকরিতে নিয়োগের শর্ত বা পরীক্ষা নিয়ম-ধরণ পরিবর্তন করতে হবে। নীতিহীনতা ও অব্যবস্থপনার শিকার কোটি কর্মক্ষম তরুণ। এতে পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশও।

ঠিক কতজন তরুণ বেকারত্বের কারণে ঈদ উৎসবে শামিল হতে বাড়ি যাননি তার সঠিক সংখ্যা-হিসাব জানা যায়নি। তবে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, জগন্নাথ, বাংলাদেশ কৃষি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, এআইইউবি, ড্যাফোডিলসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের প্রতিনিধিরা জানান, সব ক্যাম্পাস থেকেই পাস করা এমন প্রাক্তন শিক্ষার্থী রয়েছেন যারা ঈদ উৎসবে অংশ নিচ্ছেন না। (সংশ্লিষ্টদের সম্মান রক্ষায় ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে)