১০৫ জেলায় নতুন কমিটি দিতে পারেনি ছাত্রলীগ, মেয়াদ শেষ কেন্দ্রের!

২৯তম জাতীয় সম্মেলনের পর ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম রাব্বানীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে পূর্ণাঙ্গ মেয়াদে শেষের আগেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ওই দুই নেতা। তাদের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান আল নাহিয়ান খান জয়। আর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান লেখক ভট্টাচার্য।

তিন মাস ভারপ্রাপ্ত থাকার পর ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পূর্ণাঙ্গ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের সেই কেন্দ্রীয় কমিটির দুই বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে ১০৫টি জেলা ইউনিটে নতুন কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন এই দুই নেতা। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে ইউনিটগুলো।

এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পর ১৪ মাস পেরিয়ে গেলেও দায়িত্ব বুঝে পাননি নেতারা। এভাবে সংগঠনটির কার্যক্রম বিশৃঙ্খলভাবে চলায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব পর্যায়ে। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক জেলা রয়েছে মোট ১১১টি।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ দুই বছর, আর জেলা ইউনিটের মেয়াদ এক বছর। সে হিসাবে শোভন-রাব্বানীর কমিটি এক বছর দুই মাস দায়িত্ব পালন করে। এই ১৪ মাসে তারা ছাত্রলীগের মাত্র দুটি জেলায় কমিটি দিতে পেরেছেন। পরে জয়-লেখক কমিটি অবশিষ্ট কয়েক মাসে গুরুত্ব বিবেচনা করে ইউনিটগুলোর নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসার কথা বলেছিলেন।

কিন্তু ছয় মাসে মাত্র চারটি জেলা কমিটি দিতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে বাকি ১০৫টি জেলা কমিটি চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায়। ফলে তৃণমূলে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ২০১৯ সালে শোভন-রাব্বানী দায়িত্বে থাকাকালেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের কমিটি ভেঙে সম্মেলন করা হয়। কিন্তু এরপর আর দেয়া হয়নি কমিটি। শাখাগুলোর কমিটি নিয়ে নতুন তৎপরতাও দেখা যায়নি।

এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল শাখার কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও এখনও দেয়া হয়নি হল কমিটি। ফলে এ কমিটির অবস্থাও নড়বড়ে। শাখার ১৮টি হল কমিটি দিতে পারেনি শাখা সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে ইউনিটগুলো।

এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ দেয়া হয়েছে ১৪ মাস আগে। কিন্তু এখনও নেতাদের সে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। ফলে বিশৃঙ্খলভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আরিফ হোসাইন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমরা যারা পদ পেয়েছিলাম তাদের প্রত্যেকেরই বিশেষ পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এখনও দায়িত্ব বুঝে পাইনি।’

১০৫টি জেলা কমিটি না হওয়ার বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘এটা আমাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। সেজন্য বাকি জেলাগুলোর কমিটি দেইনি।’ আর দায়িত্ব বন্টনের বিষয়ে বলেন, দায়িত্ব বণ্টনের কাজ সম্পন্ন করেছিলাম। কিন্তু লকডাউনের কারণে তা স্থগিত আছে। সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরে তা প্রকাশ করা হবে।’