করোনা সংকট

১০ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর পরিবারে ঈদ আনন্দ নেই

করোনা পরিস্থিতিতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীরা পার করছেন কঠিন সময়। ঈদ বোনাস দূরের কথা, যাঁদের বেশির ভাগকেই মার্চ মাসের পর থেকে বেতন-ভাতা দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। আর শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতে না পারায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় ১০ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর পরিবারে নেই ঈদের আনন্দ। 

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে না হলেও দিশাহারা অবস্থায় আছেন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী। যাদের সংখ্যা ১০ লাখের মতো। বেতনের সঙ্গে প্রাইভেট টিউশনিও বন্ধ হওয়ায় তাদের সংকট আরও বেড়েছে। ফলে এই শিক্ষক-কর্মচারীরা জীবন চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। ঈদের আনন্দের কথা তাঁরা ভাবতেও পারছেন না।

সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন দেশের প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রায় ৬ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী। দেশের প্রায় ৭ হাজার নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার ২৫ হাজার শিক্ষক বেতন না পেয়ে দীর্ঘদিন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষকরা প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতায় এখনো নন-এমপিওভুক্ত। এছাড়া সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় তিন লাখ খণ্ডকালীন বা অস্থায়ী শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন যাঁদের বেশির ভাগকেই মার্চ মাসের পর থেকে বেতন-ভাতা দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। 

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের মহাসচিব সাফায়েত হোসেন বলেন, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী কিন্ডারগার্টেনে পড়ালেখা করলেও করোনায় কেউ আমাদের খোঁজখবর নেয়নি। এরই মধ্যে অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষকদের কষ্ট বলে বোঝানোর মতো নয়। ঈদের আনন্দের কথা তাঁরা স্বপ্নেও ভাবছেন না। যদি আমাদের বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হতো তাহলেও আমরা এ যাত্রায় বেঁচে যেতাম।

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে প্রথম পর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের নন-এমপিও ৮০ হাজার ৭৪৭ জন শিক্ষক ও ২৫ হাজার ৩৮ জন কর্মচারীকে প্রায় ৪৬ কোটি টাকার অনুদান দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের ৫১ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষক ও ১০ হাজার ২০৪ জন কর্মচারীকে প্রায় ২৮ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এতে একজন শিক্ষক পাঁচ হাজার ও কর্মচারী আড়াই হাজার করে টাকা পেয়েছেন।

বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের জন্য অবশ্যই তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু পাঁচ হাজার টাকায় একজন শিক্ষক কত দিন চলতে পারেন? আগে শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশনি করলে কিছু টাকা পেতেন। কিন্তু করোনার পর তাও বন্ধ। চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন আমাদের শিক্ষক-কর্মচারীরা।

বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ সভাপতি এস এম জয়নাল আবেদিন জিহাদী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ হয়ে গেছে। কিন্তু ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণ তো দূরের কথা, এখনো এমপিওভুক্তও হয়নি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের এমপিওভুক্তির জন্য গত অর্থবছরে বরাদ্দ দিলেও মন্ত্রণালয়ের গাফিলতিতে এমপিও হয়নি। ৩৬ বছর ধরেই আমাদের শিক্ষকদের ঈদের আনন্দ নেই।

বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফোরামের আহবায়ক নেকবর হোসাইন বলেন, এমপিওভুক্ত কলেজে অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা চাকরি করেও নন-এমপিও শিক্ষক। করোনাকালে এসব শিক্ষক মানবেতর জীবনযাপন করছে। সামনে ঈদ অথচ বেতন নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটছে।