অনলাইনে ক্লাস: বঞ্চিতদের দায় কার?

আসিফ হাসান রাজু
আসিফ হাসান রাজু

মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে সবকিছু অচেনা হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণের হার। প্রায় তিন মাসের অধিক সময় ধরে আমরা এই ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে চলেছি। ভাইরাসটির প্রভাব সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনীতির পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থার উপর পড়ছে। শিক্ষার্থীদের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষার জন্য দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যা একদিকে বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের সেশন জটের মত চিন্তা তার সাথে আবার রুটিন শিক্ষা থেকে ছিটকে পরার সংশয় তৈরি করেছে। ফলে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা-কার্যক্রম চালু রাখতে ইউজিসি অনলাইনে ক্লাস নেওয়া কথা জানিয়েছে।

এর মধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর প্রস্তুতি শুরু করেছে আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এখনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে প্রশ্ন হলো বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলে শিক্ষার্থীরা যেভাবে ক্লাসে বসে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতো অনলাইন ক্লাসে কি সকল শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারছে বা পারবে? যদি না পারে তাহলে বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের দায়ভার কার? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের, নাকি রাষ্ট্রের?

আমরা সকলে জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সারা দেশে ছড়িয়ে আছে। সাথে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেটওয়ার্কের দুর্বলতার কথা আমরা সবাই জানি। তারসাথে কম গতির ইন্টারনেট ব্যবস্থা। অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের জন্যে সকলেরই অনলাইনে ক্লাস করার উপযোগী ডিভাইস আছে এমন ভাবাটা বাতুলতা এবং এই করোনাকালীন দুর্যোগের সময়ে মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো যখন তাদের দৈনন্দিন খরচ সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছেন সেখানে ইন্টারনেটের খরচ বহন করা তাদের উপরে বাড়তি অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে।

বিশ্ববিদ্যালয় খোলা অবস্থায় অনেক শিক্ষার্থী পার্ট টাইম জব, টিউশনি করে নিজের খরচ বহন করে৷ অনেকে বাড়িতে টাকা পাঠায় কিন্তু করোনাভাইরাসের ফলে এখন তাদের সেই পথ ও বন্ধ হয়ে অনিশ্চিত দিন পার করছে৷ কয়েকদিন আগে আমরা দেখেছি মেস ভাড়া দিতে না পারায় বাসার মালিক শিক্ষার্থীর জিনিসপত্র, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাহিরে ফেলে দিয়েছে৷ এমন একটা সময়ে ব্যয় বহুল অনলাইন ক্লাসে যে সকল শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারবে না তাদের কি হবে? কেননা, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর জন্যে ক্লাসরুমে সকলের ক্লাস করার সুযোগ থাকলেও অনলাইনে ক্লাস সকলের জন্যে না।

শিক্ষার্থীদের শিক্ষা-কার্যক্রম চালু রাখতে প্রযুক্তির এ যুগে অনলাইন ক্লাস অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। যার মাধ্যমে শিক্ষা-কার্যক্রম সচল রাখার পাশাপাশি সেশনজট ও কমিয়ে আনা যাবে। তবে তার আগে সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য যে টেকনিক্যাল সাপোর্ট প্রয়োজন তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ইউজিসির নিকট বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধার জন্যে যে দাবি জানিয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে হবে এর পাশাপাশি সকল অঞ্চলে নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করা এবং ক্লাসকে অংশগ্রহণমূলক করার জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত শিক্ষাব্যবস্থায় চলমান বৈষম্যকেই প্রকট করবে বলে মনে করি।

লেখক : শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
ahraju.ru@gmail.com