বিখ্যাত ঔপন্যাসিক ও গল্পকার জগদীশ গুপ্তের জন্মদিন আজ

জগদীশ চন্দ্র সেনগুপ্ত
জগদীশ চন্দ্র সেনগুপ্ত

‘মানুষের প্রেমের ট্র্যাজেডি মৃত্যুতে নয়, বিরহে নয়, অবসাদে আর ক্ষুদ্রতার পরিচয়ে।’ বিখ্যাত এই উক্তির প্রবক্তা জগদীশ চন্দ্র সেনগুপ্তের আজ জন্মদিন। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্পকার জগদীশ গুপ্ত ৫ জুলাই ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার আমলাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃকনিবাস ছিল রাজবাড়ি জেলার খোর্দ মেঘচামি গ্রামে। পিতা কৈলাশ চন্দ্র গুপ্ত কুষ্টিয়া আদালতের বিশিষ্ট আইনজীবী ছিলেন। পিতার কর্মসূত্রে জগদীশ গুপ্ত কুষ্টিয়া জেলার আমলাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

গল্পকার জগদীশ গুপ্তের শৈশব কাটে গড়াই নদীর তীরে। তিনি প্রত্যেকদিন গড়াই নদীতে গোসল করতেন। ১৯০৫ সালে তিনি কলকাতা সিটি কলিজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন। এতপর কলকাতা রিপন কলেজে ভর্তি হন। ১৯০৭ সালে রিপন কলেজ থেকে আই.এ পাশ করে কলেজের পাঠ ত্যাগ করেন। এরই মাঝে জগদীশ গুপ্ত ১৯০৬ সালে চারুবালাকে বিবাহ করেন।

কর্মজীবনে কবি জগদীশ গুপ্ত বীরভূম জেলার সিউড়ি জজকোর্টে টাইপিস্টের চাকরি লাভ করেন ১৯০৮ সালে। সেখানে ৪/৫ বছর চাকরি করার পর উড়িষ্যার সম্বলপুরে একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের অফিসে পুনরায় টাইপিস্টের চাকরি গ্রহণ করেন ১৯১৩ সালে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মনোমালিন্য ঘটায় চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।

অতঃপর কলকাতার ‘জাগোস ইঙ্ক’ নামের ফাউন্টেনপেনের কালি তৈরির একটি কারখানা খোলেন। এ ব্যবসায় উন্নতি করতে না পেরে ১৯২৭ সালে বোলপুরের চৌকি আদালতে আবারো টাইপিস্টের চাকরিতে যোগদান করেন। সেখানে একটানা ১৭ বছর চাকরি করার পর ১৯৪৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর কুষ্টিয়ায় বাস করতে থাকেন।

কবি হিসাবে তিনি প্রথমে আত্মপ্রকাশ করলেও ছোটগল্পকার রূপে তিনি বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন লাভ করেছিলেন। বিজলী, কালী ও কলম, কল্লোল পত্রিকায় তার গল্পসমগ্র প্রকাশ পেত। গল্প ও উপন্যাসের ক্ষেত্রে প্রকাশ ভঙ্গিমা, স্বাতন্ত্র্যের জন্য সাহিত্য মহলে তিনি বিশিষ্ট স্থানলাভ করেছিলেন। ছোটগল্পের বিশিষ্ট শিল্পী ছিলেন জগদীশ গুপ্ত। গভীর জীবনবোধ, সুঠাম কাহিনী বিন্যাস ও চরিত্রচিত্রণের নৈপুন্যে তার ছোটগল্প সমৃদ্ধ হয়েছে।

মনোবৈকল্য ও মনোবিশ্লেষণের এবং দু:খময়তার নিপুণ বর্ণনায় তার শিল্প এক অসাধারণ সৃষ্টি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সামাজিক অন্যায়-অবিচারের চেয়ে অদৃষ্ট লিপি দু:খময়তার কারণগুলো তার গল্পে বিশ্লেষিত। তাঁর ছোট গল্পের সংখ্যা একশো পঁচিশ। বিখ্যাত গল্পগ্রন্থ হচ্ছে বিনোদিনী, রুপের বাহিরে, শ্রীমতি, উদয়খেলা, শশাঙ্ক কবিরাজের স্তরী, মেঘাবৃত অশনি, স্বনির্বাচিত গল্প।

লেখার জন্য কখনো আপোষ করেননি তিনি। এক প্রকাশক একবার তাঁর একটি উপন্যাসকে খানিকটা বাড়িয়ে লিখতে চিঠি লিখেছিলেন। কিছু টাকাও অগ্রিম পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু টাকা ফেরত পাঠিয়ে জানান, যে উপন্যাসের যেখানে শেষ হওয়া প্রয়োজন এবং যে ঘটনা যেখানে বিস্তারের যতটুকু ক্ষেত্র আছে তার বেশি ফরমায়েশি করা তাঁর পক্ষে সম্ভব না। তাঁর লেখা উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অসাধু-সিদ্ধার্থ, লঘুগুরু, দুলালের দেনা, নিষেদের পটভূমিকায়, কলঙ্কিত তার্থ, রোমন্থন।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় জগদীশ গুপ্ত কলকাতায় পাড়ি জমান। সেখানে স্ত্রী চারুবালাকে রেখে ১৯৫৭ সালেই ১৫ এপ্রিল কবি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের পথিকৃতির সম্মান যার প্রাপ্য বলে মনে করেন অনেকে, তিনিই মারা গেলেন কোন স্বীকৃতি না পেয়ে, অবহেলায়, দারিদ্রের মধ্যে দিয়ে।