সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মিডিয়াস্কুল’

সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিষয়ে সহজ ভাষায় পাঠের আয়োজন করেছে ‘মিডিয়াস্কুল’। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমকর্মীসহ এ বিষয়ে জানতে আগ্রহীরা এখানে একটি প্লাটফর্মেই তথ্যবহুল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ পাঠ পাবেন। আর এমন প্রচেষ্টা থেকেই আজ বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল মিডিয়াস্কুল ডট এক্সওয়াইজেড (www.mediaschool.xyz)।

অ্যাকাডেমিক এই ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনির্ভাসিটির জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপারসন ও সহকারী অধ্যাপক সজীব সরকার। শিক্ষাসহায়ক এই সাইটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে রয়েছেন লেখক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক নুসরাত জাহান। এ ছাড়া চিফ কনটেন্ট এডিটর হিসেবে রয়েছেন আমাদের সময় পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক জাহাঙ্গীর সুর এবং কনসালট্যান্ট-মিডিয়া অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স হিসেবে আছেন আমাদের সময় পত্রিকার সহসম্পাদক মাজেদুল হক তানভীর।

মিডিয়াস্কুলে বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়ের ওপর লেখা যোগ করা হচ্ছে। তবে সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম, যোগাযোগ, সমাজ, সংস্কৃতি, মনঃস্তত্ত্ব, জেন্ডার, রাজনীতি, দর্শন, সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এই উদ্যোগের বিষয়ে সজীব সরকার বলেন, ‘আমার শিক্ষকতার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সহজবোধ্য টেক্সট না পেলে শিক্ষার্থীদের অনেকে পড়ার প্রতি আগ্রহ হারায়। ফলে তারা পাঠের বিষয়বস্তু না বুঝে পরীক্ষার আগের রাতে কেবল মুখস্থ করে পরীক্ষা পাসের চেষ্টা করে। অথচ সহজবোধ্য রিডিং ম্যাটেরিয়ালস পেলে তারা কেবল মুখস্থ করার বদলে পাঠের বিষয়বস্তু বুঝে পড়তে আগ্রহী হয়। আমার মনে হয়েছে, দরকারি রিডিং ম্যাটেরিয়ালস একটি নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে এবং সহজবোধ্য ভাষায় সহজলভ্য করা গেলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় আগ্রহ পাবে।’

মিডিয়াস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘আরেকটি বিষয় অস্বীকার করা যায় না- সময় ও প্রযুক্তি অঙ্গাঙ্গিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এখনকার তরুণরা অনেক বেশি প্রযুক্তি-নির্ভর। তারা অনেক বেশি সময় ইন্টারনেটে যুক্ত থাকে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী পড়াশোনার ধরন অ্যাডজাস্ট করা দরকার; না হলে তারা পাঠ-বিমুখ হবেই। মিডিয়াস্কুল-এর উদ্দেশ্য হলো, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পর্যাপ্ত রিডিং ম্যাটেরিয়াল তৈরি করা। দরকারি পাঠ সহজবোধ্য ও সহজলভ্য হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়বে যা পর্যায়ক্রমে তাদের মূল বা মূলানুগ টেক্সট এবং বেশি বেশি রেফারেন্স ম্যাটেরিয়ালস পড়তেও আগ্রহী করবে।’

তিনি বলেন, ‘মূলত এমন ভাবনা থেকেই মিডিয়াস্কুল। পাশাপাশি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থী ও সমাজের প্রতি বাড়তি দায়িত্ব পালনের তাড়নাও রয়েছে। আর করোনাভাইরাসসৃষ্ট বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশ বোঝা যাচ্ছে, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালন ব্যবস্থার সাথে নতুন যোগাযোগ প্রযুক্তির সমন্বয় কতোটা গুরুত্বপূর্ণ।’

মিডিয়াস্কুল-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা নুসরাত জাহান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয় নিয়ে পড়ার সময় এ বিষয়ের ভালো মানের বই-পত্রের অভাব বোধ করেছি। সাংবাদিকতা, যোগাযোগ ও গণমাধ্যমসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো সম্পর্কে পড়াশোনা ও প্রায়োগিক জ্ঞানলাভের প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের জন্যে তথ্যবহুল কিন্তু সহজবোধ্য ভাষায় রিডিং ম্যাটেরিয়ালস এখনো বেশি সহজলভ্য হয়নি। এ কারণেই আমাদের ‘মিডিয়াস্কুল’ করার ভাবনা। চেষ্টা করছি মিডিয়াস্কুল-কে এমনভাবে প্রস্তুত করতে, যেখানে শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ এ বিষয়ে জানতে আগ্রহীরা পর্যাপ্ত রিডিং ম্যাটেরিয়ালস পাবেন।’

মিডিয়াস্কুলের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা। উইমেননিউজ২৪.কমের সম্পাদক আইরীন নিয়াজী মান্না বলেন, ‘মিডিয়াস্কুল একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাই। এ ধরনের একটি উদ্যোগের মাধ্যমে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার ছাত্র-ছাত্রীরা বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। এমন কি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িতরাও এই মিডিয়াস্কুল থেকে নানাবিধ সহযোগিতা পেতে পারেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সারা বিশ্বে বর্তমানে অনলাইনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে মিডিয়াস্কুল ডট এক্সওয়াইজেড (www.mediaschool.xyz) সামনের দিকে এগিয়ে যাবে - এই প্রত্যাশা করছি।’

এনটিভির সিনিয়র নিউজ এডিটর এসএম আকাশ বলেন, ‘এটি মিডিয়া বিষয়ে খুবই সমৃদ্ধ একটি সাইট। সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে কনটেন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের সরকারি-বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্নালিজম ও যোগাযোগ পড়ানো হয়। তাদের জন্য এই ওয়েবসাইট হবে ওয়ান স্টপ শপ।’ এসএম আকাশ আরও বলেন, ‘মিডিয়াস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সজীব সরকার এর আগে মিডিয়া বিষয়ে বই লিখে প্রশংসিত হয়েছেন। এই সাইটটি নিয়মিত আপডেট করা হবে, নতুন নতুন কনটেন্ট দেওয়া হবে বলে আশা করি। এর সাফল্য কামনা করছি।’

বৈশাখী টেলিভিশনের সাবেক প্ল্যানিং এডিটর ও শিক্ষক শেখ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এটি ভিন্নধারার একটি ওয়েবসাইট, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি করবে। শিক্ষার্থীদের জন্য এমন সহায়ক উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সেই সঙ্গে মিডিয়াস্কুলের সমৃদ্ধি কামনা করছি।’

কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক পলাশ মাহবুব বলেছেন, ‘এটি নিঃসন্দেহে অসাধারণ একটি উদ্যোগ। এক ক্লিকে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট অনেক কিছু এখানে মিলবে যা গণমাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন সহায়ক হবে, তেমনি কাজে লাগবে গণমাধ্যমের শিক্ষক এবং গণমাধ্যম কর্মীদেরও।’

‘সবসময়ের জন্য প্রয়োজনীয় তো বটেই তবে করোনাকালীন সময়ে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই উদ্যোগ নেওয়ায় মিডিয়াস্কুল সংশ্লিষ্ট সবার শুধু ধন্যবাদ প্রাপ্য নয়, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা’, বলেন পলাশ মাহবুব।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মনিরা বেগম বলেন, ‘সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকতায় আগ্রহীদের জন্য এই প্লাটফর্ম (মিডিয়াস্কুল) দারুণ ভূমিকা পালন করতে পারে। গতানুগতিকতার স্বল্প পরিসরের বাইরে গিয়ে মিডিয়া সম্পর্কিত সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, রাইটআপ, একসেসেবল বই, জার্নাল আর্টিকেল সমৃদ্ধ বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হোক এই মিডিয়া হাব। শুভকামনা।’

সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনির্ভাসিটির জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শায়লা আক্তার বলেন, ‘মিডিয়াস্কুল প্লাটফর্মটি মূলত আমাদের মিডিয়া সংক্রান্ত লেখাপড়ার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ আমাদের সঙ্গে মিডিয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সহজ ভাষায় আলোচনা করবেন।’

শায়লা আক্তার বলেন, ‘আমরা অনেক সময় কোর্সভিত্তিক আলোচনা আমাদের আয়ত্তে আনতে পারি না, সেক্ষেত্রেও আশা করি মিডিয়াস্কুল সহায়ক হবে। আশা করি মিডিয়াস্কুল আমাদেরকে সঠিক জ্ঞান, দক্ষতা এবং সাফল্য অর্জনে সাহায্য করবে।’

স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও ফ্রিল্যান্স মাল্টিমিডিয়া জার্নালিস্ট আসাদুল্লা লায়ন বলেন, ‘সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী এবং সংবাদকর্মীরা নিজেদের কৌতূহল বা প্রয়োজনের তাগিদে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে জানার আগ্রহ রাখে। বাংলায় পর্যাপ্ত কনটেন্ট ও বই না থাকা অথবা ইংরেজি মাধ্যমের বর্ণনা আমাদের প্রেক্ষাপটে না হওয়ায় কিছুটা শূন্যতা থেকে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘‘মিডিয়া স্কুল” নিয়ে আমার প্রত্যাশা শুধু এই শূন্যতা পূরণই নয়, একইসাথে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কার্যক্রমকে আরও সৃজনশীল ও নান্দনিক করে গড়ে তুলতে রসদ যোগাবে।’

মিডিয়াস্কুলের চিফ কনটেন্ট এডিটর জাহাঙ্গীর সুর বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যে অ্যাকাডেমিক ও রেফারেন্স পাঠ সহজলভ্য করার চেষ্টা করছি আমরা। প্রতিদিন নতুন নতুন কনটেন্ট যোগ করা হচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে নতুন পাঠ যোগ ও প্রয়োজনে পুরোনো পাঠগুলোকে আরো উন্নত করা হবে।’

কনসালট্যান্ট-মিডিয়া অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স মাজেদুল হক তানভীর বলেন, ‘মূলত গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে মিডিয়াস্কুল করা হলেও প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে আগ্রহী যে-কেউই এখান থেকে উপকৃত হবেন। মিডিয়াস্কুল-এর ওয়েবসাইট ছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে আমরা সক্রিয় আছি, যেন শিক্ষার্থীরা সহজেই আমাদের সাথে সম্পৃক্ত থেকে উপকৃত হতে পারেন।’

‘ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ভিন্ন আঙ্গিকে নানা ধরনের চমক থাকবে’, যোগ করেন তানভীর।