অনলাইন ক্লাসে যেতে চায় চুয়েট, সম্মতি নেই শিক্ষার্থীদের

করোনা সংকটের মধ্যে অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করতে চায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)। কিন্তু অনলাইন ক্লাসে যেতে চায় না শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক চালানো একটি জরিপে অসম্মতি জানিয়েছে তারা। তবুও অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা চালু করতে চায় চুয়েট কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেছেন, অনলাইন জরিপে দেখা গেছে- শিক্ষার্থীদের কিছু ব্যক্তিগত ঘাটতির কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই অনলাইনে ক্লাস করতে অনিচ্ছুক। তাছাড়া সরকার থেকে শিক্ষা ঋণের কোনো বাজেট নাই। তবে আশা করছি, শিগগিরই আমরা অনলাইন ক্লাস শুরু করব।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে দেশের অন্যান্য খাতের মত শিক্ষা খাতও চরম সংকটে পড়েছে। এই সময়ে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন ক্লাসের প্রক্রিয়া শুরু করছে। বিভিন্ন মহলে কথা উঠছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট কমিয়ে আনতে অনলাইন ক্লাসের যৌক্তিকতা নিয়ে। কেউ বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাসের পক্ষে আবার কেউ বিপক্ষে।

অনলাইন ক্লাস নিয়ে চুয়েটে গত ৭ মে সকল ডীন এবং বিভাগীয় প্রধানদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সভায় আট সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের আগ্রহ ও উপযুক্ততা যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন প্রশ্নসূচক একটি অনলাইন জরিপ সম্পন্ন করে। জরিপে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস করতে অনিচ্ছুক বলে জানান।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে রবিবার (৩১ মে) চুয়েটের কাউন্সিল কক্ষে উপাচার্যের সভাপতিত্বে সকল ডীন, পরিচালক, বিভাগীয় প্রধান, সেন্টার চেয়ারম্যান, প্রভোস্ট, অফিস প্রধান, শাখা প্রধানের উপস্থিতিতে এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অনলাইন ক্লাসের উপযুক্ততা এবং সামগ্রিক সমস্যার বিষয়ে নানা আলোচনা করা হয়।

অনলাইন ক্লাসের প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো মোবাইল এবং অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। জানা যায়, শতকরা ৪০ ভাগ শিক্ষার্থীদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন রয়েছে। বাকি শিক্ষার্থীদের মোবাইল এবং ল্যাপটপ দুটোই রয়েছে।

তবে এক শতাংশ শিক্ষার্থীর অনলাইন ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ল্যাপটপ এবং অ্যান্ড্রয়েড ফোন দুটোই নেই। এছাড়া জরিপে জানা যায়, ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস চালিয়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ইন্টারনেট প্যাকেজ কেনার সামর্থ্য নেই।

এ ব্যাপারে অনলাইন ক্লাস সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য ও স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. জিএম সাদিকুল ইসলাম জানান, অনলাইন জরিপে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া সন্তোষজনক না। আমরা জরিপের বিস্তারিত ফলাফল এবং শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যার কথা সভায় তুলে ধরেছি।

তিনি বলেন, এই দুর্যোগকালে অর্থ সমস্যায় জর্জরিত কোনো পরিবারকে ইন্টারনেট খরচে চাপ দেয়া মোটেই সমীচীন না। সেজন্য মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যাপারে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে আলাদাভাবে কোনো সাশ্রয়ী প্যাকেজ চালু করা যায় কিনা সে প্রস্তাবনা দিয়েছি।

তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের সীমাবদ্ধতা আমলে নিয়ে স্বল্প পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিগগিরই পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইন ক্লাস শুরু করতে চায়। পরে যদি শিক্ষার্থীদের সীমাবদ্ধতাগুলো কঠিন হয়ে যায় তখন বিষয়গুলো পুনঃবিবেচনা করা হবে। এছাড়া যখনই সরকার থেকে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আসার ব্যাপারে ঘোষণা আসবে তখনই চতুর্থ বর্ষ ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে এনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের পরীক্ষা সম্পন্ন করা হবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, করোনাকালে সরকার ঘোষিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে শিক্ষার্থীরা আড়াই মাস ধরে পড়াশোনার বাইরে। এসময় তিনি সময় নষ্ট না করে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বিষয়ের শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করে বাসায় বসে কিছুটা হলেও পড়াশোনায় মনোনিবেশ করার আহবান জানান। এছাড়া এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসই একমাত্র ভরসা বলেও উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, অনলাইন জরিপে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের কিছু ব্যক্তিগত ঘাটতির কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই অনলাইনে ক্লাস করতে অনিচ্ছুক। তাছাড়া সরকার থেকে শিক্ষা ঋণের কোনো বাজেট নেই। তবে আশা করছি, শিগগিরই আমরা অনলাইন ক্লাস শুরু করব। করোনা সংকটে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে থাকার আহবানও জানান তিনি।

সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক লকডাউন শিথিল করার কারণে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অফিস আজ সোমবার থেকে চালু করা হয়েছে। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ফারুক-উজ-জামান চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।