যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তীব্র সংঘাত, কারফিউ জারি

পুলিশ হেফাজেতে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর জের ধরে দেশটিতে বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক মাত্রায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের উপর টিয়ার গ্যাস এবং রাবার বুলেট ছুড়েছে দাঙ্গা পুলিশ। কয়েকটি শহরে পুলিশের যানে আগুন দেয়া হয়েছে। সংঘর্ষের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘লুটেরা এবং বিশৃঙ্খলাকারীদের’ দায়ী করেছেন।

গত সোমবার মিনেয়াপোলিসে পুলিশের হেফাজতে থাকার সময় মারা যান ৪৬ বছর বয়সী আফ্রিকান আমেরিকান নাগরিক ফ্লয়েড। ৪৪ বছর বয়সী শ্বেতাঙ্গ সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চউভিনকে তার মৃত্যুর জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। সোমবার তাকে আদালতে তোলার কথা রয়েছে।

অনলাইনে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কয়েক মিনিট ধরে ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু গেড়ে বসে রয়েছেন চউভিন। সেসময় ফ্লয়েড বারবারই বলছিলেন, তিনি নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না। ওই সময়ে উপস্থিত থাকা আরো তিন পুলিশ কর্মকর্তাকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।

ওই ঘটনার জেরে শিকাগোতে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে বিক্ষোভকারীরা। জবাবে পুলিশও পাল্টা টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। শনিবার বেশ কয়েক জনকে আটকও করা হয়। লস এঞ্জেলেসে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়ার পর বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তাদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোঁড়ে পুলিশ। ছবিতে দেখা যায়, পুলিশের গাড়ির উপর দাড়িয়ে রয়েছে বিক্ষোভকারীরা।

দ্বিতীয় দিনের মতো ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের বাইরে অবস্থান নিয়েছে অনেক বিক্ষোভকারী। জর্জিয়া, আটলান্টায় শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা ভাংচুর চালানোর পর জান-মালের নিরাপত্তায় সেখানে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। মিনেয়াপোলিস, নিউইয়র্ক, মায়ামি, আটলান্টা এবং ফিলাডেলফিয়ায় বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ।

অন্যান্য শহরের সাথে মিনেয়াপোলিস, আটলান্টা, লস এঞ্জেলেস, ফিলাডেলফিয়া, পোর্টল্যান্ড এবং লুইসভিলে রাতভর কারফিউ জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক শহরে বিক্ষোভকারীরা কারফিউ ভেঙ্গে ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছে। শুক্রবার মিনেসোটায় ন্যাশনাল গার্ডের কয়েকশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যায় ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ফ্লয়েডের মৃত্যু ‘আমেরিকাবাসীকে ভয়, ক্রোধ এবং শোকে নিমজ্জিত করেছে। শান্তিপ্রিয় প্রতিটি আমেরিকানের সামনে বন্ধু হিসেবে দাঁড়াবো আমি।’ ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে টেলিভিশনে ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।

এসময় তিনি ‘লুটেরা এবং বিশৃঙ্খলাকারীদের’ কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেন, তাদের এ ধরণের কাজ ফ্লয়েডের স্মৃতিকে অসম্মান করবে। তিনি বলেন, যা প্রয়োজন ছিল তা হচ্ছে, ‘ঘৃণা নয় বরং আরোগ্য লাভ করা, বিশৃঙ্খলা নয় বরং ন্যায়বিচার। আমি ক্ষুব্ধ জনগণের কর্মকাণ্ড সহ্য করবো না- এটা চলবে না।’

বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার জন্য মিনেয়াপোলিসের ডেমোক্রেট মেয়রকে দোষারোপ করেছেন তিনি।  ট্রাম্প বলেন, বিক্ষোভ যদি নিয়ন্ত্রণে নেয়া না হয়, তাহলে ন্যাশনাল গার্ডের সেনারা সেটি নিয়ন্ত্রণে নেবে।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন অভিযোগ তুলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গোঁড়ামির পালে হাওয়া দিচ্ছেন। ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।