করোনাকালে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের ঈদ ভাবনা

দেশে উদযাপিত হচ্ছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। তবে করোনা মহামারিতে ঘরবন্দি জীবনে এ উৎসব যেন নিরানন্দের। ঘরবন্দি জীবনে এবার যাওয়া হবেনা প্রতিবেশী বা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে। আর করা হবে না তাদের আমন্ত্রণ। ভিন্ন আঙ্গিকে এবারের ঈদ উদযাপন নিয়ে ঢাকা ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ডিআইইউ) কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে কথা হয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তাদের ঈদ ভাবনা তুলে ধরছেন ডিআইইউ প্রতিনিধি সাদিয়া তানজিলা

একুশে টিভির প্রতিনিধি মুছা মল্লিক জানান, প্রিয়জনদের সাথে ঈদ উদযাপনের আনন্দ অসীম। করেনার কারণে অনেকেই এবার প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করতে পারছেন। যেটা খুব কষ্টের। এবার ঈদ নিয়ে আমার তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। ঈদের জন্য কেনাকাটা তেমন করিনি। তবে মাকে একটা শাড়ি আর বাবাকে একটা পাঞ্জাবি দিয়েছি। বাসার পাশে কিছু গরীব ছেলে-মেয়ে রয়েছে, তাদের ঈদের খাদ্যসামগ্রী কিনে দিয়েছি।

সময় জার্নালের ডিআইইউ প্রতিনিধি ইসলাম হোসেন বলেন, ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। দীর্ঘ এক মাস পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনার পরে আসে এই ঈদ; যা প্রতি বছর মুসলিম বিশ্বে নিয়ে আসে আনন্দের বার্তা। কিন্তু সেই “ঈদ আনন্দ উৎসব” করোনার করাল থাবা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। সারা পৃথিবী থেকে কেড়ে নিয়েছে তিন লাখেরও বেশি প্রাণ।

তিনি বলেন, করোনার কারণে অনেকে কর্মস্থল থেকে আসতে পারেনি। প্রিয়জনদের ছাড়া ঈদ করা অনেক কষ্টের। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকাতে আমি বাসাতেই আম্মু-আব্বুর সাথে ঈদ উদপযাপনি করছি। তবে প্রতিবছরের ঈদের মতো এবার সেই আনন্দ নেই। ঈদের নামাজ শেষে আমরা কোলাকুলি করতাম এবার সেটাও করা যায়নি। ঈদে আমরা একে অপরের বাড়িতে যেতাম, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যেতাম; এবার তাও যাওয়া হবেনা। এই করোনাভাইরাস এর জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতার ঈদ হবে আমার।

ভার্সিটি ভয়েসের ডিআইইউ প্রতিনিধি ইসরাত জাহান বলেন, ঈদ নিয়ে এবার আনন্দ থাকলেও মনে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। করোনাভাইরাসে বিশ্ব এবার অন্য রূপে ঈদ উদযাপন করতে চলেছে। অনেকে আবার পরিবার ছাড়াই ঈদ উদযাপন করবে। প্রতিবছর ঈদ দাদুর বাসাতে করা হলেও এবার করা হবেনা।

তিনি বলেন, এবার ঈদে নতুন জামা নেওয়া হয়নি। ঈদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে আমি আর আমার ভাই গরীব কিছু বাচ্চাদের চাল, ডাল, আলু, তেল, সেমাই কিনে দিয়েছি। ইনশাআল্লাহ এবারের ঈদে সকল খারাপ মুছে গিয়ে আবার পবিত্র হবে বিশ্ব। সবাইকে ঈদ মোবারক ।

দিনের শুরুর ডিআইইউ প্রতিনিধি কাজী ফিরোজ আহমেদ বলেন, ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ছোটবেলা থেকেই পরিবারের সাথে ঈদ উদযাদপন করার সৌভাগ্য হয়েছে। প্রতিবছরই ঈদের দিন নামাজ শেষে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশির বাড়িতে ঘুরতে যেতাম। আর বিকেলে নতুন জামা পড়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা না দিলেই নয়। তবে এবারের ঈদ পরিকল্পনার রয়েছে কিছুটা পরিবর্তন।

তিনি বলেন, সারাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে লকডাউনরত অবস্থায় রয়েছে সবাই। এতে করে নিজ বাড়িতেই অবস্থান করে শুধুমাত্র পরিবারের সাথেই ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নেব। যেহেতু করোনা মহামারিতে সংকটে রয়েছে অনেক পরিবার, তাই এই ঈদে কেনাকাটা করার হয়নি কিছুই। কেনাকাটার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ দুস্থ পরিবারের মাঝে বিতরণ করেছি। পরস্পরের মাঝে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবার মাধ্যমেই ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার চেষ্টা করছি। একদিন করোনা দূর হবে, পৃথিবী আবারও সুস্থ হয়ে উঠবে সেই কামনাই করছি।

আজকের মেইল এর ডিআইইউ প্রতিনিধি ফাইজুল হক নোমান বলেন, আমরা সবাই একটি দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছি। এককথায় করোনাময় ঈদ বললেও ভুল হবে না। এখন সর্বত্রই একটি অদৃশ্য শঙ্কা বিরাজমান। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বাধ্যবাধকতা ঈদের মূল সুরকেই বদলে দিয়েছে। একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক হিসেবে বলতে পারি আমিও একটি ভিন্নরকম ঈদের অপেক্ষা করছি এবং ঘরে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রিয় ক্যাম্পাস ও দেশ বিদেশের বিভিন্ন খবরে চোখ রাখছি। আর ব্যক্তিগতভাবে অনেকের মতোই একটি সম্পূর্ণ অনাড়ম্বর ঈদ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। 

বিডি জার্নালের ডিআইইউ প্রতিনিধি ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, এবারের ঈদ অন্যান্য ঈদের মতো আনন্দ দেবে না। করোনা মহামারীতে সবাই আতঙ্কে রয়েছে, তাই এমন সমযয়ে ঈদের আনন্দ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস তার প্রভাব বিস্তার করেই চলছে।তাই এবারের ঈদ নিয়ে তেমন কোনো চিন্তা ভাবনা নেই।