দেশে করোনা সচেতনতামূলক তথ্য প্রচার করছে ৫ লাখ ধর্মীয় নেতা

একজন ধর্মীয় নেতা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে মেগাফোনের মাধ্যমে করোনা সম্পর্কিত বার্তা প্রচার করছেন

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী প্রায় ৫ লাখ ইমাম এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ সচেতনতামূলক তথ্য প্রচার করছেন। সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা এবং বাড়িতে লকডাউনে থাকাকালীন কোরআন শরীফ থেকে কীভাবে উপকার পাওয়া যায় এসবসহ স্বাস্থ্যবিধি ও সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্পর্কিত মূল বার্তা প্রচারে তারা সহায়তা করছেন।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ইউনিসেফের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যেসব পরিবারে স্মাটফোন ও টেলিভিশন নেই এমন লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশির কাছে ইমামগণ মসজিদের মেগাফোনের মাধ্যমে জীবন রক্ষায় সহায়ক তথ্য পৌঁছে দিচ্ছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরসহ সারা বাংলাদেশের ধর্মীয় নেতারা কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সম্মত হয়েছেন।

ইমামদের ‘দক্ষ যোগাযোগকারী’ হিসাবে উল্লেখ করে ইউনিসেফের কমিউনিকেশন ফর ডেভেলম্পমেন্ট স্পেশালিস্ট শেখ মাসুদুর রহমান বলেন, মসজিদে খুতবা দেওয়া এবং মসজিদের মেগাফোন ব্যবহার উভয় সময়ই জনগণ তাদের বার্তা শোনেন। কোভিড-১৯ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ইমামদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হলে তারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কমিউনিটিতে সেগুলো প্রচার করতে পারেন।

মুসলিম প্রধান দেশ হিসাবে বাংলাদেশে ইমামরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কারণ তারা লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। ২০১৭ সাল থেকে ইউনিসেফ এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি সংস্থা ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ (আইএফবি) নারী ও শিশুদের উন্নয়নে একসাথে কাজ করছে।

মাসুদুর রহমান জানান, এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে দিনে পাঁচ বার আজানের সময় সময় ইমামরা এই মেগাফোন ব্যবহার করেন এবং তাই এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এলাকার জনগণ ইমামদের কথা শোনেন এবং জনগণের কাছে জনগুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রচারের ক্ষেত্রে এই মেগাফোন একটি কার্যকর মাধ্যম।

এদিকে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে করোনা সংক্রমণের মাত্র দুইটি ঘটনার নিশ্চিত খবর পাওয়া গেছে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এতই বেশি যে, সঠিক সতর্কতা ও প্রস্তুতি না থাকলে শরণার্থী শিবিরে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

অর্ধেকের বেশি শিশুসহ ৮ লক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী, অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ বাঁশ ও তেরপলের তৈরি বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে বাস করছে। জনসংখ্যার অধিক ঘনত্ব দ্রুত সংক্রমণ হারের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলছে। এছাড়াও স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সীমিত সুযোগ বর্তমান অবস্থাকে আরও কঠিন করে তুলছে।

ইউনিসেফ এবং তার সহযোগীরা শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করেছে যাতে করে রোহিঙ্গা শিশু এবং তাদের পরিবার কোভিড-১৯ সম্পর্কে আরও ভালভাবে জানতে পারে এবং এ বিষয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।

ইউনিসেফ কক্সবাজারের কমিউনিকেশন ফর ডেভেলম্পমেন্ট স্পেশালিস্ট অরুনিমা ভাটনগর বলেন, শরণার্থী শিবিরগুলিতে ভাইরাসের সাথে সম্পর্কিত গুজব এবং মিথ্যাচার মোকাবেলা করা ইউনিসেফের কার্যক্রমের একটি মূল অংশ। কারন এখানে সংবাদ এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ সীমিত থাকায় এ ধরনের ভুল তথ্য খুবই খারাপ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।