প্রশ্নোত্তরে মাহে রমজান পর্ব- ৫

প্রতীকি ছবি

প্রাণঘাতী নভেল করবোনা ভাইরাসের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দেশে পবিত্র রমজান মাসের ২১ তম রোজা চলছে। একজন রোজাদারের সিয়াম সাধনাকে আরো সুন্দর ও পরিপূর্ণ করতে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে আপনার মনে জাগ্রত হওয়া রমজান নিয়ে নানা প্রশ্নের সমাধান নিয়ে হাজির হয়েছে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা আবু রুফাইদাহ রফিক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবদুর রহমান—

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আসসালামু আলাইকুম। জনাব আজ ২১ তম রমজানে আমরা হাজির হয়েছি আমাদের ৫ম পর্ব নিয়ে। আজকের ১ম প্রশ্ন হচ্ছে, নারীর জন্য তার নিজ ঘরে ইতিকাফ করা কি জায়েয আছে? যদি জায়েয হয় সেক্ষেত্রে তার যদি রান্নাবান্না করার প্রয়োজন পড়ে, তখন কি করবে?

মাও. আবু রুফাইদাহ রফিক: ওয়ালাইকুমস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। শুরুতেই দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মাধ্যমে সবাইকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা। একইসঙ্গে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ধারাবাহিক এমন আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানাই। নারীরা স্বামীর অনুমতিক্রমে মসজিদে ইতিকাফ করতে পারবে। (বুখারী মুসলিম)। মসজিদে নিরাপদ জায়গার ব্যবস্থা না থাকলে তারা ইতিকাফ করবেনা। নারীদের ঘরে ইতিকাফের প্রমাণ পাওয়া যায়না। তবে ঘরের কোন স্থানকে যদি নারীরা সালাতের জন্য নির্ধারণ করে থাকে, সেখানে রমজানের শেষ দশদিন বেশি বেশি ইবাদতে মশগুল থাকা উচিৎ। এতে আল্লাহ চাইলে ইতিকাফের সওয়াব দিতেও পারেন। কিন্তু মসজিদে নিরাপদ ব্যবস্থা থাকলে ঘরে করা যাবেনা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আমি ইতিকাফে বসতে চাই। কিন্তু ডাক্তারের সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ এপয়েন্টমেন্ট আছে। আমি কি ইতিকাফ অবস্থায় ডাক্তারের কাছে যেতে পারব? নাকি আমার জন্য ইতিকাফ করা ওয়াজিব নয়?

মাও. আবু রুফাইদাহ রফিক: ইতিকাফ কারো জন্যই ওয়াজিব নয়। এটা সুন্নত। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (প্রাকৃতিক) প্রয়োজন ছাড়া ইতিকাফ থেকে ঘরে যেতেন না। (বুখারী) তাই সব ধরণের ব্যস্ততামুক্ত হয়ে ইতিকাফ করা উচিত। অপরিহার্য প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে দেখা করতে হলে কোথাও বিলম্ব না করে এবং বাড়তি কথা না বলে দ্রুত মসজিদে গমন করতে হবে। (আবু দাউদ, ২৪৭৩ নম্বর হাদিস দ্রষ্টব্য)।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইতিকাফের শর্তগুলো কি কি? ইতিকাফের জন্য কি রোজা থাকা শর্ত?

মাও. আবু রুফাইদাহ রফিক: প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মুসলিম নারী পুরুষই ইতিকাফ করতে পারবে। নারীদের ইতিকাফের জন্য স্বামীর অনুমতি লাগবে।(বুখারী)। ইতিকাফের জন্য জুমা মসজিদ শর্ত। তবে জুমা মসজিদ বেশি দুরে হলে পাঞ্জেগানা মসজিদে করা যাবে। হাদিসে এসেছে, যেসব মসজিদে ইমাম মুয়াজ্জিন আছে, সেগুলোতে ইতিকাফ করা যাবে। রমজানের ইতিকাফ রোজার সাথে সম্পর্কিত, তাই ফরজ রোজা না রেখে সুন্নত ইতিকাফে লাভ হবেনা। কিন্তু যার উপর রোজা ফরজ নয়, সেও ইতিকাফ করতে পারবে। যেমন, মুসাফির।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আমি একটি হাদিস শুনেছি যে, মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে আকসা ছাড়া অন্য কোথাও ইতিকাফ করা শুদ্ধ নয়; এ হাদিসটি কি সহিহ?

মাও. আবু রুফাইদাহ রফিক: একটি হাদিসে এ কথাটি বর্ণনাকারী সন্দেহ বশত বলেছেন। অর্থাৎ, জুমা মসজিদ, নাকি ওই তিন মসজিদ - এ ব্যাপারে রাবীর সন্দেহ। তাই অন্য হাদিস অনুসারে আমল করতে হবে, যাতে সন্দেহ নেই। এক হাদিসে বলা হয়েছে, প্রত্যেক জামে মসজিদে ইতিকাফ করা যাবে। (আবু দাউদ, ২৪৭৩)। অন্য একটি হাদিস হচ্ছে, যে মসজিদে ইমাম মুয়াজ্জিন আছে, তাতে ইতিকাফ করা যাবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইতিকাফের হুকুম কী? করোনা পরিস্থিতিতে কোন এলাকায় ইতিকাফ যদি কেউ না করে তাহলে কি ঐ এলাকার সকল মানুষ গুনাহগার হবে?

মাও. আবু রুফাইদাহ রফিক: ইতিকাফ সুন্নত, যা রাসুল আজীবন পালন করেছেন।(বুখারী মুসলিম)। তবে কেউ পালন না করলে পাপী হবে এমন কথা বলেননি। সুতরাং ইতিকাফ করলে প্রভূত কল্যাণ লাভ করা যাবে এটা ঠিক, কিন্তু ওয়াজিব নয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আমরা ৩০ ই শাবানের রাত্রিতে চাঁদ দেখার জন্য বের হই। কিন্তু আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় চাঁদ দেখা যাইনি। এমতাবস্থায় আমরা কি ৩০ শে শাবান রোজা রাখব? যেহেতু এটি সন্দেহপূর্ণ দিন?

মাও. আবু রুফাইদাহ রফিক: না, রাখতে হবেনা। (মুসলিম, ১৪/২)

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একজন অসুস্থ ব্যক্তির উপর রোযার ফিদিয়া ওয়াজিব হয়েছে। এই ফিদিয়ার খাদ্য কি অমুসলিমদের প্রদান করা জায়েয হবে?

মাও. আবু রুফাইদাহ রফিক: জাকাত ফিতরা অমুসলিম গরিবদেরকেও দেওয়া যাবে। তবে মুসলিম গরিবরা অগ্রাধিকার পাবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: করোনা পরিস্থিতিতে এই বছর বেশির ভাগ মানুষই অার্থিক সংকটে আছে, এই অবস্থায় কেউ যদি ফিদিয়া দিতে না পারে তাহলে কি গুনাহগার হবে?

মাও. আবু রুফাইদাহ রফিক: ফিদইয়া না দিতে পারলে যার উপর সওম কাজা থাকবে, তার পক্ষ থেকে তার কোনো আত্মীয় সওম পালন করে দিলেও হবে। সেরকম কোনো আত্মীয় না থাকলে আশা করা যায় আল্লাহ মাফ করবেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার মূল্যবান সময়ের জন্য ধন্যবাদ।

মাও. আবু রুফাইদাহ রফিক: আপনাকেও ধন্যবাদ