বিসিএস ভাইভা নিয়ে ভাবনা দূর করতে

মো: দিদারুল ইসলাম, এএসপি

বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ধাপ হলো ভাইভা। ভাইভাতে ভাল করতে পারলে কাঙ্ক্ষিত ক্যাডারপ্রাপ্তি অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। তবে ভাইভাতে ভাল করার জন্য প্রস্তুতিটাও হওয়া চাই জোরালো। ভাইভা বোর্ডে সাধারণত কী ধরনের প্রশ্ন হয় কিংবা আমার ক্ষেত্রে কী করা হবে— স্বভাবতই এ নিয়ে অনেকের মাঝে ভীতি কাজ করে। এ ভীতি অমূলক কিছু নয়। তবে নিম্নোক্ত উপায়ে পরিকল্পনামাফিক প্রস্তুতি গ্রহণ করলে এ ভয়কে সহজেই জয় করা সম্ভব বলে আমি মনে করি—

জানতে হবে নিজের সম্পর্কে
ভাইভা বোর্ডের প্রায় ৯০% প্রার্থীকেই নিজের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। তাই সবার আগে জানতে হবে নিজেকে।নিজের সম্পর্কে যত তথ্য আছে তা নোট করে বারবার চর্চা করতে হবে। নিজ নামের অর্থ, নিজের নামে কোন বিখ্যাত ব্যক্তি থাকলে তার সম্পর্কিত তথ্য, নিজ পরিবার, বাবা ও মায়ের পেশা, পরিবারে কোন বিসিএস অফিসার থাকলে তার তথ্য, নিজের দোষ, গুণ, শখ, এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটি প্রভৃতি সম্পর্কে জানতে হবে।

নিজ জেলা ও উপজেলা সম্পর্কিত তথ্যাদি
নিজ উপজেলা ও জেলার নামকরণের ইতিহাস, আয়তন, শিক্ষা, অর্থনীতি, কী কারনে বিখ্যাত, নদ-নদী, ঐতিহাসিক স্থান, জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বিখ্যাত ও কুখ্যাত ব্যক্তি, বর্তমান ডিসি, এসপির নাম, জেলা-উপজেলায় কোন মন্ত্রী থাকলে তার সম্পর্কিত তথ্যাদিও জানা থাকতে হবে।

নিজ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে
নিজ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সন ও নামকরনের ইতিহাস, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত ভাস্কর্যের নাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও নিজ ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কেও সম্যক ধারণা রাখতে হবে।

নিজ পঠিত বিষয়ের ধারণা
প্রার্থীকে নিজ পঠিত বিষয় সম্পর্কেও বেসিক ধারণা রাখতে হবে। নিজের পঠিত বিষয় সম্পর্কে কোন কিছু না পারলে ভাইভা বোর্ডে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়। নিজের সাবজেক্ট সম্পর্কিত কয়েকটি বইয়ের নাম, সাবজেক্টের সাথে প্রদত্ত ক্যাডারের সম্পর্ক প্রভৃতিও অনেকসময় জানতে চাওয়া হয়। তাই এ সকল প্রশ্নের উত্তর আগে থেকেই নোট করে গুছিয়ে রাখতে হবে।

ক্যাডার সম্পর্কিত তথ্য
বিপিএসসি ফরমে প্রদত্ত ক্যাডার পছন্দক্রম কোডসহ মুখস্থ রাখতে হবে। ভাইবা বোর্ডে প্রায়ই এটা জিজ্ঞাসা করা হয়।
বিসিএসে কেন আসতে চান, কেন প্রশাসন/পুলিশ/ফরেন— প্রথম পছন্দ এসব প্রশ্নের উত্তর আগে থেকেই রেডি করে রাখতে হবে। প্রথম তিনটি চয়েস সম্পর্কে বিশদ ধারণা রাখতে হবে। জানা থাকতে হবে ক্যাডারের কাজ, পদক্রম, সুবিধা অসুবিধা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রভৃতি সম্পর্কেও।

আরো যা জানতে হবে
—সংবিধানের প্রস্তাবনা, গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ ও সংশোধনী।

—ভাষা আন্দোলন, ভাষা শহীদদের নাম, ভাষা আন্দোলন পরবর্তী রাজনৈতিক চালচিত্র, ৭ মার্চের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধ, সেক্টর ও সেক্টর কমান্ডারগণ, মুজিবনগর সরকার, বীরশ্রেষ্ঠগণের নাম ও পদবী, মুক্তিযুদ্ধের পদকপ্রাপ্তের সংখ্যা প্রভৃতি

—শেখ মুজিব ও তার পরিবার, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা থেকে তথ্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও রাজনৈতিক জীবন, রচিত বইসমূহ ও তার দেশ বিদেশের অর্জিত পদক ও খেতাব সম্পর্কিত তথ্য।

—বর্তমান সরকারের সাফল্য ও চ্যালেঞ্জসমূহ, দেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও কূটনীতি সম্পর্কিত তথ্যাদি।

—দেশের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা, বিখ্যাত নারী ও তাদের কার্যক্ষেত্রসমূহ।

—পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ ও কমিশন সংশ্লিষ্ট সংবিধানের অনুচ্ছেদসমূহ।

—তাছাড়া পত্রিকার পাতায় নিয়মিত চোখ বুলাতে হবে ও দেশ বিদেশের খবর নোট করে রাখতে হবে। ভাইভা বোর্ডের অনেক প্রশ্নই সাম্প্রতিক বিষয় থেকে করা হয়ে থাকে; আর এসকল প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে পত্রিকা পড়ার কোন বিকল্প নেই।

—ভাইভা বোর্ডে অনেক সময় ইংরেজিতে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। এসব প্রশ্নের উত্তরও করতে হয় ইংরেজিতে।তাই ভাইভা বোর্ডে ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতাও অর্জন করতে হবে। আয়নার সামনে নিয়মিত চর্চা ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা অর্জনে অনেকটা সহায়ক হতে পারে।

সর্বোপরি ভাইভাতে ভাল করার মূল উপায় হলো আত্মবিশ্বাস। যথাযথ প্রস্তুতির মাধ্যমে এ আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছানো সম্ভব বলে আমি মনে করি। সবার জন্য অনেক শুভকামনা রইলো।

লেখক: মো: দিদারুল ইসলাম, এএসপি, ৩৭তম বিসিএস, মেধাক্রম-৮