করোনার বন্ধ

টিউশন ও খণ্ডকালীন চাকরি করে সংসার চালানো শিক্ষার্থীদের দুঃসময়

প্রতীকি ছবি

যেই সময়টাতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা কিংবা গল্প-গানে মেতে ওঠার কথা, সেই সময়টাতে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থীকে ব্যস্ত থাকতে হয় অর্থ উপার্জনের ভাবনায়। দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা এসব শিক্ষার্থীকে শুধু পড়ালেখায় মনোনিবেশ করলেই চলে না; ভাবতে হয় পড়ালেখা চালিয়ে নেয়ার অর্থের যোগান নিয়েও। এমনকি কখনো কখনো নিতে হয় পরিবারের দায়িত্বও।

জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার এই লড়াইয়ে এ শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগেরই একমাত্র অবলম্বন টিউশন। কিন্তু কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে সেই অবলম্বনটুকুও হারিয়েছেন তারা। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশননির্ভর শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ শিক্ষার্থীদের প্রায় সকলেই বর্তমানে অর্থের অভাবে এক কঠিন দুঃসময় পার করছেন, সেই সাথে ভবিষ্যৎ নিয়েও ভুগছেন অনিশ্চয়তায়।

এমনই একজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহিনুর। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, “ঢাকায় আমি তিনটি টিউশন করাতাম। সেখান থেকে যে টাকা পেতাম তা দিয়ে নিজের পড়ালেখা চালানোর পাশাপাশি পরিবারকেও কিছু সহযোগিতা করতাম। কিন্তু বর্তমানে টিউশন বন্ধ রয়েছে অথচ আমাকে প্রতি মাসে প্রায় ২৫০০ টাকা বাড়িভাড়া প্রদান করতে হবে। আমি জানি না এই অর্থ আমি এখন কীভাবে পরিশোধ করবো!”

ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, “বর্তমানের চেয়েও ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি ভয় হচ্ছে। যদি দুমাস পর সবকিছু স্বাভাবিকও হয়, তখন একটা মোটা অঙ্কের টাকা বাড়িভাড়া হিসেবে দিতে হবে যা আমার পক্ষে রীতিমতো অসম্ভব।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস করে বের হওয়া স্নাতক সুমন সাহার গল্পও একই। বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় সুমন ও তার বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া বোনের টিউশন থেকে আসা টাকাই চলতো পরিবার। এখন দুইজনের টিউশনই বন্ধ। তাই এখন খাবার জোগাড়েই বেশ হিমশিম খাচ্ছে সুমনের পরিবার। সুমন সাহার ভাষ্যে, “এমন একটা সংকট, কারো কাছ থেকে চাইতেও পারছি না। জেলা প্রশাসনের দেয়া হটলাইন নম্বরে বারবার কল করেও কাউকে পাইনি।”

টিউশন থেকে পাওয়া অর্থে ভর করে চলা আরেক শিক্ষার্থী শাহরিয়ার রহমান। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এ শিক্ষার্থী বলেন, “আমি টিউশন এবং একটি শপিংমলে খণ্ডকালীন চাকরি করে আমার পড়ালেখার খরচ বহন করতাম। করোনা ভাইরাসের কারণে বর্তমানে দুটোই বন্ধ রয়েছে। অথচ আমাকে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ফি ও মেস ভাড়া সঠিক সময়ে পরিশোধ করতে হবে। যদি এই পরিস্থিতি আরো দীর্ঘায়িত হয় তাহলে পরবর্তী সেমিস্টারে আমি হয়তো ভর্তিই হতে পারবো না।”

রাজধানীর বাইরের চিত্রটাও অনেকটা একই। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল-আমিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “আমি ক্লাসের বাইরে পুরো সময়টা টিউশন করাতাম, সেই টাকায় আমার খরচসহ পরিবারের খরচও বহন করতাম। বর্তমানে সকল টিউশনি বন্ধ থাকায় আমি এবং আমার পরিবার চরম দুরবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। এমনকি অর্থের অভাবে আমরা আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো পূরণেও হিমশিম খাচ্ছি।"

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এম আই হায়দার বলেন, “টিউশনি থেকে প্রাপ্ত টাকায় মেসভাড়াসহ পড়ালেখার খরচ বহন করি। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে বর্তমানে কোনো টিউশনি নেই। করোনার কারণে হয়তো আমি এই কয়েকমাস কোনো অর্থ উপার্জন করতে পারবো না। কিন্তু বাড়ি ভাড়াতো আজ কিংবা কাল পরিশোধ করতেই হবে। এতগুলো টাকা একসাথে কীভাবে পরিশোধ করবো সেটি নিয়ে খুবই চিন্তিত।”

একই সমস্যার কথা জানান গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুকান্ত সরকারও। তিনি বলেন, “আমার পড়ালেখার খরচ চালানোর একমাত্র অবলম্বন ছিলো টিউশন। বর্তমানে সকল টিউশন বন্ধ থাকলেও অন্যান্য খরচ বন্ধ নেই। মেসের মালিক দ্রুত মেস ভাড়া পরিশোধ করতে বলছেন। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হলেই সেমিস্টার ফিসহ অন্যান্য ফি প্রদান করতে হবে। জানি না আমি কীভাবে আমার পড়ালেখা চালিয়ে নিব, এতগুলো অর্থ আমি কোথায় পাবো!”

এ সময় এই শিক্ষার্থী বলেন, "এই মুহুর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা বাড়ি ভাড়া। মেসমালিকরা যদি এই সময়টায় অন্তত মেসভাড়া মওকুফ করতো আমাদের মতো শিক্ষার্থীরা খুবই উপকৃত হতো।”