অল্প খরচে অভিনব কোয়ারেন্টিন সেন্টার, নকশা ২ কুয়েট প্রকৌশলীর

কুয়েটের দুই প্রকৌশলীর তৈরি কোয়ারেন্টিনের নকশা

পৃথিবীজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা। এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের মাহফুজ-বিন-মঈন স্বপ্নীল ও বিল্ডিং ইঞ্জিয়ারিং ও কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তানবিবুর রহমান তুনান।

তারা দুইজন মিলে গত তিন দিনে প্রকৌশলী জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে অভিনব পদ্ধতিতে ডিজাইন করেছেন কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থার।

তরুণ এ প্রকৌশলীরা বলেন, কোনো ধরনের জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকতে পারে এমন আশঙ্কায় থাকা কোনো ব্যক্তিকে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা রাখার পদ্ধতিকেই বলা হয় কোয়ারেন্টাইন। আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন মানুষের জন্য বাংলাদেশে এখন যে পরিমাণ কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা আছে তা যথেষ্ট নয়। ভবিষ্যতের কথা ভেবে এবং এ মহামারির জন্য পূর্বপ্রস্তুতি স্বরূপ এখন প্রয়োজন অল্প জায়গায়, স্বল্প খরচে মানুষের জন্য কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা।

বাংলাদেশের অধিক ঘনবসতি, স্বল্প জায়গা ও অল্প খরচে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করাই হলো বড় চ্যালেঞ্জ, বলেন তারা।

তাদের নকশাটি সার্কুলার আকারে তৈরি আইসোলেটেড রুম। যার প্রধান উপাদান হলো প্লাইউড অথবা প্রয়োজনে খরচ কমাতে বিকল্প হিসেবে পিভিসি ক্যানভাস। এক সেটাপে ১৫ জনকে রাখা যাবে এমন ব্যবস্থা করতে জমি লাগবে দেড় কাঠা। এমনভাবেই এগুলো তৈরি করা হবে যাতে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিকে বের হতে না হয়। সব রুমের ভেতরের দিকেই থাকবে টয়লেট এবং গোসলের ব্যবস্থা। সম্পূর্ণ ব্যবস্থা তৈরিতে খরচ হবে মাত্র তিন লাখ টাকা। অর্থাৎ মাথাপিছু কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করতে খরচ হবে ২০ হাজার টাকা।

তারা জানান, প্রাথমিক লক্ষ্য ২৫০ জন থাকার মতো একটি সম্পূর্ণ প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা। যাতে খরচ হবে পঞ্চাশ লাখ টাকা। পুরো কাজটি সম্পন্ন করতে সময় লাগবে মাত্র ১০-১৫ দিন।

এ প্রকৌশলীরা বলেন, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদের উচিত এখনই সতর্ক হওয়া। স্বল্প আয়ের অধিক বসতিপূর্ণ দেশের জন্য সহজে ও অল্প খরচে তৈরি করতে পারা এ মডেলটি হতে পারে করোনা রোধে আইসোলেশন তৈরির ক্ষেত্রে দেশের অন্যতম হাতিয়ার।

প্রকৌশলীদের তৈরি এ নকশাসহ পরিকল্পনাটি এক-দুইদিনের মধ্যে বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও খুলনা সিভিল সার্জনের কাছে উপস্থাপন করবেন বলে জানান তারা।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, তরুণ প্রকৌশলীরা সর্বদাই নিমগ্ন থাকেন নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য, যেখানে পিছিয়ে নেই আমাদের দেশের তরুণ প্রকৌশলীরাও। কুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী মাহফুজ-বিন-মঈন স্বপ্নীল ও তানবিবুর রহমান তুনান অল্প জায়গায়, স্বল্প খরচে মানুষের জন্য কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা তৈরির পরিকল্পনা একটি ভালো পরিকল্পনা হতে পারে। সরকারের উচিত সম্ভাবনাময় দুই প্রকৌশলীর এ পরিকল্পনা যাচাই-বাছাই করে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।