ঢাবি ছাত্রের চোখে যেভাবে করোনা মোকাবিলায় সফল দক্ষিণ কোরিয়া

করোনাভাইরাসে বিশ্বের যে দেশগুলো সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে তারমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া অন্যতম। সেখানে এ পর্যন্ত ৯ হাজার ৩৩২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১৩৯ জনের। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন চার হাজার ৫২৮ জন।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আর সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনার প্রকোপ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে। শুধু এ ধরণের পদক্ষেপই নয়, নাগরিকরা নানা ধরণের নির্দেশনা পালন করায় এ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় কয়েক বছর ধরে অবস্থান করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মো. নুরনবী শাহিন। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন তিনি। সেখানকার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’কে বিস্তারিত জানিয়েছে শাহিন। এসময় দক্ষিণ কোরিয়া কীভাবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করছে, নিজ অভিজ্ঞতা তেকে তা বর্ণনা করেছেন তিনি।

নুরনবী শাহিন বলেন, ‘বের হওয়ার আগে সর্বপ্রথম বাসায় স্যানিটাইজার আছে, সেগুলো দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিই। এরপর শপিংমল, অফিস, থানা বা যেখানেই যাই সেখানে স্যানিটাইজার রাখা আছে। সেগুলো ব্যবহার করি। আবার সবাই বাসায় ফিরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে নিই।’

এসময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মোবাইলগুলো বাসায় ফিরে অবশ্যই পরিষ্কার করে নিতে হবে। আর বাংলাদেশে টাকার ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি, যেটা দক্ষিণ কোরিয়ায় কম। বাংলাদেশে টাকা ব্যবহারে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে, গোনার সময় কোনভাবেই মুখে হাত দেয়া যাবে না। এটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।’

অস্থায়ী তাবুতে কয়েকজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বাইরে গেলে অবশ্যেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে বের হই। আবার বাসায় ফিরলে সবকিছু জীবানুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করে নিই। বিশেষ করে মোবাইল ফোন অবশ্যই পরিষ্কার করি। তারপর সেগুলো ব্যবহার করি। এছাড়া বাসায় সবসময় ব্যবহারের জন্য স্যানিটাইজার রয়েছে। বাড়িতে ফিরে পরিধেয় পোশাকটা সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে ফেলি। এটা সবচেয়ে ভালো হয়, যদি প্রতিদিন ধুয়ে আলাদা পোশাক পরিধান করা যায়।’

গণপরিবহন ব্যবহারের বিষয়ে নুরনবী শাহিন বলেন, ‘পাবলিক ট্রান্সপোর্টেও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রয়েছে। সবার সেগুলো ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। সেগুলো সবসময় পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত করা হয়। এছাড়া যাত্রী ছাউনিগুলোও জীবানুমুক্ত রাখা হচ্ছে। এমনকি গাড়িগুলো চলার সময়ও পুরোপুরি জীবানুনাশক দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়। পাল্লা দিয়ে কেউ বাসে ওঠার চেষ্টা করে না।’

তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল স্টেশনের বাইরে এবং ভেতরে সবসময়ই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। পাশাপাশি সেগুলো সবসময় জীবানুনাশক দিয়ে জীবানুমুক্ত করা হচ্ছে।’

একটি বাস জীবানুমুক্ত করা হচ্ছে 

করোনাভাইরাসের পরীক্ষার বিষয়ে শাহিন বলেন, ‘যেকোন হাসপাতালেই করোনাভাইরাস পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি রাস্তার পাশে ছোট ছোট তাবু করে কিছুক্ষণ পরপরই পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মানুষ চাইলেই সেখান থেকে করোনা পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন।’

অফিসে সুরক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিটা অফিসের প্রতি ডেস্কে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া আছে। সেগুলো সবার হাতে লাগানো বাধ্যতামূলক। আবার ফেরার সময়ও সেগুলো সবাই ব্যবহার করে তবেই অফিস থেকে বের হন।’

রাস্তার পাশে সর্বত্র তাবু টাঙিয়ে এভাবেই করোনাভাইরাস
পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে