মাস্ক ও লিফলেট বিতরণ করলেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন

করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় দেশব্যাপী জনগণের মাঝে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এরই ধারাবাহিকতায় আজ গাইবান্ধায় মাস্ক ও জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন।

মাস্ক ও লিফলেট বিতরণের সময় আরোও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাকিরুল করিম হিরণ, রিসাদ রায়হান রুবেল, রিয়াজ মাহমুদ, খোকন মিয়াসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

শ্রমজীবী অসহায় মানুষদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মাস্ক ও লিফলেট বিতরণের পর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন বলেন, অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। সারা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতৃবৃন্দ মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও লিফলেট নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস এখন বিশ্বব্যাপী মহামারীতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন জীবন হারিয়েছেন যা রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত। এই সংকটকে প্রশমিত করার জন্য সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। জনগণের সচেতনতাই পারবে এসব উদ্যোগকে সফল করে করোনা সংকট দূরীভূত করতে। বাংলাদেশ ঘনবসতি দেশ হওয়ার কারণে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। জনগণের সচেতনতা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। যদি আমরা সচেতন না হই সরকারের একক চেষ্টা দ্বারা কখনোই এই সংকট প্রশমিত হবে না।

এসময় তিনি বলেন, সম্প্রতি সরকার কর্তৃক সকল অফিস ছুটি ঘোষণার পর কর্মজীবীদের উচিত ছিলো ঢাকায় অবস্থান করা। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম গ্রামে আসার জন্য পাবলিক পরিবহনগুলোতে যাত্রীদের অনেক ভিড়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি হওয়ার পর অনেকেই সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে গিয়েছিলেন। মানুষের এসব অসচেতনতা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকে আরোও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ছুটি পাওয়ার পর শহরের বাসায় অবস্থান না করে গ্রামে আসায় এই ঝুঁকি আরো বেড়ে গেছে। দেশ ও জাতির স্বার্থে সরকারের নির্দেশনা সবাইকে এখন মেনে চলতে হবে। জনগণের মাঝে আতংক সৃষ্টির জন্য অসত্য তথ্য দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উচিত ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিয়ে গণমাধ্যমে দায়িত্বশীল বক্তব্য দেয়া। করোনা সংকট নিয়ে দায়িত্বহীন বক্তব্য বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার সফল অর্জনগুলোকে ম্লান করে দিচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি দেশের শিল্পপতিদের মানবিক কারণে জনস্বার্থে এগিয়ে আসতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, ঢাবি, বুয়েট, রুয়েট, চুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরী করে ফ্রি বিতরণ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন, বাম সংগঠনগুলো করোনা সংকট মোকাবিলায় জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের বিখ্যাত বেসরকারী ব্যাংক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন বসুন্ধরা, যমুনা, প্রাণ আরএফএল, স্কয়ার, এসিআই, বেক্সিমকো, ট্রান্সকম, পারটেক্স গ্রুপ, মেঘনা ইত্যাদি গ্রুপগুলোর উচিত মানবিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে জনগণের পাশে দাঁড়ানো। দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যবসা করার পরও জনগণের বিপদে আপনারা কেনো এগিয়ে আসবেন না? পার্শ্ববর্তী ভারতে করোনা সংকটকালীন রিলায়েন্স কোম্পানী জনগণের সকল দায়িত্ব নিয়েছে। বাংলাদেশে কেনো দেশীয় বড় কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসছে না? মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিন্টনকে বিশাল অংকের ডলার দিতে পারলেও নিজ দেশের বিপদে মানুষের পাশে ড. ইউনুস কেনো নেই? দেশপ্রেম ও মানবতাবোধের জায়গা থেকে মুসা বিন সমশের, সালমান এফ রহমান, শাহ আলম, লতিফুর রহমান, নুরুল ইসলামের মতো শিল্পপতিদের এগিয়ে আসা উচিত। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, পুলিশ, চিকিৎসক, সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পিপিই সরবরাহ করা জরুরী প্রয়োজন।

এসময় তিনি বলেন, শিল্পপতিদের উচিত সরকারকে প্রয়োজনীয় মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও পিপিই দিয়ে সহযোগিতা করা। দেশে কমপক্ষে ৫০ টা কোম্পানী ও গার্মেন্টস আছে যাদের বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা টার্ন ওভার করে। এসব কোম্পানী ও গার্মেন্টসের মালিকদের উচিত দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে জনগণের পাশে দাঁড়ানো। সমগ্র দেশ লকড ডাউন হওয়ায় অনেক শ্রমজীবী মানুষ অর্থ কষ্টে থাকবে। সমাজের বিত্তবানদের উচিত এসব অসহায় মানুষদেরকে চাল-ডাল-তরকারি দিয়ে সহযোগিতা করা যাতে কেউ না খেয়ে থাকে। সচেতন থাকার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আসুন আমরা সকলেই সাধ্যমতো অসহায় মানুষদের সাহায্য করি। জনগণ, সরকার ও বিত্তবান মানুষদের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে করোনা সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি। অন্যথায় বাংলাদেশকে এই সংকটের জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।"