করোনার বন্ধেও অনলাইনে পাঠদান চলছে গাজীপুরের জাপানী স্কুলে

মহামারি আকারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ মার্চ থেকে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এই পরিস্থিতিতেও ক্লাস-পরীক্ষা নিয়মিতভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন গাজীপুরের পূবাইলে অবস্থিত ‘নারায়ণকুল ড্রিম মডেল স্কুল এন্ড কলেজ’ এবং ‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল ড্রিম স্কুল’।

গত ১৮ মার্চ থেকে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটি অনলাইনের মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। ফলে ঘরে বসেই শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারছে। করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা যাতে লেখা-পড়ায় কোনভাবেই পিছিয়ে না যায় সেজন্য এ কার্যক্রম চালু করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। 

‘স্কুল এইড জাপান বাংলাদেশের’ অর্থায়নে, জাপানের টোকিওর বিখ্যাত ‘ইকুবুনকান ইউমে গাকুয়েনের’ আদলে গড়ে ওঠা এবং সরাসরি জাপানে ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে স্কুল দুটি। একই ভবনে অবস্থিত ২০১৩ এবং ২০১৭ সালে যথাক্রমে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানদ্বয়ে বর্তমানে ১ হাজার ১০২ শিক্ষার্থী রয়েছে। এখানে বাংলা ভার্সনে ক্লাস ৬ থেকে ১২ এবং ইংরেজী ভার্সনে ক্লাস প্লে টু টুয়েলভ পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। আর শিক্ষক রয়েছে ৭৮ জন।

অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ফেসবুকে প্রত্যেক শ্রেণির সেকশনভিত্তিক একটি করে গ্রুপ খোলা হয়েছে। যেখানে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক রয়েছেন এ কার্যক্রমে তার সহায়তা দেয়ার জন্য। পুরো কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকগণও রয়েছেন।

ওই গ্রুপে ভিডিও ক্লাস আপলোড করা, লেকচার শিট প্রদান, পরীক্ষার প্রশ্ন সরবরাহ এবং উত্তরপত্র মূল্যায়ণ; পরীক্ষা নিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে উত্তরপত্রের ভুল-ত্রুটি নিয়ে ফিডব্যাক ক্লাস গ্রহণ বা মডেল উত্তরপত্র প্রদান করা হয় প্রশ্নের আলোকে।

তাছাড়া চেক শিটের মাধ্যমে এ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ যাচাই এবং শিক্ষকের সেবার দিকগুলো সংরক্ষণ করা হয়। এ কার্যক্রমে কোন দিকগুলো ভালো এবং খারাপ ছিল তা আলাদাভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় যাতে ভবিষ্যতে আরো ভালো সাপোর্ট দেয়া যায়।

এছাড়া বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকগণ প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার অভিভাবকের সাথে যোগাযোগ করে শিক্ষার্থীর সার্বিক খোঁজ-খবর নিয়ে থাকেন। ফেসবুক গ্রুপে পাঠ্যপুস্তক বহির্ভুত বিভিন্ন ধরণের বইয়ের সফট কপি আপলোড করা এবং তা পড়ার জন্য উদ্বুদ্বকরণ।

এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানদ্বয়ের অধ্যক্ষ কাৎসুশি ফুরুসাওয়া বলেন, আমরা বছরের অন্যান্য সময়ের যে ছোট-বড় ছুটিগুলো থাকে সে সময়ে যাতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার মধ্যেই থাকে সে ব্যবস্থা আমরা সবসময়ই নিয়ে থাকি। কিন্তু এবারের করোনাভাইরাসের ছুটি একটু ব্যতিক্রম। এবারের ছুটি যদিও নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে কিন্তু আমরা মনে করি এটা আসলে অনির্দিষ্ট। ঠিক কতদিন পর বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে তা বলা কঠিন। তাই আমরা পূর্বেই পরিকল্পনা নিয়েছি এই সময়টাতে শিক্ষার্থীরা যাতে কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য আমরা দূরশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে মনোনিবেশ করেছি।

তিনি বলেন, এটার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেমন উপকৃত হচ্ছে আবার আমাদের শিক্ষকমণ্ডলীদেরও ব্যতিক্রম কর্মে অংশগ্রহণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যেই অনেক অভিভাবক আমাদের এ উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন যা আমাদের আরো এরকম বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করছে। আমরা আশা করি আমাদের শিক্ষার্থীরা এর মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবে এবং তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে তারা এগিয়ে যাবে।

জানা গেছে, মহামারি আকারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ কারণে বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি শিশু-কিশোর স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আর বাংলাদেশের ৩ কোটি ৬৭ লাখ শিশু স্কুলে যাচ্ছে না। সম্প্রতি জাতিসংঘের দুর্যোগবিষয়ক ওয়েবসাইট রিলিফ ওয়েবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। তবে সংস্থাটি এ–সংক্রান্ত সব তথ্য সংগ্রহ করেছে জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) একটি প্রতিবেদন থেকে।

এই পরিস্থিতিতে ইউনিসেফ থেকে বিশ্বের শিশুদের শিক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে। সম্প্রতি বিশ্বের ৭৩টি দেশের শিক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। অনলাইন বা ডিজিটাল মাধ্যমকে ব্যবহার করে এসব শিশুর কীভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীদের মতামত জানতে চেয়েছে তারা।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়কে অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম চালানোর আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তবে ইতোমধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। এদিকে, আগামী রবিবার থেকে সংসদ টিভিতে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে। এর আগে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।