শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে করোনা সুরক্ষায় নেই পর্যাপ্ত পদক্ষেপ, বাড়ছে উদ্বেগ

চীন থেকে ছড়ানো করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশেও। এটি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয়। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, কিছু প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে তাদের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা স্থগিত করেছে। পাশাপাশি অভিভাবকরাও সচেনতার পদক্ষেপ হিসেবে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরে ক্লাস করতে দেখা গেছে।

অভিভাবকসহ বিভিন্ন মহলের দাবি, তাদের সন্তানেরসুরক্ষার কথা বিবেচনা করে কিছুদিন বন্ধ রাখা হোক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মতো অবস্থা দেশে এখনো সৃষ্টি হয়নি। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছেন তিনি।

এছাড়া দেশে করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল বা কমিউনিটি সেন্টার বন্ধের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)। বুধবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন, সংস্থাটির পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফলে স্কুল বা কমিউনিটি সেন্টারগুলো বন্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে সতর্কতা হিসেবে জনসমাগম এড়িয়ে চলার কথা বলা হচ্ছে। এছাড়া এ বিষয়ে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’

কভিড নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। তাদেরঅভিযোগ, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিশেষত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী গণরুমে থাকেন তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে অনেক। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।

তবে কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, চিকিৎসা সেবাসহ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশ না করার কথা বলা হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসমাগম এড়াতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকায় তা কতটা কার্যকর হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন অনেকের।

কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রীক ফেসবুক গ্রুপে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আলোচায় উদ্বেগের কথা প্রকাশ পেয়েছে। তাদের অভিযোগ, করোনাভাইরাস ঠেকাতে প্রশাসন দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাদের সুরক্ষায় হলগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও চিকিৎসা কেন্দ্রের সক্ষমতা বাড়ানোর দাবি তুলেছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রী ছাত্র সংসদ (ডাকসু) জানিয়েছে, এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তারা আলোচনা করেছেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সকলের মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই জানিয়ে করোনা থেকে বাঁচতে সাত পরামর্শ দিয়েছেন ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী।

নিজের ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এই পরামর্শ দেন রাব্বানী। তিনি লিখেছেন, ‘করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে, সবাই মাস্ক ব্যবহার না করে, শুধুমাত্র যাদের সর্দি-কাশি, জ্বর অনুভব হচ্ছে তারা মাস্ক ব্যবহার করুন। আর কিছু নিয়ম মেনে চলুন, ইনশাআল্লাহ নিরাপদ থাকবেন’।

ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা বিশ্বাবিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করেছি। কারোর কোনো লক্ষণ যদি পাওয়া গেলে তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করবে।

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান জানান, ‘তারা সতর্ক রয়েছেন। ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশ না করার আহবান জানানো হয়েছে। সবাইকে আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে বিভিন্ন আচরণে শিষ্টাচার অনুসরণ করার কথাও বলেছেন তিনি।

একই অবস্থা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেছেন, গণরুমে চাপ কমাতে সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের অন্যান্য কক্ষে স্থানান্তর করা হয়েছে।

করোনা আতঙ্কে রাজধানীর অনেব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমেছে অনেক। জানা গেছে, করোনার কারণে রাজধানী ঢাকা কয়েকদিন ধরে জনসমাগম কমেছে। করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অভিভাবকদের আড্ডাও এখন সীমিত।

জানা গেছে, করোনাভাইরাস শনাক্তের পর রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অন্তত ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত হচ্ছে না। যারা যাচ্ছে, তাদের অনেকে মাস্ত ব্যবহার করছে।

প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা জানিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত জানাবে তা বাস্তবায়ন করবেন তারা। তবে করোনাভাইরাস শনাক্ত হলেও শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যাচ্ছে। অবশ্য গত সোমবার দোলযাত্রার ছুটি কারণেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম ছিলো।

করোনাভাইরাস নিয়ে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় নির্দেশনা পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)।অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি মাউশির অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব অফিসে পাঠানো হয়।