অ্যাপস প্রতিযোগিতা

হার্ভার্ডে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশি তিন তরুণ

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তিন তরুণ মাহামুদুল হাসান তন্ময়, সাদমান সাকিব ও রিদওয়ানুল আরেফিন অর্ণব

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত অ্যাপস প্রতিযোগিতায় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাংলাদেশি তিন তরুণ। চিকিৎসক ও রোগীর জন্যে ওই তিন তরুণের তৈরি সফটওয়্যার প্রজেক্ট ‘কিউর’ এনে দেয় স্বীকৃতি। তিন জনই বাংলাদেশের তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কিউরের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লব ঘটানোর স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। তারা মনে করেন, ডিজিটাল এই যুগে স্বাস্থ্যসেবায় এখনো ডিজিটাইজেশনের তেমন ছোঁয়া পায়নি। ভাবনার শুরু সেখান থেকেই এবং এই ভাবনা থেকেই শুরু প্রজেক্ট কিউর।

সম্প্রতি হার্ভার্ডে অনুষ্ঠিত সম্মেলন ‘হার্ভার্ড ন্যাশনাল মডেল ইউনাইটেড নেশনস-২০২০’-এ সোশ্যাল ভেঞ্চার চ্যালেঞ্জ (এসভিসি) প্রতিযোগিতায় প্রজেক্ট ‘কিউর’ নিয়ে অংশ নেন মাহামুদুল হাসান তন্ময় (ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ), সাদমান সাকিব (ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি) ও রিদওয়ানুল আরেফিন অর্ণব (বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস)।

সম্মেলনটির ৬৬তম সংস্করণে প্রায় দুই হাজার জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছেন বিশ্বের ৬০টি দেশ থেকে। এসভিসি একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রতিযোগিতা, যাতে বিশ্বব্যাপী সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে উৎসাহিত করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের অনুপ্রাণিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। সেখানে বিজয়ী হিসেবে তাঁদের রেজুলেশন প্রজেক্টের ফেলোশিপ সম্মাননা প্রদান করা হয়, এ ছাড়া প্রজেক্টটি বিশ্বসেরা বিবেচনায় রেখে এটিকে প্রকৃত রূপ দেওয়ার জন্য সার্বিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়।

অনুষ্ঠানে প্রজেক্ট কিউরের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাহামুদুল হাসান তন্ময়। সম্মেলনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তন্ময় বলেন, ‘বিশ্বের প্রথম কাতারের দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা সত্যিই আমার জন্য খুব গর্বের। প্রায় ৬০টি ভিন্ন দেশের বাছাইকৃত দুই হাজার প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সকলকে যখন প্রমাণ করে এলাম বাংলাদেশও সেরাদের একজন, সেই মুহূর্তটা সত্যি স্মরণীয় বটে। আমরা চাই আমাদের প্রজেক্ট কিউর যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে এবং বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবায় পরিবর্তন আনতে।’

সোশ্যাল ভেঞ্চার চ্যালেঞ্জ (এসভিসি) একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রতিযোগিতা, যাতে বিশ্বব্যাপী সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রদের অনুপ্রাণিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এসভিসিগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় ও যুব সম্মেলনগুলোর সঙ্গে অংশীদারিতে হোস্ট করে, যা প্রতিভাবান ও আদর্শবাদী তরুণ নেতাদের আকৃষ্ট করে। তারা সেই তরুণ নেতাদের তাঁদের প্রজেক্ট জমা দিতে আমন্ত্রণ জানায়। সেখান থেকে বাছাই করা প্রজেক্ট বিশেষজ্ঞ বিচারকদের একটি প্যানেলের সামনে তিন দিনে তিন দফায় নিজেদের প্রজেক্ট উপস্থাপন করেছে। এরপর চূড়ান্ত পর্যায়ে তারা সেরা প্রজেক্ট স্বীকৃতি দেয়, যা অর্জন করে বাংলাদেশের প্রজেক্ট ‘কিউর’।

তিন তরুণের তৈরি অ্যাপে চিকিৎসক ও রোগীর জন্য থাকছে ‘চ্যাটিং অপশন’। রোগী তার সমস্যাগুলো বলতে পারবে, চিকিৎসক সে অনুযায়ী পরামর্শ দেবেন। প্রয়োজনে তিনি তাঁর চেম্বারে দেখা করতে বলবেন। অনলাইনের মাধ্যমেই পেমেন্ট করা যাবে। চ্যাটের সঙ্গে ছবি ও ভিডিও পাঠানোর ব্যবস্থা থাকছে। অ্যাপের মাধ্যমেই নিকটবর্তী ফার্মেসি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যোগাযোগ করা যাবে।

রোগী ঘরে বসেই ওষুধ পেয়ে যাবে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট আনতে যেতে হবে না, রিপোর্ট সরাসরি অ্যাপের মাধ্যমে আপলোড হয়ে যাবে। রোগী ও ডাক্তার, দুজনই রিপোর্ট দেখতে পাবেন। ঢাকাকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে এই সুবিধা দেওয়া হবে। এ ছাড়া রোগীর সমস্যা, ওষুধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা—সব কিছুর তথ্য সংরক্ষিত থাকবে অ্যাপে। ডাক্তার একনজর দেখলেই রোগীর ‘মেডিক্যাল হিস্ট্রি’ জেনে নিতে পারবেন। কিউর মাধ্যমে ঘরে বসেই এক অ্যাপে পাওয়া যাবে সব স্বাস্থ্যসেবা।