দিল্লিতে সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩২, পরিস্থিতি থমথমে

ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে (সিএএ) কেন্দ্র করে সংঘর্ষে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩২ জনে পৌছেছে। আহত ২০০-রও বেশি। টানা চারদিন ধরে চলতে থাকা সংঘর্ষের ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যা থেকে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয় দিল্লির ভজনপুরা, মৌজপুর, কারাওয়ালনগরে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বুধবার ‘শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্ব’ বজায় রাখার জন্য সকলের কাছে আহবান জানিয়েছেন। সহিংসতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থতায় অভিযুক্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একাধিক বৈঠক করেছেন। দিল্লি পুলিশ ১৮টি এফআইআর করেছে। গ্রেফতার হয়েছে ১০৬ জন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি দিল্লি পুলিশের। এছাড়া বুধবার শহরের বিভিন্ন আক্রান্ত অঞ্চল পরিদর্শন করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। বুধবার দিল্লি হাইকোর্ট পুলিশকে আহবান জানায় উস্কানিমূলক ভাষণ দেওয়ার কারণে বিজেপির চার নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে।

এঁদের মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, স্থানীয় নেতা কপিল মিশ্র রয়েছেন। বিচারপতি এস মুরলিধর বলেন, আদালত আরও একটি ১৯৮৪-র মতো পরিস্থিতি হতে দিতে পারে না। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে জাতীয় রাজধানীর শান্তি ও শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি দ্বিতীবারের জন্য বুধবার সন্ধ্যাতেও আক্রান্ত স্থানগুলো পরিদর্শন করেন।

তিনি পুলিশের সঙ্গে জাফরাবাদে আসার পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইনশাল্লাহ, এখানে শান্তি ফিরবে।’ দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে এই প্রথম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি টুইট করে লেখেন, ‘আমার ভাই ও বোনেদের দিল্লিতে শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্ব বজায়ের আবেদন জানাচ্ছি।’

তিনি জানান, পুলিশ ও অন্য এজেন্সি মিলে এলাকার শান্তি ফেরানোর কাজ করছে। তিনি লেখেন, ‘শান্তি ও সম্প্রীতি আমাদের নৈতিকতার কেন্দ্রস্থল।’ যত দ্রুত সম্ভব শান্তি ও স্বাভাবিকতা ফেরানোর আহবান জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল শান্তি ফেরানোর আহবান জানান। তিনি জানান, এই হিংসা থেকে হিন্দু বা মুসলমান, কারওই কোনও ফায়দা হবে না। কেজরিওয়াল বলেন, ‘দিল্লির কাছে এখন দু'টো অপশন রয়েছে। হয় মানুষ একজোট হয়ে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করুক। অথবা একে অপরকে আঘাত করে হত্যা করুক।’

তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন করার আহবান জানালেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও পর্য‌ন্ত তাতে সম্মত হয়নি। কংগ্রেস সভাপতি সনিয়া গান্ধি অমিত শাহকে আক্রমণ করে বলেন, এই হিংসার দায় নিয়ে পদত্যাগ করুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পাশাপাশি অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেও আক্রমণ করেন তিনি।

দিল্লির ঘটনার জন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য উভয় সরকারকেই দায়ী করেন তিন‌ি। প্রিয়ঙ্কা গান্ধিও হিংসা ছড়ানোর জন্য বিজেপিকে অভিযুক্ত করে বিজেপি নেতাদের উস্কানিমূলক ভাষণকে ‘লজ্জাজনক' বলেন।

বুধবার সকাল থেকেই খবর মিলেছিল সহিংসতার। একটি ব্যাটারির দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হলেও তার তেমন প্রভাব সেখানে পড়েনি। ‘শ্যুট অ্যাট সাইট’ জারি করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে পুলিশ।

বুধবারের মৃত্যুমিছিলের অন্যতম নাম ছিল অঙ্কিত শর্মা। এই গোয়েন্দা বিভাগের কর্মীর মৃতদেহ একটি নর্দমার মধ্যে পাওয়া যায়। তাঁকে চাঁদ বাগের কাছে উত্তেজিত জনতা হত্যা করেছে বলে অভিযোগ।

রক্তারক্তি ও হানাহানির মধ্যেও ভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ব ও একজোট হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। জাফরাবাদ ও মৌজপুরের মাঝামাঝি একটি মহল্লায় তৈরি করা হয়েছে শান্তির পরিবেশ। সহিংসতার ফলে কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে দিল্লি। এই পরিস্থিতিতে টানা দ্বিতীয় দিনের জন্য সিবিএসই বোর্ডের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।

সরকারের তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের সময় অশান্তির পরিবেশ তৈরি করার জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবেই এই সংঘর্ষ করা হয়েছে। খবর: এনডিটিভি।