আমার পোষাকে দম বন্ধ হয়ে আসলে মুক্ত বাতাস নিন

অস্কারজয়ী সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমানের মেয়ের বোরকা পরা নিয়ে অনেকদিন থেকেই আলোচনায় খাতিজা। সম্প্রতি মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে বিষয়টি নিয়ে লেখিকা তসলিমা নাসরিন লেখেন, আমি এ আর রহমানের সংগীত খুবই পছন্দ করি। কিন্তু যখনই তার মেয়ের দিকে তাকাই আমার দম বন্ধ হয়ে যায়। একটি শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা পরিবারের সদস্য হয়েও কত সহজে ব্রেইনওয়াস হয়, এটি খুবই হতাশার। তার উত্তরে খাদিজা তাসলিমাকে লিখেছেন, আমার পোষাকে আপনার দম বন্ধ হয়ে আসলে মুক্ত বাতাস গ্রহণ করুন।

ফটো শেয়ারিং সাইট ইনস্টাগ্রামে আগুনের ছবি পোস্ট করে খাতিজা লিখেছেন, চুপ আছি তার মানে এই নয় আমি কিছু জানি না, শান্ত হয়ে আছি বলেই মেনে নিয়েছি তা নয়। আমার দয়াকে দুর্বলতা মনে করবেন না। যাদের দম বন্ধ হয়ে যায়, বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ করুন।

অপর একটি পোস্টে তসলিমা নাসরিনের পোস্টের স্ক্রিনশট প্রকাশ করে ক্যাপশনে তিনি লেখেন, বছর না ঘুরতেই এই বিষয়টি আবারো আলোচনায়। মাঝে এই দেশে অনেক কিছুই হয়ে গেছে এবং সবাই জানেন নারীরা কী পোশাক পরতে চান। ওয়াও, আমি খুবই অবাক। যখনই এই বিষয়টি আলোচনায় আসে আমার ভেতর আগুন জ্বলে ওঠে এবং অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করে।

আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো অনুশোচনা নেই এবং নিজেকে দুর্বলও মনে করি না। আমি যা তাতেই খুশি এবং গর্বিত এবং যারা আমাকে এভাবে গ্রহণ করেছেন তাদের ধন্যবাদ। সৃষ্টিকর্তা চাইলে আমার কাজই কথা বলবে। এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। অনেকেই হয়তো ভাবছেন, এই বিষয় নিয়ে কেন কথা বলছি। দুঃখের বিষয় এটি প্রায়ই আলোচনা আসে এবং এটি নিয়ে সোচ্চার হওয়া উচিত। এজন্যই এটি করেছি।

তসলিমা নাসরিনকে উদ্দেশ্য করে তিনি লেখেন, প্রিয় তসলিমা নাসরিন, আমি দুঃখিত আমার পোশাকে আপনার দম বন্ধ হয়ে যায়। দয়াকরে মুক্ত বাতাস গ্রহণ করুন। আমার দম বন্ধ হয় না, কারণ আমি যে নীতি মেনে চলি তাতে আমি গর্বিত। আমি আপনাকে পরামর্শ দিব, প্রকৃত নারীবাদ কী তা গুগল করে জেনে নিন। নারীবাদ মানে অন্য মেয়েকে হেয় করা ও কোনো বিষয়ে তার বাবাকে টেনে আনা নয়। আর কখনো আপনাকে আমার বোরকা পরা ছবি পাঠিয়েছি কিনা আমার মনে পড়ে না।

এদিকে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তাসলিমা নাসরিন লিখেছেন, বোরখাওয়ালীরা প্রায়ই এম্পাওয়ার শব্দটা ব্যবহার করে। তারা বলতে চায় তারা শক্তিময়ী, ক্ষমতাময়ী, স্বাধীন, এবং স্বনির্ভর। নিজের চেহারাটাই লুকিয়ে রাখতে হয় আর স্বাধীনতার বড়াই। কেন তারা শরীর আড়াল করে? কারণ তারা মনে করে পুরুষেরা সব কামুক, বর্বর, যৌন নির্যাতক, ধর্ষক; তাদের চুল আর ত্বক দেখা মাত্র পুরুষেরা তাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়বে, এর ফলে তারা এঁটো হয়ে যাবে। এঁটো হয়ে গেলে মুশকিল, কারণ স্বামী ফ্রেশ খাবে, এঁটো খাবে না। বোরখাওয়ালীরা নিজেদের খাদ্যবস্তু বলে বিশ্বাস করে। বোরখাওয়ালিরা বিশ্বাস করে, আল্লাহ নামের এক নিরাকার নুর আসমানে বসে আছেন, যিনি ছ দিনে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড বানিয়েছেন, যিনি মানুষকে খুব ‘ভালোবাসেন’, কিন্তু মানুষ যদি তাকে না ভালোবাসে, তার আদেশ না মানে, তাহলে তিনি তাদের দোযখের আগুনে পোড়াবেন। মেয়েরা যদি পর্দা না করে, তাদেরও দোযখের আগুনে পোড়াবেন।

রূপকথার এই গল্পগুলোকে সত্যি মনে ক'রে বাকিজীবন এই এম্পাওয়ারওয়ালীরা নিজেদের অন্ধকারেই ফেলে রাখতে দ্বিধা করছে না।