সৌদি তরুণ-তরুণীদের গোপন প্রেমের গল্প

কট্টরপন্থি সমাজব্যবস্থার দেশ হিসেবেই পরিচিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। প্রেমতো দূরের কথা অনাত্মীয় নারী-পুরুষের মেলামেশাও অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় দেশটিতে। ক্ষেত্রবিশেষে অবস্থা এতোটাই ভয়াবহ যে, ভ্যালেন্টাইন'স ডে-তে লাল গোলাপ কিংবা লাল রংয়ের সজ্জা-সামগ্রী বিক্রির ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল দেশটির ধর্মীয় পুলিশ।

কট্টরপন্থি দেশটিতে বিবাহ-বহির্ভূত প্রেমকে বিবেচনা করা হয় “মৃত্যুদণ্ড যোগ্য অপরাধ” হিসেবে।

সঙ্গীর আশা দেশটিতে এক ধরনের দূরাশা। তাই ছেলেরা গাড়ির জানালায় নিজেদের ফোন নাম্বার লিখে রাখেন প্রেয়সীর দেখা পাওয়ার আশায়!

তবে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের উদারপন্থি পদক্ষেপের কারণে এখন অবশ্য নখদন্তহীন হয়ে পড়েছে ধর্মীয় পুলিশ। তাই একটু-আধটু হলেও তরুণ যুগলরা ক্যাফে আর রেস্টুরেন্টে ডেটিং করতে পারেন।

আর ধনীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওয়েবসাইট ও অ্যাপসের মাধ্যমে অভিসারসঙ্গী খুঁজে বেড়ান।

প্রেমিকার সঙ্গে মিউজিক ক্যাফেতে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন তরুণ এক সৌদি সিনেমা নির্মাতা। তিনি বলেন, “লাল গোলাপ বিক্রিকে গণ্য করা হতো মাদক বিক্রির মতো অপরাধ হিসেবে।”

তার প্রেমিকা বলেন, “ক্যাফেতে এভাবে পাশাপাশি বসে প্রিয়জনের সঙ্গে চোখাচোখিও একসময় চিন্তাতীত ছিল।”

 “আর এখন মেয়েরাই ছেলেদের বলছে বাইরে নিয়ে যেতে।”

তবে অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে এমনটা বলার সুযোগ নেই। কারণ দেশটির বয়োজ্যেষ্ঠ্যরা এখনও বিয়ের আগে প্রেমকে স্বীকৃতি দিতে নারাজ।

এমতাবস্থায়, সৌদি তরুণ-তরুণীদের অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন এক অদ্ভুত দ্বৈত জীবনযাপনে।

 গোপনীয়তা আর মিথ্যার আশ্রয়

সৌদি সমাজে প্রতিনিয়ত বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হন তরুণ যুগলরা। রাজধানী রিয়াদের ২৭ বছর বয়সী তরুণী সামিরা (ছদ্মনাম) তাদেরই একজন।

একবার প্রেমিকের জন্মদিনে হাতে লেখা বার্থডে কার্ডের সঙ্গে কিছু উপহার দিয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি টের পেয়ে ওই তরুণের মা সেগুলোকে পায়ে পিষে নষ্ট করেন। সেইসঙ্গে সামিরাও ভয় পান নিজের বাড়িতে বিষয়টি ধরা পড়ে যাওয়ার। কারণ, সৌদি সমাজে পারিবারিক সম্মান নির্ভর করে মেয়েদের “সতীত্বের” ওপর। 

সেবার কোনোমতে মাকে বোঝাতে সক্ষম হলেও ওই তরুণের পরিবার প্রেমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা যেন আরও সাহস যোগায় তাদের। এবার ব্যবসায়িক কাজের অজুহাতে তারা ডেটিংয়ের জন্য পাড়ি জমান দুবাইয়ে।

সামিরা বলেন, “মানুষের কটূক্তির ভয়ে সবাই সম্পর্কের কথা গোপন করে।”

এমনকি কোনো কোনো নারীর পেছনে নজরদারির জন্য পরিবারের লোকজন পেশাদার গোয়েন্দাও ভাড়া করে থাকেন। কারণ প্রেমিকের সঙ্গে মেলামেশাকে এখনও বিবেচনা করা হয় মেয়েদের “সতীত্বহানিকর” হিসেবে।

পরতে পরতে বিপদ

তবে চলমান উদারপন্থি সংস্করণ সত্ত্বেও বিবাহ বহির্ভূত ঘনিষ্ঠতা রীতিমতো অপরাধ। আর তাই এ ধরনের সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটলেও থেকে যায় ঝুঁকি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সৌদি নারীর ভাষ্য, “খারাপভাবে বিচ্ছেদ হলে সেটা সত্যিই চিন্তার বিষয়। কারণ নারীদের ভয় থাকে, যুগল ছবি অথবা ভিডিও ধারণ করলে? অথবা প্রাক্তণ প্রেমিক পরিবারকে বলে দিলে? অথবা, বাড়িতে হাজির হলে?”

ছেলেদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি কম ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কারণ, যুগলরা হোটেল রুম ভাড়া করতে গেলেও প্রমাণ দিতে হয় বিয়ের প্রমাণপত্র। ব্যর্থ হলে ঝামেলা এসে পড়ে ছেলেটির ঘাড়ে।

আর চুমু খাওয়া তো সমাজের চোখে বড় ধরনের অপরাধ বা হারাম!

নাসের নামে এক তরুণ ব্যবসায়ীর ভাষায়, “নিজের গাড়ির ভেতরে ডেটিং সারাই সবচেয়ে নিরাপদ। ডেটিং বিষয়টির পরতে পরতে ঝুঁকি।”