ভিকারুননিসায় অতিরিক্ত ৮৫৯ শিক্ষার্থী ভর্তির চেষ্টা!

অতিরিক্ত শিক্ষার্থী থাকার পরও আরও ৮৫৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ নিয়েছিল ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। তবে প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও আদালতের আদেশে সে প্রক্রিয়া বর্তমানে বন্ধ আছে।

তবে অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ক্যাম্পাসে দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত এ ভর্তির প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে। ২০২০ শিক্ষাবর্ষের জন্য বিভিন্ন শ্রেণিতে ভর্তি করতে গত ১৩ জানুয়ারি বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এতে মূল শাখা ছাড়াও শাখা ক্যাম্পাসে ভর্তির জন্য আসন বণ্টন করা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে ভিকারুননিসায় অতিরিক্ত ৪৪৩ জন ছাত্রী ভর্তির অভিযোগে সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত। তারা এখনও ওই প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে।

এবার প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, মূল শাখায় বাংলা মাধ্যমে দ্বিতীয় শ্রেণির প্রভাতী শিফটে সাত জন, দিবা শিফটে ছয় জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১৮ ও ২৬ জন, চতুর্থ শ্রেণির দিবা শিফটে ২০ জন, পঞ্চম শ্রেণির প্রভাতীতে ৩০ ও দিবায় চার জন, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ২০ ও ৩০ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ১৬ ও ৩৫ জন, অষ্টম শ্রেণিতে ২৭ ও ২৭ জন এবং নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাতীতে ২২ জন ও দিবায় ৪৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

অন্যদিকে ইংরেজি মাধ্যমে দ্বিতীয় শ্রেণিতে দিবায় ১৭ জন, পঞ্চম শ্রেণিতে দিবায় ১৬ জন, সপ্তম শ্রেণিতে দিবায় ছয় জন এবং নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে দিবায় ১০ জন ছাত্রী ভর্তি করানোর বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। শুধু মূল ক্যম্পাসে ৭৫ জনকে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এছাড়া ধানমন্ডি, বসুন্ধরা, আজিমপুর ক্যম্পাসে মোট ৮৫৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন নেয়া হয়।

গত ১৬ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে ২১ জানুয়ারি রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত অনলাইনে এ আবেদন গ্রহণ করা হয়। ফি ছিল ২০৫ টাকা। ভর্তি পরীক্ষা হয় গত ২৪ জানুয়ারি।

ভিকারুননিসার এক ছাত্রীর অভিভাক আব্দুল মজিদ সুজন বলেন, ‘গভর্নিং বডির সদস্যরা চাপ দিয়ে বাড়তি শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেছেন। একজন শিক্ষক প্রতিনিধিও এতে জড়িত। লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করতে আবারও ছাত্রী ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে গভর্নিং বডি।’

অভিভাবক ফোরামের সভাপতি আনিসুর রহমান আনিস বলেন, ‘৪৪৩ জন ছাত্রী অতিরিক্ত রয়েছে। এরপরও আর্থিক সুবিধার জন্য আবারও ভর্তির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত ভর্তি বন্ধে হাইকোর্টে রিট করলেও তা আমলে নেয়নি তারা। উচ্চ আদালত ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে তার কয়েকদিন পর ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।’

এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফওজিয়া রেজওয়ান বলেন, ‘গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে, পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তবে ভর্তির বিষয়টি অনিশ্চিত। ভর্তি করানো না হলে ২০০ টাকা ফি ফেরত দেওয়া হবে।’

উচ্চ আদালতে ভর্তি প্রক্রিয়া স্থগিত হলেও কেন পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আদালতের কাগজ পাওয়ার আগে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। কাগজ হাতে পাওয়ার পর এ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।’

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভর্তি প্রক্রিয়া প্রথমে স্থগিত এবং পরে বাতিল করা হয়েছে।’