কুর্মিটোলায় ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ফেঁসে গেছেন ঢাবির এই ছাত্র

গত ৫ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় আগামী সপ্তাহে চার্জশিট দাখিল করা হবে। এ ঘটনায় জড়িত না থাকলেও ফেঁসে গেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অথিত সরকার। তার বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে।

এ ঘটনায় যাচাই-বাছাই না করে সংবাদ প্রকাশ করায় ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা হওয়ায় তার রিমান্ড শেষে এরইমধ্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ডিবি জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অথিত নিজেকে বেঙ্গলিপেজেন্টডটকম-এর উপদেষ্টা সম্পাদক পরিচয় দিলেও ওই পোর্টালের কোনো অফিস নেই। কোনো জনবলও নেই। অথিত একটি ওয়েবসাইট নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে কিছু টাকা দিয়ে পোর্টালটি বানিয়েছে। তার মোবাইল ফোন থেকেই সেটি পরিচালনা করা হয়। কোথাও কোনো চাঞ্চল্যকর খবর পেলে তা কপি করে সরাসরি তার ওয়েবসাইটে দেয়া হয়। পরে সেটা দেয়া হয় ইউটিউব চ্যানেলে।

ডিবি পুলিশের কাছে অথিত সরকার জানিয়েছেন, আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে তিনি ইউটিউব চ্যানেলে গুজব ছড়ান। তার ধারণা ছিল ইউটিউব চ্যানেলটি ভাইরাল হলে সেখান থেকে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জন করতে পারবেন। কারণ ইউটিউব কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ ভিউয়ার্স চ্যানেলের মালিককে পেমেন্ট করে থাকে। ডিবি জানায়, অথিতের ধারণা সঠিক ছিল। কারণ, ভিডিওটি ইউটিউবে দেয়ার পর দ্রুত অনেকসংখ্যক লাইক, শেয়ার থাকে। এতে তার অ্যাকাউন্টে গুগলের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বেশকিছু ডলার যোগ হয়েছে।

অন্যদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় আগামী সপ্তাহে চার্জশিট দিতে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। চার্জশিটে ধর্ষক মজনুকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। মজনুকে গ্রেফতারের সময় খায়রুল ইসলাম ও অরুণা বিশ্বাসকে আটক করা হয়েছিল। চার্জশিটে তাদের দুজনকে সাক্ষী করা হয়েছে। মজনুই যে ঢাবি ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছিল এবং ধর্ষণের পর তার মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়েছিল, সেই ফোনই অরুণা ও খায়রুল কিনেছিল তা তারা আদালতে জানিয়েছেন।

ডিবি সূত্র জানায়, মজনু ধর্ষণের কথা অকপটে স্বীকার করেছে। সে জানিয়েছে, ঝোপের পাশে সেদিন সে অপেক্ষা করছিল। কিক্ষুক্ষণ পরেই ওই ছাত্রী পায়ে হেটে যাচ্ছিলেন। এ সময় মেয়েটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ঝোপের ভেতরে নিয়ে ধর্ষণ করে। ওই সময় ফুটপাতে আর কেউ ছিল না।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) উপকমিশনার মো. মশিউর রহমান বলেন, মজনু একাই মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে। একাধিক প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। মজনুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, ধর্ষণের শিকার মেয়েটির দেওয়া তথ্য, মজনুর পূর্বের বিকৃতি মানসিকতার ইতিহাস এবং সবশেষে ডিএনও পরীক্ষার প্রতিবেদন মিলিয়ে প্রমাণ হয়েছে যে, মজনু ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে।

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, এখন আমরা চার্জশিট প্রস্তুতের কাজ করছি। আগামী সপ্তাহের যে কোনোদিন মজনুর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।

গত ৫ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলার অদূরে শেওড়া এলাকায় বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে উঠে রওনা হন ওই ছাত্রী। সন্ধ্যার ৭টার দিকে ভুল করে এক স্টপেজ আগেই কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নেমে যান তিনি। পরে সেখান থেকে ফুটপাত ধরে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। ওই সময় ধর্ষণের শিকার হন তিনি।

রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফিরলে প্রথমে বান্ধবীর বাসায় যান ভিকটিম এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি হন। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে পরদিন ক্যান্টনমেন্টন থানায় অজ্ঞাতনামা একজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এর তিনদিন পর র‌্যাব-১ এর একটি দল ধর্ষক মজনুকে শ্যাওড়া রেল ক্রসিং থেকে গ্রেফতার করে।