ঢাবি-বুয়েট, কীসের এত ইগো আপনাদের?

শুনলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর বুয়েট নাকি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা মেনে নিতে চাইছে না? বছরের পর বছর আমরা অল্প কিছু মানুষ পেপার-পত্রিকায় এই নিয়ে লিখে যাচ্ছি। এইবার যখন মনে হচ্ছিলো সব কিছু ঠিক আছে, হয়ত হয়ে যাবে-ঠিক তখন'ই শুনতে পাচ্ছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর বুয়েট বেঁকে বসেছে!

প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভর্তি পরীক্ষা আসলে'ই ছাত্র-ছাত্রী'দের ভোগান্তি শুরু হয়। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় দৌড়িয়ে বেড়াতে হয়। কখনো কখনো এক'ই সময়ে দুই-তিনটা বিশ্ববিদ্যালয়ে'র ভর্তি পরীক্ষা'র ডেট দিয়ে ফেলে!

ভোগান্তি'র কথা বাদ'ই দিলাম। এই এতো গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফর্ম আর গাড়ি ভাড়া দিয়ে দূর থেকে পরীক্ষা দিতে যাবার মত সামর্থ্য তো বাংলাদেশের অনেক অভিভাবক এবং ছাত্র-ছাত্রী'দের নেই।

আমাকে’ই তো কয়েক বছর আগে এক ছেলে লিখেছিল

-স্যার, আমি গ্রাম থেকে এইচএসসি পাশ করেছি। রেজাল্ট খুব একটা ভালো না। সামর্থ্যও নেই বিভিন্ন জেলায় গিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবার। আমি কি পাশের কলেজে পাস কোর্সে ভর্তি হয়ে যাবো?

আমি তাকে বলেছিলাম- তুমি সব গুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেও। দেখবে ঠিক'ই কোথাও না কোথাও চান্স পেয়ে যাবে।

ছেলেটা অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে পরীক্ষা দিয়েছিল এবং দেশের একটা নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো একটা সাবজেক্টে চান্সও পেয়েছে।

সবা'ই তো আর এই টাকা জোগাড় করতে পারবে না।

সব গুলো বিশ্ববিদ্যালয় এক সাথে একটা সমন্বিত পরীক্ষা নিলে আপনাদের সমস্যা কোথায়?

সমস্যা তো অবশ্য'ই আছে। পরীক্ষা উপলক্ষে যেই টাকাটা আপনারা শিক্ষকরা পান; সেই এক্সট্রা টাকা থেকে তো আপনারা বঞ্চিত হবেন। এই জন্য আপনারা রাজি হচ্ছেন না।

লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রী'দের দিকে তাকানোর সময় আপনাদের নেই। ওদের কষ্ট, ভোগান্তি কোন কিছু'ই আপনাদের চোখে পড়ছে না। আপনারা আছেন কিভাবে এক্সট্রা টাকা কামানো যায় আর আপনাদের ইগো নিয়ে!

শুনলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর বুয়েট রাজি না হওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন

-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর বুয়েট যদি তাদের ইগো নিয়ে বসে থাকে, তাহলে সেটা খুব'ই দুঃখজনক।

কিসের এতো ইগো আপনাদের?

আপনারা দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়, তাই তো? আপনারা কেন অন্যদের সাথে পরীক্ষা নেবেন! তাই তো?

আচ্ছা, আসলে আপনারা কোন হিসেবে দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়?

স্বাধীনতার পর এই দেশ, জাতি, সমাজের জন্য আপনাদের অবদান আসলে কি?

কয়টা গবেষণা করেছেন? কয়টা বুদ্ধিজীবী তৈরি করেছেন, যারা দেশের জন্য অবদান রাখছে নিঃস্বার্থ ভাবে?

এই যে চীনে করোনা ভাইরাস এখন ছড়িয়ে পড়েছে, চায়নার বিজ্ঞানীরা কিন্তু ঠিক'ই আগে থেকে গবেষণা করে সরকার'কে সতর্ক করেছিল। তাদের সরকার সেটা শুনে'নি।

আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর বুয়েটের শিক্ষক’রা?

আপনারা দেশ এবং সমাজ নিয়ে এমন কোন কিছু কি কোন দিন বলেছেন গবেষণা করে?

এই যে দেশে ধর্ষণ বেড়ে গিয়েছে। তরুণ সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে, সামাজিক ভারসাম্য কমে যাচ্ছে; আপনারা কি এই নিয়ে অতীতে কোন কিছু বলেছেন? কিংবা ভবিষ্যতে কি হতে যাচ্ছে এই নিয়ে?

আপনারা তো আছেন কিভাবে সরকার’কে তেল মেরে পদ-পদবী পাওয়া যায় আর "আমরা'ই সেরা" এই ভাব নিয়ে!

আপনাদের ছাত্র’রা নিজদের বন্ধুকে পিটিয়ে হত্যা করেছে কয়দিন আগে এই বুয়েটের হলে।

আরেকদল কিছুদিন আগে দুই ভাগে মারামারি করে দলে-বলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে!

আপনারা তো এইসব'ই করে বেড়াচ্ছে। এর বাইরে আসলে আপনারা আর কি পারেন?

তাহলে এতো ভাব কিসের আপনাদের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিতে।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো'র বেশিরভাগের’ই এক'ই রকম অবস্থা। এরা কেউ ছাত্র-ছাত্রীদের কথা চিন্তা করে না।

আমরা যারা বিদেশে শিক্ষকতা করছি; এইসব দেখছি এবং নিজেদের মতামত দিচ্ছি, কেউ তাদের মতামত শুনছে না কিংবা শুনতে চাইছে না। কারন আমরা তো কাউকে তেল মারছি না। আমাদের তো কোন নিজদের ফায়দা নেই। অনেকটা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াচ্ছি। আজকে আরেকটা মতামত দেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট থেকে শুরু করে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলো’র এই টাইপের ইগোধারী শিক্ষকদের ছুড়ে ফেলুন। আমাদের মেধাবী শিক্ষকের দরকার নেই। যেই শিক্ষক’রা হত্যাকারী তৈরি করে; যেই শিক্ষক’রা ছাত্রদের মাঝে ইগো তৈরি করে, যেই শিক্ষক’রা মানুষ তৈরি করার পরিবর্তে অমানুষ তৈরি করছে; সেই শিক্ষকদের দরকার নেই এই দেশে। আগে তো মানুষ হতে হবে। এরপর না হয় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক কিংবা বিজ্ঞানী।

লেখক: আমিনুল ইসলাম, বর্তমানে ইউরোপে শিক্ষকতা করছেন