ক্রাইম পেট্রোলকেও হার মানাচ্ছে রাবি ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেইলিং

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হওয়ার পর এ ব্যাপারে ভয়ংকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। এ ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার দুর্বৃত্তরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। যে ঘটনা ভারতীয় টিভির ক্রাইম পেট্রোলের ধরণের বলে পুলিশ জানিয়েছে।

সোমবার মতিহার থানা পুলিশ রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করে মূল অভিযুক্ত মাহফুজকে ২ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। এছাড়া ধর্ষণের ভিডিও উদ্ধার করেছে।

ওই ছাত্রী ভয়ংকর ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন। তাকে কয়েক দফা ধর্ষণের ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করা হয়। ছাত্রীটির প্রেমিক বন্ধুদের দিয়ে এ ঘটনা ঘটায়। ভিডিও দেখিয়ে ছাত্রীটির নিকট থেকে টাকাও আদায় করা হয়েছে টাকা।

এ ঘটনায় গত শনি ও রোববার রাতে রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র মাহফুজুর রহমান সারদসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিরা বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র। তারাও দ্বিতীয়বর্ষে অধ্যয়নরত রয়েছেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৪ জানুয়ারি মাহফুজ ওই ছাত্রীকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট কাজলার সাঁকারা এলাকার ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। পরে পদ্মার তীরে ঘুরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে মেসে ফিরে যায়। সেখানে মাহফুজ রুমে আটকে তাকে ধর্ষণ করে।

ওই সময় রুমে প্রবেশ করে মাহফুজের ৫ বন্ধু বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রাফসান আহম্মেদ, প্লাবন সরকার, জয়, জীবন ও বিশাল তালুকদার। ছাত্রীটি তাদের কাউকে আগে দেখেননি। যুবকরা পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে মাহফুজ ও ছাত্রীটিকে থানায় নেয়ার ভয় দেখায়। একপর্যায়ে অস্ত্রের মুখে কয়েকবার ওপেন সেক্স করতে বাধ্য করে। সেই দৃশ্য তারা মোবাইল ফোনে ভিডিও করে।

পুলিশ সূত্র জানায়, ছয় আসামির নাম-ঠিকানা ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। মূল অভিযুক্ত মাহফুজুরের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। আর জয় ও প্লাবনের বাড়ি জয়পুরহাট। রাফসানের বাড়ি রাজশাহীর বহরমপুর মহল্লায়। এছাড়া জীবনের বাড়ি রাজশাহীর কাজলায়। আর বিশালের বাড়ি নাটোর।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিহার থানার এসআই আবদুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, পাঁচ যুবক ছাত্রীটিকে মাহফুজের সঙ্গে অন্তত তিনবার সেক্স করতে বাধ্য করে। রাত ২টার দিকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে তারা। কিন্তু এত রাতে টাকা চাইতে পারেনি মেয়েটি।

শেষে বান্ধবী ও অন্য বন্ধুদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা বিকাশ নম্বরে নিয়ে তা যুবকদের নম্বরে ট্রান্সফার করে দেন। একপর্যায়ে রাতেই ছাত্রীটিকে বের করে দেয়া হয়। পরের দিন আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করে তারা।

গ্রেফতার জয় ও জীবন রোববার বিকালে রাজশাহী মহানগর হাকিমের আদালতে বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তারা বলেছে, ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মাহফুজ এবং তারা পরস্পরের বন্ধু। আগের দিন মাহফুজ, প্লাবন, রাফসান, বিশাল, জয় ও জীবন মেসে বসে পরিকল্পনা করে তারা ব্ল্যাকমেইল করবে।

ছাত্রীটির পরিবারের আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো। সে কারণে ভালো টাকা পাওয়া যাবে। পরিকল্পনা মোতাবেক বান্ধবীকে ডেকে নিয়ে পদ্মার ধারে ঘুরে বেড়ায় মাহফুজ। এরপর মেসে মেয়েটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেক্স করে। পরিকল্পনা মতো তারা ঘটনা বুঝতে পেরে মাহফুজের রুমে ঢুকে দু’জনকে আপত্তিকর অবস্থায় পায়।

এরপর পুলিশ পরিচয়ে মাহফুজের সঙ্গে ছাত্রীটিকে তিনবার সেক্স করতে বাধ্য করে। তারা সবাই মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করে। রাতে নেয়া ১০ হাজার টাকার মধ্যে তিন হাজার টাকা পরদিন মাহফুজকে দেয়।

জীবন তার জবানবন্দিতে বলেছে, মাহফুজ গরিব পরিচয় দিয়ে সচ্ছল পরিবারের মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে। এরপর পরিকল্পনামতো এমন ব্ল্যাকমেইল করে। আগেও কয়েকটি মেয়েকে এমন ব্ল্যাকমেইল করেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মাহফুজই মূল হোতা। সে আগেও এমন কাজ করেছে অন্য মেয়েদের সঙ্গে। মাহফুজ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেকথা স্বীকার করেছে। আর কোন কোন মেয়ের সঙ্গে এমনঘটনা ঘটানো হয়েছে তা উদ্ঘাটনে তাকে দুই দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে।’

পুলিশ জানায়, ছাত্রীটি ঘটনার পরদিন নিজ বাড়িতে চলে যান এবং পরিবারের কাছে সব খুলে বলেন। বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে ২৭ জানুয়ারি রাতে মতিহার থানায় ছয় ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পরদিন ছয় ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

আবদুর রহমান জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে ছাত্রীটির ফরেনসিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখনও  প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

কাজলার সাঁকারা এলাকার মেস মালিক আবুল হাসান বলেন, তিন মাস আগে মাহফুজকে মেস ভাড়া দেয়া হয়েছিল। তবে চালচলন ভালো না হওয়ায় ডিসেম্বরে ছেড়ে দিতে বলা হয়। পরীক্ষার কথা বলে তারা জানুয়ারি পর্যন্ত সময় নেয়। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোনো ছাত্রকে এভাবে বাড়ি ভাড়া দেবেন না বলেও তিনি জানান।