আজহারী যেন এক হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা!

মিজানুর রহমান আজহারী
মিজানুর রহমান আজহারী

কিছুদিন আগেও ওয়াজ মাহফিল মানে মানুষ মনে করত গভীর রাতে ইসলামিক আলোচনা। তবে সেই ধারণাকে পাল্টে দিয়েছেন মিজানুর রহমান আজহারী। সকাল-দুপুর, সন্ধ্যা-রাত, যেখানেই মাহফিল করতে যাচ্ছেন মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তার ওয়াজ শোনার জন্য।

ঠিক যেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো! তার নাম শুনলেই মানুষের মাঝে যেন এক উন্মাদনার সৃষ্টি হয়। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ, শিক্ষিত কিংবা অক্ষরজ্ঞানহীন সকলেই ছুটে আসেন তার ওয়াজ শুনতে। গবেষক থেকে প্রভাষক, ডাক্তার থেকে প্রফেসর, সাংবাদিক থেকে প্রাবন্ধিক, আস্তিক অথবা নাস্তিক! সবার মুখেই আলোচনা অথবা সমালোচনা।

তিনটি ভাষায় অনল পারদর্শী, মাার্জিত বলার ভঙ্গি, রেফারেন্সের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ্রোতা ধরে রাখার ব্যাপক দক্ষতা তাঁকে তাঁর বিরোধীদেরকেও সমানভাবে টানছে।

গত ৫০ বছরের ওয়াজের ধারণাই পাল্টে দিয়েছেন তিনি। যুক্তি দিয়ে কীভাবে তা খণ্ডন করতে হয় তা সঠিক ভাবেই জানেন তিনি। সমাজে প্রচলিত বিষয়গুলো প্রাধান্য দিয়ে ওয়াজ করছেন। সামাজিক অনাচার অসঙ্গতি তাঁর আলোচনার মুখ্য বিষয়।

বয়স ৩০ পার হয়নি। কোরআনিক সায়েন্স ইন এমব্রয়লজি (কোরআনে ভ্রূণ তত্ত্ব) নিয়ে পিএইচডি করছেন মালয়েশিয়ার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেখতে আকর্ষণীয় ফ্যাশন সচেতন এই মানুষটার রয়েছে সুরেলা কণ্ঠ। কথাবার্তায় বেশ মার্জিত।

ক্ষমতাসীন এমপি মন্ত্রীরা তাঁকে ডাকছেন, বিশাল পুলিশের বহর তাকে প্রটোকল দিয়ে মাহফিলে নিয়ে আসছেন। আবার প্রটোকল দিয়ে নিয়েও যাচ্ছেন। তিনি আসবেন তা শুনলেই পুরো জেলায় শুরু হয় আলোচনা। অপেক্ষার প্রহর গুনতে শুরু করেন সবাই।

তিনি ওয়াজ করছেন যুবকদের যৌতুকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে, শপথ করাচ্ছেন উপস্থিত বাবা মাকেও যৌতুক না দিয়ে বিয়ে করাতে, পারিবারিক অশান্তি রোধে স্বামী স্ত্রী, বউ-শাশুড়ির সম্পর্কের সৌন্দর্য উপস্থাপন করছেন অসাধারণ ভাবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাবহারের বিষয়েও তুলে ধরছেন। নেশার কবল থেকে তরুণদের বাঁচাতে সরকার যখন পেরে উঠছে না, তখন যুবকদের আগ্রহের কেন্দ্রে অবস্থান করা এই মানুষটাকে এম্বাসেডর হিসেবে কাজে লাগানো গেলে মন্দ হতো না।

সব সরকারই বিভিন্ন সময় ধর্মীয় বিজ্ঞজনদের সহায়তা চান, বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করতে বলেন। দিকনির্দেশনা দেন। সে হিসেবে মিজানুর রহমান আজহারী ভাল একটা অবস্থান করে নিয়েছেন যুবকদের মধ্যে। বিপথগামী যুবকদের শৃঙ্খলিত রাখতে সমসাময়িক এই আলোচনাগুলো অত্যন্ত জরুরি।

এমন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার সুরে মুগ্ধ হয়ে সমাজ থেকে কুসংস্কার বিলুপ্ত হবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।