নামের মিলের কারণে জেল খাটছেন রাবি ছাত্র

রাবি শিক্ষার্থী শাহীনুর রহমান

হত্যা মামলার এক আসামির নামের সাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্র শাহীনুর রহমানের নামের মিল থাকায় পুলিশ ভুল করে তাকে ধরে নিয়ে আদালতে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ মামলায় দীর্ঘদিন যাবৎ জেলখাটছেন তিনি। তবে বাদীপক্ষ শাহীন আহাম্মেদ নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল।

মামলার প্রকৃত আসামি শাহীন আহাম্মেদের বাবার নাম নাসির। তাঁর বাড়ি নগরের শিরোইল কলোনির পশ্চিমপাড়ায়। গ্রেপ্তার শাহীনুর রহমানের বাবার নাম নূর মোহাম্মদ সরদার। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার। তাঁদের বাড়ি রাজশাহী নগরের শিরোইল কলোনি এলাকায়।

গত ১৩ নভেম্বর পশ্চিম রেলের সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে সানোয়ার হোসেন ওরফে রাসেলের ভাই আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন রাজার ওপর হামলা হয়। তাঁকে বাঁচাতে গেলে ছুরির আঘাতে জখম হন সানোয়ার হোসেন। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় সানোয়ারের ভাই মনোয়ার হোসেন ওরফে রনি বাদী হয়ে নগরের চন্দ্রিমা থানায় একটি মামলা করেন।

গ্রেপ্তার শাহীনুর রহমানের ছোট বোন নাজমুন নাহার অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন তাঁর ভাই চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছিলেন। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে পাড়ার মোড়ে সেলুনে শেভ করতে যান। সেখান থেকে শাহীন নাম শুনেই পুলিশ তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। রাত ১২টার দিকে মামলার বাদী থানায় গিয়ে বলেন, এই ছেলে (শাহীনুর রহমান) ঘটনার সময় ছিলেন না। এই শাহীনের বিরুদ্ধে তাঁরা অভিযোগ করেননি। তখন পুলিশ বলেছিল, ভুল করে ধরা হয়েছে। পরে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে পুলিশ তাঁর ভাইকে ছেড়ে দেয়নি; বরং মামলার এজাহারের ১০ নম্বরে তাঁর ভাইয়ের নাম মো. শাহীন লিখে বাবার নাম নূর মোহাম্মদ সরদার লিখেছে। আদালতের মাধ্যমে তাঁকে ছাড়িয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

নাজমুন নাহার বলেন, তাঁর ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করছেন। তাঁর পরীক্ষার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। তাঁকে ৪ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম দফায় এবং ৭ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষা ও ‘ইন্টার্নশিপ’ শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে ২০ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

নিহত সানোয়ার হোসেনের বড় ভাই আনোয়ার হোসেন ওরফে রাজা গত ১১ ডিসেম্বর ইসলাম হোসেন খানের একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন, যাতে শাহীন আহাম্মেদের ছবি দিয়ে লেখা আছে, ‘যুবলীগ নেতা সানোয়ার হত্যার আসামি শাহীন আহাম্মেদ। তাঁকে দেখামাত্র পুলিশে ধরিয়ে দিন’।

মামলার বাদী মনোয়ার হোসেন ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘মামলার মূল আসামি যাঁরা, তাঁরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের পুলিশ ধরছে না। আপনাদের মূল আসামির চেয়ে ভুল আসামি নিয়েই মাথাব্যথা বেশি। আপনারা লিখতে পারেন না কেন প্রধান আসামিদের ধরা হচ্ছে না।’

মামলায় শাহীনুর রহমানের আইনজীবী মোকলেসুর রহমান বলেন, আদালতকে বিষয়টি বরাবরই বলা হচ্ছে। কিন্তু আদালতের বক্তব্য হচ্ছে পুলিশের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত স্বপ্রণোদিত হয়ে এই মুহূর্তে আদালতের কিছু করার সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুম মুনির বলেন, মামলার এজাহার করার সময় যে ওসি ছিলেন ও যে তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন, তাঁরা দুজনই বদলি হয়ে গেছেন। এখন তাঁরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন।